একটি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন! ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

একটি হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন! ঘাতক স্বামী গ্রেফতার

আব্দুল মান্নান: গত ২৯ ডিসেম্বর নওগাঁ সদর উপজেলার কীর্ত্তিপুর এলাকার তেলিপুকুর ধানের মাঠের অগভীর নলকুপের পাশ থেকে অজ্ঞাত নারীর গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশের দেয়া তথ্য মতে, নওগাঁ জেলার মহাদেবপুর উপজেলার শামিম হোসেন ২০১৭ সালে বিয়ে করে  নাগেশ্বরি কুড়িগ্রাম এর মেয়ে হালিমা খাতুনকে। বিয়ের পর তাদের ঘরে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয় যার বয়স ১ বছর। কন্যা সন্তানের জন্মকে কেন্দ্র করে  তাদের মধ্যে দুরুত্ব তৈরি হয়।  তারা আলাদাভাবে বসবাস শুরু করে।  মেয়ে তার পিতার সাথে ঢাকায় বসবাস করে। শামিম দেড় মাস আগে আরো একটি বিয়ে করে। বিয়ের কথা হালিমার বাবা জানতে পেরে শামিমকে ফোনে তার মেয়েকে নিয়ে আসতে বলে, না হলে শামিম সহ তার বাবা মায়ের নামে মামলা করবে বলে ভয় দেখায়। শামিম উক্ত কথা শুনে হালিমাকে হত্যার ভয়ংকর পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী হালিমার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ স্থাপন করে শর্ত দেয় সে তার সাথে সংসার করবে তবে তাদের মেয়েকে হালিমা সাথে আনতে পারবেনা। শর্ত অনুযায়ী হালিমা লুকিয়ে শিশু সন্তানকে তার মায়ের কাছে রেখে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর শামিমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঢাকার মিরপুর আবাসিকে দেখা করে। শামিম হালিমাকে নিয়ে সকাল ৯টায় কল্যানপুর বাস টার্মিনাল হতে নওগাঁয় রওনা করে। বিকাল ৫টা নাগাদ নওগাঁ বাসস্ট্যান্ডে নেমে রিক্সা যোগে নওগাঁর বর্ষাইল বাজারে রওনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী সিগারেট কেনার কথা বলে পাহাড়পুর বাজারে নেমে একটি চাঁকু কিনে কোমরের বেল্টের ভিতর লুকিয়ে রাখে শামিম। কীর্ত্তিপুর বাজারে রাত ৭টার দিকে নেমে হালিমাকে নিয়ে বর্ষাইল বাজারের দিকে রওনা করে। রাত সাড়ে ৭টায় যখন চারদিকে অন্ধকার, শীতের রাত হওয়ার ফলে চারদিকে নিস্তদ্ধতা এই সময় কৌশলে হালিমাকে নিয়ে রাস্তা থেকে নেমে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে মাঠের মধ্যে নিয়ে যায়।

তখন রাত প্রায় ৮টা শামিম মাঠের মধ্যে কথা বলার সময় স্বামী-স্ত্রী রুপে আচরণ করে তাকে মাটিতে শোওয়ায় এবং পরিকল্পনা অনুযায়ী কোমড়ে লুকিয়ে রাখা চাকু (ছোরা) দ্বারা হালিমাকে জবাই করে হত্যা করে। লাশ যেন চেনা না যায় সেজন্য হালিমার মুখমন্ডল চাকু দিয়ে নির্মমভাবে  কেটে বিকৃত করে পালিয়ে যায় শামিম।
অজ্ঞাত লাশ পড়ে আছে মর্মে নওগাঁ সদর মডেল থানার পুলিশ সংবাদ পেয়ে ২৯ ডিসেম্বর সকালে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। শত শত মানুষ উপস্থিত হয়ে লাশ সনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়। মহিলা পুলিশ লাশের পড়নের পায়জামার ভিতর পকেট হতে একটি মোবাইল নাম্বার পায় যার সূত্র ধরে হালিমার পিতার সন্ধান পাওয়া যায়। হালিমার পিতা থানায় এসে হালিমার লাশ দেখে তার মেয়ে বলে সনাক্ত করে এজাহার দায়ের করলে নওগাঁ সদর মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয় এবং তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় পুলিশ পরিদর্শক অপারেশন মো. তাজমিলুর রহমান এর উপর।
তিনি তদন্ত কালে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে নিশ্চিত হন যে তার স্বামীই হালিমাকে হত্যা করেছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে নওগাঁর পুলিশ সুপার প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান মিয়ার দিক নির্দেশনায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম) রকিবুল আকতার এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) লিমন রায় এর সহায়তায় গত ৯ জানুয়ারী বৃহস্পতিবারে আসামী রিক্সা চালক শামিমকে ঢাকার কাফরুল থানাধীন বাইশটেক হতে গ্রেফতার করেন।
আটকের পরে আসামী শামিম হোসেন তার স্ত্রী হালিমাকে হত্যার বিবরন দিয়ে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget