নওগাঁর রাণীনগরে মাটি কাটার মহোৎসব ৩ ফসলী কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুরে

নওগাঁর রাণীনগরে মাটি কাটার মহোৎসব ৩ ফসলী কৃষি জমি পরিনত হচ্ছে পুকুরে

রিফাত হোসাইন সবুজ: নওগাঁর রাণীনগরে দিনের পর দিন ৩ ফসলী কৃষি জমিগুলো পরিণত হচ্ছে পুকুরে। এতে করে উপজেলায় আশঙ্কাজনক হারে কমছে কৃষি জমি। এক শ্রেণীর পুকুর ব্যবসায়ীরা কৃষকদের জমিতে ফসল চাষের বদলে বড় পুকুরের মালিক করে দেওয়ার লোভনী অফার দিয়ে দীর্ঘ সময়ের লিজ প্রক্রিয়ায় চালু করেছে কৃষি জমিতে পুকুর তৈরির পায়তারা। উপজেলার মিরাট ইউনিয়নের অধিকাংশ কৃষি জমিতে মেশিন দিয়ে ৮ফুট গভীর করে জমির চার দিকে বাঁধ দিয়ে পুকুর খননের মহোৎসব চলছে।

রাত-দিন বিরতিহীন ভাবে পুকুর খনন করে সেই মাটি আবার রাণীনগর, আত্রাই উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদিঘী উপজেলার সান্তাহারের বিভিন্ন ইট ভাটাতে মাটি সরবারহ করা হচ্ছে। কৃষকরা না বুঝে একদিকে হারাচ্ছে তাদের ফসলী জমি অন্যদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হচ্ছেন এক শ্রেণীর প্রভাবশালী পুকুর ব্যবসায়ী মহল। রাজশাহী, নাটোর, পাবনা এমনকি রাজধানী ঢাকা শহর থেকে এসে স্থানীয় কতিপয় ব্যক্তিদের সহযোগিতায় কৃষি জমিতে পুকুর খননের এই উৎসব চলছে। ব্যক্তি মালিকানা জমির পাশাপাশি সরকারের ১নং খতিয়ানভূক্ত জমিও এই পুকুর দস্যুদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ প্রশাসনের উদাসীনতা আর অবহেলার কারণে এই পুকুর খননের প্রবণতা দিন দিন আরো দ্বিগুন হচ্ছে।

জানা গেছে, উপজেলার ৮টি ইউনিয়নে নদী-নালা খাল-বিল বাদে প্রায় সাড়ে ২১হাজার হেক্টর ফসলী জমি রয়েছে। শ্রেণী ভেদে প্রায় সকল জমিতেই সারা বছর কোন না কোন ধরণের ফসল হয়। কৃষি উপকরণের মূল্য বৃদ্ধি এবং উৎপাদিত ধানের যথাযথ মূল্য না পাওয়ায় প্রতি বিঘা জমি ১২ হাজার টাকার বিনিময়ে ৫থেকে ১০ বছর মেয়াদের চুক্তিনামা করে ফসলী জমিতে পুকুর তৈরি করা হচ্ছে। জমির সেই মাটি প্রতি গাড়ি (ট্রাক্টর) সাতশত টাকায় বিভিন্ন ইট ভাটায় বিক্রয় করছে পুকুর ব্যবসায়ীরা। ভূমি আইনের নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে আবাদী কৃষি জমিতে অবাদে পুকুর খনন করায় দিনদিন কমে যাচ্ছে ফসলী জমি অন্য দিকে পাশের জমির কৃষকরা বিভিন্ন সমস্যার কারণে ধান রোপনে বাধগ্রস্ত হচ্ছেন। ফলে বাধ্য হয়েই কেউ চলে যাচ্ছেন পুকুর দস্যুদের কাছে আবার কেউ জমি চাষ না করে ফেলে রাখছেন। চলতি মৌসুমে প্রায় ৬শত হেক্টর জমিতে বোরো চাষ কম হওয়ার আশংকা করছে কৃষি বিভাগ। উপজেলার বেশ কয়েকটি ইউনিয়নে পুকুর খননের প্রবনতা লক্ষ্য করা গেলেও বিশেষ করে মিরাট ইউপি’র আয়াপুর ও আতাইকুলা মৌজার ১নম্বর ও ২ নম্বর সুইচ গেট নামক স্থানে পুকুর খননের প্রবনতা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। ইতিমধ্যেই শুধুমাত্র মিরাট ইউনিয়নেই প্রায় ৫০টিরও বেশি পুকুর খনন করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, কৃষি জমিতে স্কেবেটার মেশিন দিয়ে মাটি কেটে পুকুর খননের কারণে পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা বন্ধ হওয়ার আশংকায় মিরাট ইউনিয়নের আতাইকুলা মৌজার বেশকিছু জমিতে চলতি মৌসুমে বোরো ধান না হওয়ার আশংকা রয়েছে। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে আসছি পুকুর খনন থেকে বিরত থাকার জন্য। এছাড়াও কৃষকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করাসহ দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আল মামুন বলেন, বিষয়টি সম্প্রতি জেনেছি। এদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget