মোঃ সাইফুল ইসলাম, বাগমারা, রাজশাহীঃ রাজশাহীর বাগমারায় গত এক সপ্তাহ ধরে কয়েক দফা ভারি বর্ষণ, বন্যার পানি বৃদ্ধি ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বাগমারার বিভিন্ন এলাকায় নতুন করে হাজার হাজার বিঘা জমির আমন-আউশ ধান, মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েক দিন আগে মান্দায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাগমারার বারানই ও ফর্কিন্নী নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। পানি বাড়তিতে ফসলি জমির ক্ষতির পরিমাণ বাড়ছে।
এদিকে উজানের পানির তোড়ে বাগমারা থানার সন্নিকটে সোনাবিলা পাউবো’র বাধেঁর স্লুইস গেটের পুরাতন ফলা ভেঙে ২টি বিলের ফসল হুমকির মুখে। শনিবার দিনভর এলাকার শত শত মানুষ ভাঙা গেটে বস্তা ফেলে পানি আটকাতে চেষ্টা করে ফল মিলেনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ পাউবো’র অবহেলা ও উদাসীনতায় কোটি টাকা ব্যয়ের স্লুইজ গেটের দুরবস্থায় তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে ভরে যায় উপজেলার সব নদী-নালা ও খাল-বিল। সেই সাথে কয়েক দিন আগে মান্দায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় বাগমারার বারানই ও ফর্কিন্নী নদীর পানি বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থায় বাগমারার ৫টি ইউনিয়নের হাজার হাজার বিঘা জমির আমন-আউশ ধান, মরিচ ও পানবরজ ক্ষেত তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ২ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় উপজেলার নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত অব্যাহত। এদিকে থানার নিকটে শনিবার সকাল হতে পাউবো’র বাধেঁর স্লুইস গেটের পুরাতন ফলা ভেঙে ২টি বিলে পানি ফসল হুমকির মুখে। শনিবার দিনভর এলাকার শত শত মানুষ ভাঙা গেটে বস্তা ফেলে পানি আটকাতে চেষ্টা করে ফল মিলেনি। এলাকাবাসীর অভিযোগ পাউবো’র অবহেলা ও উদাসীনতায় কোটি টাকা ব্যয়ের স্লুইজ গেটের দুরবস্থায় তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। বিলের ধারের বালানগর, মোহম্মাদপুর, বাগমারা, একডালা, শ্যামপুর, মাঝিগ্রাম, পোড়াকয়া গ্রামের অধিকাংশ লোকের বিলের ধারে দামি আবাদ পানবরজ রয়েছে। বিরের মধ্যে যে ভাবে পানি প্রবেশ করছে তাতে তারা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। বালানগর গ্রামের আলতাফ হোসেন, দুলাল উদ্দিন, মজিবর রহমান, জালাল উদ্দিন, আব্দুল মতিনসহ অনেকে জানান, স্লুইস গেটের মুখ দিয়ে প্রবল বেগে বন্যার পানি প্রবেশ করায় সোনা বিলা ও মোহম্মাদপুর-একডালা বিলের প্রায় দুই হাজার বিঘা জমির রোপা, আমন ও আউশ ধান, পাট, পটল, করলা এবং বেগুনসহ বিভিন্ন ফসল তলিয়ে যাবার উপক্রম হয়েছে। এতে প্রায় অর্ধ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হবার শঙ্কা রয়েছে। এছাড়া বিলের ধারের পুকুরের চাষকৃত মাছও ভেসে যাবে বলে জানান তারা। এতে এলাকার কৃষকরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হবে।
গণিপুর ইউনিয়নের বাগমারা গ্রামের স্কুলশিক্ষক মোজাম্মের হক, কৃষক সামসুল হক, একডালা গ্রামের হাসান আলী জানান, অবিরাম বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে যখন উপজেলার সব নদী-নালা ও খাল-বিল পানিতে ভরে যায় ঠিক সেই মুহূর্তে পুরাতন স্লুইস গেটের ভাঙা ফলা মুখ খুলে যায়। এতে ওই মুখ দিয়ে প্রবল বেগে পানি নামায় সোনাবিলাসহ মোহম্মাদপুর-একডালা বিলে বন্যার পানি প্রবেশ করছে। বালানগর গ্রামের আব্দুল মান্নান, সিদ্দুকুর রহমান, হেলাল উদ্দিনসহ অনেকে বলেন, একদিনে পানি প্রবেশ করে তাদেরসহ এলাকার বহু লোকের ধান ক্ষেত তলিয়ে গেছে। পানি বাড়তিতে বিলের ধারের অনেক ফসলের ক্ষতি হবে বলে তারা জানান। একইভাবে গ্রামের সাহেব আলী, ইসমাইল হোসেনসহ কয়েকজন বলেন, অনাকাঙ্খিত বন্যার পানি প্রবেশে তার পানবরজে পানি ছুঁইছুঁই। এতে পানবরজে পানি প্রবেশ করলে তার ব্যাপক ক্ষতি হবে বলে তারা শঙ্কা প্রকাশ করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন