নওগাঁয় মুখ থুবড়ে পরে আছে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স

নওগাঁর মুখ থুবড়ে পরে আছে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স

জনগণের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে সরকার দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদে কমিউনিটি ক্লিনিক চালু করেছে। স্বাস্থ্যসেবা আরও একধাপ এগিয়ে নিতে নওগাঁয় চালু করা হয়েছিল ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক ‘ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স’। এই অ্যাম্বুলেন্সের সুবিধা ভোগ করতো প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা। গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে সাইরেন বাজিয়ে ছুটে চলা সেই অ্যাম্বুলেন্সগুলো এখন অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিশ্ব ব্যাংকের অর্থ সহায়তায় দ্বিতীয় লোকাল গভার্ন্যান্স সাপোর্ট প্রজেক্ট (এলজিএসপি-২) থেকে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে জেলার ১১টি উপজেলার ৯৯টি ইউনিয়নে ভ্রাম্যমাণ অ্যাম্বুলেন্স ইজিবাইক (ব্যাটারি চালিত চার্জার) চালু করা হয়। ভ্রাম্যমাণ এই অ্যাম্বুলেন্স দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয়। অ্যাম্বুলেন্সের ছাদে ঘূর্ণায়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণের জন্য লাগানো হয় সাইরেন হর্ন। আর ভেতরে দুই সিটের গদির আসন ব্যবস্থা। সেখানে সাহায্যকারী ও প্রসূতি শুয়ে-বসে থাকার সুব্যবস্থা করে সৌন্দর্য দিয়ে অ্যাম্বুলেন্সের রুপ দেয়া হয়। ২৪ ঘণ্টা স্বাস্থ্যসেবায় নিয়োজিত অ্যাম্বুলেন্সের গায়ে জরুরি প্রয়োজনে ফোন নম্বর দেয়া হয়। ছাদে ঘূর্ণায়মান লাল আলোর বিচ্ছুরণ ঘটিয়ে সাইরেন বাজিয়ে গ্রামের কাঁচা-পাকা মেঠো পথে ছুটে চলত সেই অ্যাম্বুলেন্স। দিন-রাত যে কোনো সময় কল করে ঠিকানা জানিয়ে দিলেই বাড়ির আঙ্গিনায় গিয়ে হাজির হতো অ্যাম্বুলেন্সটি।

অ্যাম্বুলেন্স দেখভালের জন্য অনেকটা বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছিল সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যানদের। বেতনভুক্ত নির্দিষ্ট কোনো চালক না থাকায় কখনো গ্রাম পুলিশ আবার কখনো স্থানীয়দের দিয়ে তা পরিচালনা করা হতো। অ্যাম্বুলেন্সের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও কমিউনিটি ক্লিনিকে সহজেই রোগী আনা নেয়া করতে পারতো। কিন্তু সেই অ্যাম্বুলেন্স এখন মুখ থুবড়ে পড়ে আছে। ব্যাটারি না থাকায় দীর্ঘদিন থেকে খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে পড়ে থেকে মরিচা ধরে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।


তিলকপুর ইউনিয়নের অ্যাম্বুলেন্স চালক শাহিন বলেন, আমার আগে ওই অ্যাম্বুলেন্স ২/৩জন চালিয়েছিল। পরে আমি এক বছর চালানোর পর ব্যাটারি নষ্ট হয়ে যায়। ওই সময়ে প্রায় ২০০-২৫০ জন রোগীকে নওগাঁ সদর হাসপাতালে নিয়ে গেছি। রাত-দিন যেকোনো সময় কেউ ফোন দিলে ছুটে যেতাম। ভাড়া নিয়ে কোনো দরদাম করতাম না। যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী টাকা দিতো। তবে যে টাকা পাওয়া যেত তা দিয়ে চলা সম্ভব ছিল না। এছাড়া নিজেও কিছু টাকা খরচ করে মেরামত করেছিলাম। প্রায় ৯ মাস থেকে ব্যাটারির অভাবে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। এলাকাবাসী সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

সদর উপজেলার তিলকপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম বলেন, দুই লাখ টাকা খরচ করে অ্যাম্বুলেন্সটি তৈরি করা হয়েছিল। প্রথম দিকে ভালোই চলছিল। বর্তমানে অ্যাম্বুলেন্সটির চাহিদা কমে গেছে। ইঞ্জিনচালিত (ডিজেল বা গ্যাস) হলে ভালো চলতো এবং জনগণ উপকৃত হতো। ৪৪ হাজার টাকা দিয়ে একবার ব্যাটারি পরিবর্তন করা হয়েছিল। বছর খানেক পর নষ্ট হয়ে গেছে। এখন মরিচা ধরছে। ইউনিয়নে কোনো ফান্ড না থাকায় ব্যাটারি পরির্বতন করা সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়াও অ্যাম্বুলেন্সটি ভাড়া দেয়ার কোনো সুযোগ নাই। রোগী ছাড়া কেউ উঠতেও চায় না। যিনি শ্রম দেবেন তিনি যদি কোনো রোগী না পান তাহলে তো তার পেট চলবে না।

বদলগাছী উপজেলার আধাইপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন চৌধুরী বলেন, অ্যাম্বুলেন্সটি দিয়ে তেমন সুফল নিয়ে আসতে পারিনি। রোগীরা চায় দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা। আর এটা ব্যাটারির সাহায্যে চলে ধীর গতিতে। এছাড়া চালক সংকট। ৩৫ হাজার টাকা দিয়ে একবার মেরামত করা হয়েছিল। বছরখানেক চলার পর আবারও নষ্ট। গত ৮ মাস থেকে গাড়িটি পড়ে আছে।

নওগাঁ স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক গোলাম মো. শাহনেওয়াজ বলেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে দূরবর্তী বা প্রত্যন্ত এলাকার মানুষদের হাসপাতালে আনা নেয়ার সুবিধার জন্য এমন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। একটি ভালো উদ্যোগ ছিল। যা ইউপি চেয়ারম্যানদের সম্পদ এবং দেখভাল তাদেরকেই করতে হবে।

তিনি বলেন, সামনে একটা মিটিং আছে। যেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসাররা আসবেন। সেখানে ইউনিয়ন পর্যায়ের অ্যাম্বুলেন্সের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তারপরও আমরা নতুন করে উদ্যোগ গ্রহণ করার চেষ্টা করব।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget