ইমাম বিমান, ঝালকাঠি : ঝালকাঠি
সদর হাসপাতালে জরুরী অবস্থার সংবাদ পেয়েও দুঘন্টা পর সিভিল সার্জন ও আরএমও
হাসপাতালে আসায় ঝালকাঠি নাগরিক ফোরামের ক্ষোভ প্রকাশ।
এ
বিষয় নাগরিক সমস্যা সমাধানে প্রতিষ্ঠিত ঝালকাঠি নাগরিক ফোরাম এর সাধারন
সম্পাদক সাংবাদিক আহমেদ আবু জাফরের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, গত ১৯
জানুয়ারী জেলার প্রতাপ গ্রামে এক বিয়ে বাড়ির বৌভাত অনুষ্ঠানের খাবার খেয়ে
অসুস্থ হয়ে বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৫টার সময় থেকে একে একে রোগী আসতে থাকে।
উক্ত সংবাদের ভিত্তিতে ঐ দিন সন্ধায় আমি সহ নাগরিক ফোরামের নেতৃবৃন্দ
হাসপাতালে ছুটে যাই। আমরা হাসপাতালে যাওয়ার পর হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডে
গিয়ে দেখতে পাই কতর্ব্যরত নার্সের সংখ্যা একজন হঠাৎ করে রোগীর চাপ বেশি
হওয়ায় এক-দুই জন নার্সের পক্ষে সামাল দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। অপরদিকে একসাথে
এতো রোগী হওয়ায় নার্সদের দ্রুত সেবা প্রদানে বিঘ্ন ঘটায় কতিপয় রোগী বেশি
অসুস্থ হওয়ায় রোগীর স্বজনরা দিশেহারা হয়ে কান্নাকাটি শুরু করলে তাৎক্ষনাৎ
আমরা তাদেরকে ধর্য্যধরতে অনুরোধ জানাই। হাসপাতালে অবস্থান কালে আমাদের পক্ষ
থেকে ঝালকাঠি সিভিল সার্জন ও হাসপাতালের আরএমও আবুয়াল হাসানকে মুঠো ফোনে
বিষয়টি জানাই এবং দ্রুত হাসপাতালে এসে রোগীদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য
বিনীত অনুরোধ করি। আমাদের কথায় তারা হাসপাতালে আসার কথা বললেও একঘন্টা পরও
তাদের কোন দেখা পাওয়া যায়নি। হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অাসতে
দেরি করায় একটি শিশুর অবস্থা আসংঙ্কাজনক হওয়ায় কর্তব্যরত চিকিৎসক উন্নত
চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। বিষয়টি ঝালকাঠির
জনবান্ধব জেলা প্রশাসক মো. জোহর আলী মহাদ্বয়ের দৃষ্টিতে আসলে তিনি দ্রুত
হাসপাতালে ছুটে আসেন এবং তিনি হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরে পরিদর্শন
করেন। জেলা প্রশাসক হাসপাতাল পরিদর্শনের সময় ডায়রিয়া ওয়ার্ডে কর্তব্যরত
একজন নার্সকে জিজ্ঞাসা করেন এই ওয়ার্ডে এখন কতজন নার্স আছেন ? এ সময় নার্স
জানায় তিনি একাই ওয়ার্ডের দায়িত্বে আছেন। সাংবাদিক আবু জাফর দু:খ প্রকাশ
করে বলেন, গত রবিবার বৌভাত অনুষ্ঠানের খাবার খাওয়াকে কেন্দ্রকরে বিকেল
থেকেই হাসপাতালে রোগী ভর্তি হতে শুরু করে। আমাদের পক্ষ থেকে হাসপাতালর
দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মকর্তা সিভিল সার্জন ও আরএমও কে জানানো হলেও তারা ঘটনার
২ঘন্টা পর হাসপাতালে উপস্থিত হন।
অপরদিকে
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে আরএমও আবুয়াল হাসানের কাছে মুঠোফোনে জানতে চাওয়া হলে
তিনি জানান, আসলে আমি এখানে রেগুলার আরএমও না আমি হয়েছি মেডিসিন
কলসালটেন্ট আরএমও চলে যাওয়ার কারনে আমাকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেয়া হয়েছে।
আমার বাসা বরিশালে তাই আসতে একটু দেরি হয়েছে। আমাদের এখানে সন্ধ্যা ৭টায়
রোগী আসতে শুরু করে তারপর ফোনের মাধ্যমে হাসপাতালে যোগাযোগ করে আমরা
চিকিৎসা সেবা দিয়েছি এবং রাত ৮ মধ্যে হাসপাতালে পৌছালেও রোগীদের কোন
সমস্যা হয়নি।
উল্লেখ্য গত ১৯ জানুয়ারী জেলার
প্রতাপ গ্রামের প্রয়াত আজাহার আলী হাওলাদারের ছেলে নজরুল ইসলামের সাথে
পার্শবর্তী গ্রাম ভৌরবপাশা গ্রামের মোফাজ্জেল হোসেনের মেয়ে ছাবিনা আক্তারের
সাথে বিয়ে হয়। তাদের বিয়েকে কেন্দ্র করে নজরুলের বাড়ীতে বৌভাতের আয়োজন করা
হয়। ঐ দিন আয়োজিত বৌভাত অনুষ্ঠানের কাবার খেয়ে উভয় পক্ষের আমন্ত্রিত
অতিথিরা বিকেল থেকেই অসুস্থ হয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল সহ নলছিটি উপজেলা
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সহ বরিশালের শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হয়। ঝালকাঠি সদর
হাসপাতালটি ঐ গ্রাম থেকে নিকটবর্তি হওয়ায় অধিকাংশ রোগী ঝালকাঠি সদর
হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ছুটে আসেন।
এত রোগী একসাথে আসার কারন
হিসেবে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক সিয়াম
আহসানের কাছ থেকে জানতে চাওয়া হলে তিনি জানান, খাদ্যের বিষক্রিয়া থেকে এরা
সবাই অসুস্থ হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে। তবে শিশু এবং
বৃদ্ধরাও এ খাবার খাওয়ায় তারা বেশি অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাদের অবস্থা
পর্যাবেক্ষন করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। হাসপাতালে অবস্থানরত অসুস্থ
রোগী ও তাদের স্বজনদের মাধ্যমে জানাযায়, রোববার প্রতাপ গ্রামে নজরুলদের
বাড়িতে বৌভাত অনুষ্ঠান ছিলো। আর ঐ অনুষ্ঠানে উভয় পক্ষের আত্মীয় স্বজন ও
এলাকার তিন শত লোক অনুষ্ঠানের আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে অংশ নেয় এবং বৌভাতের
খাবার খায়। খাবার খাওয়া শেষে যে যার প্রয়োজনে নিজ নিজ বাড়িতে যায়। কিন্তু
খাবার খাওয়ার ঘন্টা খানিকপর থেকেই বিয়ে বাড়ি সহ দাওয়াত খেয়ে চলে যাওয়া আশে
পাশের বাড়ি থেকে একে একে বমি ও পেট ব্যথায় অসুস্থ হয়ে ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল
সহ নলছিটি, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে প্রায় দুইশতাধিক অতিথি ভর্তি হয়ে
হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছে।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে
এক ঘন্টার মধ্যে এতো রোগী ভর্তি হওয়ার সংবাদে ঝালকাঠি জেলা প্রশাসক মো.
জোহর আলী সহ পর্যায়ক্রমে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও সদর সার্কেল এম এম মাহমুদ
হাসান, জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এ্যাডভোকেট খান সাইফুল্লাহ পনির,
ঝালকাঠি সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খলিলুর রহমান, হাসপাতালে
ছুটে যান এবং রোগীদের খোঁজ খবর নেন ।এছাড়াও ঝালকাঠি জেলার নাগরিক ফোরামের
সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আবু জাফর, ঝালকাঠির মিডিয়া ফোরামের সভাপতি মোঃ মনির
হোসেন, দেশ বাংলা ফাউন্ডেশন এর চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান হাসপাতালে ছুটে
যান।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন