সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বিজিবি টহল বৃদ্ধি
প্রতি বছর ঈদ-উল-আযহা আসতেই সীমান্ত পার হয়ে অবৈধ্যভাবে ভারতে যান বাংলাদেশী গরু ব্যবসায়ী, মাদক ও অস্ত্র কারবারিরা। আর এ কারণে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে হতাহতের ঘটনা ঘটে। চলতি বছরে নওগাঁ সীমান্তের ভারতের অভ্যন্তরে বিএসএফের গুলিতে চারজন মারা যান। এরপর সীমান্তরক্ষী বাহিনী নড়েচড়ে বসে বলে জানা গেছে বিজিবি সূত্রে।
বিজিবি’র তৎপরতার পরও সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় ৩২৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার হচ্ছে। রবিবার ধামইরহাট সীমান্তে টুটিকাটা এলাকায় খর বোঝায় ভটভটি তল্লাশী করে ১৮৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে কাউকে আটক করা সম্ভব না হলেও ভটভটিটি জব্দ করা হয়েছে। অপরদিকে ওই দিন দুপুরে পাগলদেওয়ান বিওপির নায়েব সুবেদার ইদ্রিস আলীর নেতৃত্বে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিজিবি সদস্যরা কমরপুর গ্রামে অভিযান পরিচালনা করে একটি ঝোপে বস্তায় রাখা পরিত্যক্ত অবস্থায় ৩৫ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হয়।
এদিকে মহাদেবপুরে ৯৯ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারসহ ফেরদৌস আলী ও অমিত মহন্ত নামে মাদককারবারিকে আটক করে পুলিশ। সীমান্তবাসিন্দা ও সচেতন মহল মনে করছেন, সীমান্ত দিয়ে অবৈধ্যভাবে ভারত থেকে অল্প সংখ্যক গরু ও মাদক নিয়ে আসছে। বিজিবিও মনে করছে সীমান্তে।
বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি-১৬ (নওগাঁ) ব্যাটলিয়েনের আওয়াতায় পোরশা ও সাপাহারের কিছু অংশ নিয়ে সাড়ে ৬১ কিলোমিটার ও বিজিবি-১৪ (পতœীতলা) ব্যাটলিয়েনের আওয়াতায় সাপাহার, পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা নিয়ে ৬৩ কিলোমিটার ভারতীয় সীমান্ত এলাকা রয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে নেই কাঁটা তার, রাস্তা। এরপরও কাদাপানি ভেঙ্গে বিজিবি তাদের দায়িত্ব পালন করে চলেছেন।
স্থানীয় ও বিজিবি সূত্রে জানা গেছে, গত ছয় মাসে নওগাঁ সীমান্তে ভারতের অভ্যন্তরে বাংলাদেশেী গরু ব্যবসায়ী অবৈধ্যভাবে গরু আনতে গিয়ে ভারতীয় বিএসএফের গুলিতে ভারতের অভ্যন্তরে ২ জন নিহত হন। আর গুলিবিদ্ধ অবস্থায় ২ জন বাংলাদেশে এসে মারা যান। এরপর সীমান্তরক্ষী বাহিনী নড়েচড়ে বসে। আসন্ন ঈদ-উল-আযহার আগে থেকে বিজিবির পক্ষ থেকে সীমান্তে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন, টহল বৃদ্ধি করার পাশাপাশি স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের সাথে মত বিনিময় করেছে।
ধামইরহাট উপজেলার সীমান্তবর্তী খড়মপুর গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ ও আবুল কালাম জানান, বিজিবির টহল ব্যবস্থা জোরদার করায় চোরাকারবারিরা প্রায় নিস্ক্রিয় হয়ে পড়েছে।
সাপাহার উপজেলার সীমান্তে বামনপাড়া গ্রামের সোফাচ্ছের হোসেন সাদ্দাম, বাবুল হোসেনসহ অন্য বসবাসরতরা জানালেন, সীমান্তে চোরাকারবারিরা কোন অপরাধ সংঘটিত করছে এমন তথ্য বিজিবি সদস্যদের জানালেও ঘটনাস্থালে রাস্তা না থাকায় বিজিবি সদস্যরা সময় মতো দ্রুত ঘটনাস্থালে যেতে পারেন না। আগে সীমান্তে চোরাচালানি তৎপর থাকলেও বর্তমানে বিজিবি সদস্যদের তৎপর থাকায় সীমান্তে চোরকারবারিদের দৌরাত্ম কমে গেছে। সীমান্তে রাস্তাঘাট নির্মাণ করার দাবি জানান।
বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল নওগাঁর সমন্বয়ক জয়নাল আবেদিন মুকুল জানান, বাংলাদেশে-ভারতের অহিংস্যনীতি থাকায় কেউ সীমান্ত পার হলেও তাকে হত্যা করা যাবে না। সীমান্ত পার হওয়ার বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার পাশাপাশি সীমান্তে রাস্তা তৈরী, কর্মহীনদের জন্যে শিল্পকারখান গড়ে তোলার দাবি জানান এই বাম নেতা।
বিজিবি-১৪ (পতœীতলা) ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল এসএম নাদিম আরেফিন সুমন পিএসসিজি জানান, ঈদ উল আযহা উপলক্ষে কিছু চোরাচালানী ভারত থেকে গরু ও মাদকদ্রব্য দেশে পাচারের চেষ্টা করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকার মাইকিংসহ বিজিবির রাত-দিন টহল দেওয়া হচ্ছে। রবিবার ধামইরহাট উপজেলা সীমান্তে চলন্ত ভটভটি ও পৃথক স্থান থেকে ২৪৪ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধার করা হলেও সেগুলো আগে বলে ধারণা করেন। তিনি আরো বলেন, ইত্যে মধ্যে বিজিবি-১৪ আওয়াতায় ভারতের গরু থাকার তথ্য পেয়ে অভিযান পরিচালনা করা হয়। সে সময় স্থানীয়রা গরু তাদের বলে দাবি করায় গরুগুলো জব্দ করা সম্ভব হয়নি। তবে গোয়েন্দা তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বিজিবি-১৬ (নওগাঁ) ব্যাটলিয়নের অধিনায়ক লে: কর্ণেল আরিফুল ইসলাম জানান, চলতি বছরে সীমান্তের ভারতের অভ্যন্তরে অবৈধ্যভাবে গরু চোরাকারবারিরা যাওয়ায় বিএসএফের গুলি চারজন মারা যান। সীমান্তে হত্যা ও চোরাকারবারি বন্ধে বর্তমানে টহল ব্যবস্থা এবং বিজিবির সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি করা হয়েছে। এ ছাড়াও সীমান্তের আতœসর্ম্পণ চোরাকারবারি ছাড়া অন্য চোরাকারবারিদের চলাচলের উপর গোয়েন্দ নজরদারি রাখা হয়েছে। যাতে তারা সীমান্তে কোন অপতৎপরতা চালাতে না পারে।
লে: কর্ণেল আরিফুল ইসলাম আরো জানান, সীমান্তে হত্যাকান্ড ও চোরাচালান বন্ধে বিএসএফ-বিজিবি’র পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে বিএসএফের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, বিএসএফ-বিজিবি’র এক সাথে সীমান্তে কাজ করলে হত্যাকান্ড ও চোরাচালান বন্ধ করা সম্ভব হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন