নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: ঢাকা ফেরত নওগাঁয় মাহবুব আলম (৬২) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত এক ব্যক্তির মরদেহ দাফন করে বেকায়দায় পড়েছেন ৪ জন রোভার স্কাউট সদস্য। স্কাউট সদস্যরা হলেন, নওগাঁ শহরের মাষ্টার পাড়া মহল্লার ফরিদুল ইসলাম, নিরব রহমান, মারুফ হোসেন ও সোহাগ। শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টায় নওগাঁ কেন্দ্রীয় কবরস্থানে সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) ছাড়াই লাশ দাফন করে ছিলেন তারা। এর পর থেকে তাদের প্রতিবেশী ও স্বজনরা বাড়িতে ঢুকতে দিচ্ছে না। এলাকাবাসীর দাবী, সরকার কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দায়িত্ব অবহেলার কারনে এ ঘটনা ঘটেছে। তাদের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জানান তারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তারা এখনও বাড়ীতে আসতে পারে নাই।
স্কাউট সদস্য ফরিদ জানান, সকাল থেকে খবর পেয়ে মৃত ব্যক্তির বাড়ীতে গিয়ে সচেতন করি আমরা ৪ জন। দুপুরের পর ইসলামিক ফাউন্ডেশানের দুজন লোক আসে। তারা লাশের কাছে যাইতে ভীষন ভয় করছে। জীবানুমুক্ত করে আমাদেরকে বললে আমরা লাশ ঘর থেকে বাহির করে দিই। তারা গোসল শেষে কাফন পরিয়ে চলে যায়। এ্যাম্বলেন্স আসলে লাশটি গাড়ীতে উঠানোর কোন লোক ছিল না। তাই বাধ্য হয়ে আমরা সবাই মিলে গাড়ীতে উঠিয়ে দিই এবং গাড়ীর পিছনে পিছনে কবর স্থানে যাই। গাড়ী থেকে নামানো এবং জানাজা করা শেষে মৃতদেহ দাফনে ভয় পাচ্ছিলেন ইসলামী ফাউন্ডেশনের লোকজন। জানাজা শেষে কবরস্থানে মৃতদেহ রেখে তারা (ইফার লোকজন) বেশ খানিকটা দূরে দাড়িয়ে ছিলেন। এমনকি দাফনের সময়ও কাছে আসেনি তারা। পরে নিজ দ্বায়িত্বে তারা মরদেহ দাফনের কাজ করেছেন। দুর থেকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখছিল। এ অবস্থা দেখে মানবিক কারনে বাধ্য হয়ে মৃতদেহের দাফন কাজ করেন তারা। এসময় তাদের শরীরে পিপিই ছিল না শুধু মাস্ক ও হাতে গ্লোবস পরে লাশ দাফন করেছেন।
এদিকে পিপিই ছাড়াই মৃতদেহ দাফনের খবর মূহুর্তেই ছড়িয়ে পরে এলাকায়। বিকেলে দাফন শেষে স্কাউট সদস্যরা পরিবারে ফিরতে চাইলে পাড়ায় ঢুকতে বাধা দেয় এলাকাবাসী। এমনকি পরিবারের লোকজন বাড়িতে আসতে দেয় নাই। তারা কবর স্থানে সন্ধ্যা পর্যন্ত থেকে পরে সবাই মিলে পাড়ার একটি বাড়ীর একটি ঘরে রাত যাপন করছেন। জেলা দাফন কমিটির সাধারণ সম্পাদক ক্বারি মোয়াজ্জেম আলী ঘটনার দাফন কাজে গাফিলতির কথা সত্যতা স্বীকার করে জানান, দাফনের সময় ইফার দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত ৫ সদস্য উপস্থিত ছিলাম। জানাজার পর আমরা কেহ দাফন করি নাই। তবে পিপিই ছাড়া মরদেহ কবরে নামাতে দেওয়া ঠিক হয়নি বলেও স্বীকার করেন তিনি।
এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় কবরস্থান কমিটির সাধারন সম্পাদক কাজী জিয়াউল হক বাবলু জানান, ইসলামিক ফাউন্ডেশানের লোকজন তারা তাদের দায়িত্বে অবহেলা করেছেন। বিষয়টি আমাদেরকে বললেও আমরা দাফনে সহযোগিতা করে দাফন সম্পন্ন করতাম। বাচ্চা ছেলেদেরকে দিয়ে সুরক্ষা পোশাক ছাড়া এরকম একটি কাজ করা মোটেই ঠিক হয় নাই বলে জানান তিনি।
এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা মো. প্রশাসক হারুন অর রশিদ জানান, ঘটনা জানতে পেরে স্কাউট সদস্যদেরকে নিরাপদে একটি ঘরে রাখা হয়েছে। মৃত ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষার রেজাল্ট আসলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য দাফন কমিটিকে আরও সতর্ক হতে বলা হয়েছে বলে জানান তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন