নওগাঁর মান্দায় ইউপি ভবনে শতাধিক মৌচাক

নওগাঁর মান্দায় ইউপি ভবনে শতাধিক মৌচাক

নিজস্ব ডেস্ক: ‘মৌমাছি, মৌমাছি কোথা যাও নাচি নাচি দাঁড়াও না একবার ভাই। ওই ফুল ফোটে বনে যাই মধু আহরণে দাঁড়াবার সময় তো নাই...’ কবিতাটি এখন বইয়ের পাতায় সীমাবদ্ধ। গত কয়েক বছর আগেও যেখানে মৌসুমে চারদিকে মৌমাছির ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনা যেত, সময়ের বিবর্তনে প্রকৃতিতে গাছপালা কমে যাওয়ায় মৌমাছিরা আর বাসা বাঁধতে পারে না।

গাছপালা কমে যাওয়ায় মৌমাছিরা মধু মৌসুমে উঁচু কোনো ভবনের কার্নিশে বাসা বাঁধছে। আবার মৌ চাষিরা মৌ বাক্সের মাধ্যমে কৃত্রিমভাবে মধু সংগ্রহ করছে। তবে মৌমাছি প্রকৃতিতে মৌচাক বাঁধতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তেমনি জেলার মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কার্নিশে এ বছর প্রায় শতাধিক মৌচাক করেছে মৌমাছি।

গত তিন বছর ধরে শীতকালে ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের চারপাশের কার্নিশে প্রাকৃতিকভাবে শীত মৌসুমে মৌমাছি মৌচাক বানিয়ে আসছেন চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন। মৌচাক থেকে মধু সংগ্রহ করে তিনি তা বিক্রি করে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজে এবং শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেছেন বলে জানা গেছে।

শীতকাল সরিষা চাষের মৌসুম। অক্টোবর-নভেম্বরে সরিষা জমিতে বপন করা হয়। প্রায় একমাস সময়ের মধ্যে গাছে ফুল আসা শুরু হয়। সরিষা ফুল থেকে সহজেই মৌমাছি মধু সংগ্রহ করতে পারে। গাছে প্রায় তিন মাস ফুল থাকে। গাছে ফুল থাকা পর্যন্ত মৌমাছি মধু আহরণ করে থাকে। ইউনিয়ন পরিষদের পাশেই রয়েছে ফসলের ক্ষেত। প্রায় দুই কিলোমিটার বিস্তর্ণ এলাকাজুড়ে রয়েছে সরিষার সমারোহ। এসব ক্ষেতে চাষিরা এ মৌসুমে সরিষার চাষ করে থাকেন।

আশপাশে কোনো গাছের বাগান বা বড় গাছ না থাকায় ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কার্নিশে নিরাপদে মৌমাছিরা মৌচাক বেঁধেছে। এ পরিষদ ভবনের চারপাশের কার্নিশে প্রায় শতাধিক মৌচাক লাগিয়েছে। হঠাৎ করে কেউ দেখলে মনে করতে পারেন, এটা ইউনিয়ন পরিষদ না, যেন মৌমাছির বাড়ি। এসব মৌমাছি সব সময় উড়ে বেড়ালেও এখন পর্যন্ত কাউকে হুল ফোটায়নি। ইউনিয়ন পরিষদে সেবা নিতে আসা বা সেবা প্রত্যাশীদের আগ্রহ সহকারে মৌচাকগুলো দেখছেন।


স্থানীয় হারুন-অর-রশীদ, হাসান আলী ও আলম বলেন, গত কয়েক বছর থেকে মৌমাছি নিজ থেকে এসে ভবনের কার্নিশে মৌচাক বাঁধে। আবার সরিষার আবাদ শেষ হয়ে গেলে তারা চলে যায়। এবার ইউপি চেয়ারম্যানের উদ্যোগ নিয়ে মৌচাক থেকে আহরিত মধু বিক্রি করে বিভিন্ন এলাকার অসহায় ও দরিদ্র শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করছেন।

ভারশোঁ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান সুমন বলেন, গত ৩ বছর ধরে অগ্রহায়ণ মাসে মৌমাছির দল ইউনিয়ন পরিষদের ভবনের কার্নিশে বাসা বাঁধে। আর আষাঢ় মাসের দিকে চলে যায়। এটা আল্লাহর অশেষ নিয়ামত। আগে কখনও মৌচাক বাসা বেঁধেছে কি-না তা আমার জানা নেই। সরিষা ক্ষেতের পাশে মৌ বাক্সের মাধ্যমে ভ্রাম্যমাণ মৌচাষিরা কৃত্রিমভাবে যে মধু সংগ্রহ করছেন, তার থেকে এ মধুর চাহিদা রয়েছে ব্যাপক। প্রতি কেজি মধু ৩০০-৪০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার টাকার মতো মধু বিক্রি করা হয়েছে। মধু বিক্রির টাকা থেকে ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজ এবং শীতার্থদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ করা হচ্ছে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget