এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ৫২ লাখ, জমা ৭ হাজার কোটি টাকা


এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে গ্রাহক ৫২ লাখ, জমা ৭ হাজার কোটি টাকা
দেশের সুবিধা বঞ্চিত প্রান্তিক পর্যায়ে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে চালু হয় এজেন্ট ব্যাংকিং। এ সেবার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠী সহজেই ব্যাংকে টাকা জমা ও উত্তোলন করতে পারছেন। প্রবাসীদের পাঠানো অর্থও সহজে পৌঁছে যাচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলে। ঋণও পাচ্ছেন অনেকে। এতে গ্রামগঞ্জে বাড়ছে ব্যাংকিং সেবা। দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে এজেন্ট ব্যাংকিং।

এমন অবস্থায় দেশে কার্যক্রম শুরুর মাত্র ৬ বছরেই এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গ্রাহক তৈরি হয়েছে ৫২ লাখেরও বেশি। এসব গ্রাহক এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের আওতায় জমা করেছেন ৭ হাজার কোটি টাকার বেশি আমানত। বাংলাদেশ ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিং বিষয়ে হালনাগাদ প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, বিশ্বের প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ব্রাজিলে। আর বাংলাদেশে এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু হয় ২০১৪ সালে। এর আগে ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর এজেন্ট ব্যাংকিং নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ব্যাংক এশিয়া পাইলট প্রকল্প হিসাবে মুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় প্রথম এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা চালু করে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ২৪টি বাণিজ্যিক ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছ থেকে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছে। এর মধ্যে ২১টি ব্যাংক কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যে ১৯টি বাণিজ্যিক ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে সেগুলো হলো- ডাচ্-বাংলা, ব্যাংক এশিয়া, আল-আরাফাহ্ ইসলামী, সোশ্যাল ইসলামী, মধুমতি, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, এনআরবি কমার্শিয়াল, স্ট্যান্ডার্ড, অগ্রণী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, মিডল্যান্ড, দি সিটি, ইসলামী ব্যাংক, প্রিমিয়ার, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল, এবি ব্যাংক, এনআরবি, ব্র্যাক ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক ও মাকেন্টাইল ব্যাংক।

২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে এজেন্ট ব্যাংকিং আউটলেটের মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংকের ৫২ লাখ ৬৮ হাজার ৪৯৬ জন গ্রাহক হিসাব খুলেছেন। এসব হিসাবে জমাকৃত অর্থের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫১৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা। বছরের ব্যবধানে গ্রহক বেড়েছে ১১৪.৪৩ শতাংশ এবং আমানত বেড়েছে ১৪১.৫২ শতাংশ। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর শেষে গ্রাহক ছিল ২৪ লাখ ৫৬ হাজার ৯৮২ জন এবং জমাকৃত অর্থের স্থিতি ছিল ৩ হাজার ১১২ কোটি ৪০ লাখ টাকা।

ডিসেম্বর শেষে এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৮৫৬টি এবং আউটলেট সংখ্যা ১১ হাজার ৩২০টি। এ সময় পর্যন্ত এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ঋণ বিতরণ হয়েছে ৪৪৬ কোটি টাকা। আলোচিত সময়ে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স এসেছে ১৫ হাজার ৫৩৪ কোটি ৩১ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, গ্রামীণ সুবিধা বঞ্চিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কাছে ব্যাংকিং সুবিধা পৌঁছে দিতে এজেন্ট ব্যাংকিং চালুর উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর ও ব্যয় সাশ্রয়ী এ সেবায় গ্রহক এজেন্ট আউটলেটে সহজেই তার বায়োমেট্রিক বা হাতের আঙুলের স্পর্শে হিসাব পরিচালনা করতে পারেন। ফলে কম খরচে সহজে ব্যাংকিং সেবা পাওয়ায় গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

ব্যাংকগুলোও এ সেবা প্রদানে আশানুরূপ আগ্রহ দেখাচ্ছে। সঠিকভাবে পরিচালনা করলে এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমের মাধ্যমে আগামীতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের প্রতিটি ঘরে ঘরে ব্যাংকিংসেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব হবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, ট্রেড লাইসেন্স রয়েছে এমন ব্যক্তি এজেন্টশিপ নিতে পারেন। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হয় ন্যূনতম এইচএসসি বা সমমান পাস। এজেন্ট ব্যাংকিং পরিচালনার জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের সঙ্গে প্রত্যেক এজেন্টের একটি চলতি হিসাব থাকতে হয়। এ সেবার মাধ্যমে ছোট অঙ্কের অর্থ জমা ও উত্তোলন করা যায়।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্স স্থানীয় মুদ্রায় বিতরণ, ছোট অঙ্কের ঋণ বিতরণ ও আদায় এবং এককালীন জমার কাজও করতে পারবেন। উপযোগ সেবা বিল পরিশোধের পাশাপাশি সরকারের অধীনে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির অর্থ প্রদান করতে পারছেন এজেন্টরা। এছাড়া নীতিমালা অনুযায়ী ব্যাংক হিসাব খোলা, ঋণ আবেদন, ডেবিট ও ক্রেডিট কার্ডের নথিপত্র সংগ্রহ করতে পারছেন এসব এজেন্ট।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে হিসাব খোলা, টাকা জমা ও উত্তোলন, টাকা স্থানান্তর (দেশের ভেতর), রেমিট্যান্স উত্তোলন, বিভিন্ন মেয়াদি আমানত প্রকল্প চালু, ইউটিলিটি সার্ভিসের বিল পরিশোধ, বিভিন্ন প্রকার ঋণ উত্তোলন ও পরিশোধ এবং সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় সরকারি সকল প্রকার ভর্তুকি গ্রহণ করা যায়।

তবে এজেন্টরা কোনো চেক বই বা ব্যাংক কার্ড ইস্যু করতে পারে না। এছাড়া এজেন্টরা বৈদেশিক বাণিজ্য সংক্রান্ত কোনো লেনদেনও করতে পারেন না। এজেন্টদের কাছ থেকে কোনো চেকও ভাঙানো যায় না। মোট লেনদেনের ওপর পাওয়া কমিশন থেকেই এজেন্টরা আয় করেন।
লেবেলসমূহ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget