ফেরদৌস সিদ্দিকী, রাজশাহী : রাজশাহীতে কোনোভাবেই ঠেকানো যাচ্ছে না করোনাভাইরাসের সংক্রমণ। এক সপ্তাহ ধরে বিভাগে করোনা সংক্রমণে সবার ওপরে রাজশাহী জেলা। যদিও জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশন করোনা নিয়ন্ত্রণে আলাদাভাবে কাজ করছে। কিন্তু সেই কাজের প্রতিফলন নেই বাস্তবে।
সোমবার শুধু রাজশাহী জেলায় ১১৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। মারা গেছেন একজন। একই দিন বিভাগে করোনা সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২১৮ জনের। আর মৃত্যু হয়েছে তিনজনের।
রাজশাহী জেলায় এ পর্যন্ত দুই হাজার ৮৬৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে দুই হাজার ২২ জনই রাজশাহী সিটি করপোরেশন এলাকার। বাকি ৬৫৪ জন জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
রাজশাহীতে এ পর্যন্ত ২৩ জনের প্রাণ নিয়েছে করোনা। সংক্রমণের দিক দিয়ে বিভাগে করোনার হটস্পট বগুড়ার পরপরই রাজশাহী জেলার অবস্থান। করোনার রেড জোনে থাকলেও এ নিয়ে মাথাব্যথা নেই স্থানীয়দের। যে যার মতো বাইরে চলাফেরা করছেন। খোলা রয়েছে সব ধরনের হাট-বাজার ও বাণিজ্যকেন্দ্র। গণপরিবহণ চলছে স্বাভাবিক। রাজশাহীর বাইরে থেকেও যাওয়া-আসা করছেন লোকজন। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি মানার তাগিদ নেই কারও। এর ফলও মিলছে করোনা সংক্রমণের পরিসংখ্যানে।
রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. এনামুল হক বলেন, এক সপ্তাহ ধরে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে করোনা সংক্রমণের হার বেড়েছে। আমরা যেসব নমুনা সংগ্রহ করেছি তার প্রায় ৩০ শতাংশের করোনা ধরা পড়ছে।
এক সপ্তাহ আগেও এই হার ছিল ২০-২৫ শতাংশ। যদিও করোনায় জেলায় মৃত্যুহার এখনও এক শতাংশ। রাজশাহী নগরীতে সংক্রমণ ও মৃত্যু এমনকি সুস্থ হওয়ার হার উপজেলাগুলোর চেয়ে বেশি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলার নয় উপজেলার চেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি রাজশাহী নগর এলাকায়। করোনা নিয়ন্ত্রণে নগরীতে তৎপরতাও বেশি। কিন্তু সেই তৎপরতাও ভেস্তে যাচ্ছে জনগণের অসচেতনতায়। ফলে সংক্রমণ না কমে দিন দিন বেড়েই
চলেছে।
নগরজুড়ে করোনা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে সিটি করেপোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগ। এই পরিস্থিতিতে করণীয় জানতে যোগাযোগ করা হয় সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. এফএএম আঞ্জুমান আরা বেগমের সঙ্গে।
সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে তিনি বলেন, এখন মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি। পরে কথা বলব। কিন্তু পরে দফায় দফায় চেষ্টা করেও তার আর সাড়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে ১৯ জুলাই নগরীর করোনা পরিস্থিতি নিয়ে রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন। এতে সভাপতিত্ব করেন সভায় জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল।
ওই সভায় নাগরিকদের মাস্ক পরতে আরও বেশি উৎসাহিত করা, মার্কেট ও বাজার ব্যবস্থাপনা, কোরবানির পশুর হাটের ব্যবস্থাপনা, আগাম ও অনলাইনে পশু ক্রয়ে উৎসাহ প্রদানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহ প্রদানসহ বিভিন্ন বিষয়ে
আলোচনা হয়। কিন্তু সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও করোনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর উদ্যোগ চোখে পড়েনি।
রাজশাহীতে করোনার সার্বিক পরিস্থিতি জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক আবদুল জলিল বলেন, শুরু থেকে জনসাধারণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে সচেতন করে আসছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু মানুষজন সচেতন না হওয়ায় করোনা নিয়ন্ত্রণ কাজে আসছে না। ফলে এক সপ্তাহ ধরে সচেতনতার পাশাপাশি জরিমানাও করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা সকাল-বিকেল ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন। করোনা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আরও কঠোর হবে জেলা প্রশাসন।
সোমবার নগর ভবনে অনুষ্ঠিত এক সভায় রাজশাহীর সিটি মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের মধ্যে ঈদুল আজহা উদযাপিত হতে যাচ্ছে। এজন্য সংশ্লিষ্ট সবাইকে বাড়তি নজরদারি রাখতে হবে। মানুষকে মাস্ক পরা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে উৎসাহিত করতে হবে। কোরবানির পশু জবাই করার সময় এ কাজে নিয়োজিতদের মাস্ক পরা নিশ্চিত করতে হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন