মো.হারুন আল রশীদ: নওগাঁর ধামইরহাটে চলতি আমন মৌসুমে বিনা-১৭ ধান চাষে ব্যাপক সফলতা পেয়েছে কৃষক। ধানের রোগবালাই না থাকায় এবং আগাম ধান পাকায় কৃষকরা সহজে এ ধান ঘরে তুলতে পারছে। আগাম ধান কাটার ফলে ওই জমিতে রবি শস্য চাষের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। ফলে একই জমিতে বছরে তিন ফসল চাষ করা সম্ভব হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ থেকে জানা গেছে, গত ২০১৮ সালে ২০ হেক্টর এবং এ বছর ৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকগণ বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ করেছে। এ ধান অনেকটা জিরাশাইলের মত সরু। ভাত খেতে খুব সুশ্বাদু। উচ্চ ফলনশীল ও খরা সহিঞ্চু এ জাতের ধান বরেন্দ্র অঞ্চলের জন্য বিশেষ উপযোগি। বিশেষ করে এ ধান চাষ করতে ২০-৩০ ভাগ সার এবং ৩০ ভাগ পানি খরচ কম হয়। এছাড়া ধান গাছ খাটো হয় এবং খুব শক্ত হওয়ার কারণে ঝড়ে ধানগাছ হেলে পড়ে না। অন্যান্য ধানের তুলনায় এজাতের ধান গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। সবচেয়ে বড় গুন এ জাতের ধান আগাম পাকতে থাকে। মাত্র ১২০ দিনের মধ্যে ধান কাটা যায়। আশ্বিন মাসের শেষে ধান পাকতে থাকে। এ সময় পর্যাপ্ত কৃষি শ্রমিক পাওয়া যায়। ফলে কৃষক অল্প খরচে ধান কেটে ঘরে তুলতে পারে। ধান গাছের খড় গো খাদ্য হিসেবে মাঠ থেকে বিক্রি হয়। ধান কাটার পর কৃষক ওই জমিতে হালচাষ করে রবি শস্য বিশেষ করে আলু,সরিষা ও গম চাষের জন্য পর্যাপ্ত সময় পায়। এক কথায় একই জমিতে বছরে তিন ফসল পেতে কৃষকগণ বর্তমানে বিনা-১৭ ধান চাষে ঝুঁকে পড়ছে। পশ্চিম শালুককুঁড়ি গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ বলেন,তিনিও ২ একর জমিতে বিনা-১৭ জাতের ধান চাষ করেছেন। এ ধানের রোগ বালাই কম। তাছাড়া সার ও পানি খরচ অনেক কম। কম সময়ে ধান ঘরে তোলা যায়। একর প্রতি ৬৫-৭০ মণ হারে ফলন হবে বলে তিনি আশাবাদ করেন। ধান কাটার পর তিনি ওই জমিতে সরিষা চাষ করবেন।
এব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.সেলিম রেজা বলেন, বিনা-১৭ জাতের ধান একর প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ মণ হারে ফলন হয়। এ এলাকার কৃষকগণ অধিকাংশ জমিতে ভারতের স্বর্ণা-৫, রঞ্জিত এবং মামুন স্বর্ণা ধান চাষ করে। এসব ধানের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম। বিনা-১৭ জাতের ধানের রোগ বালাই নেই বললেই চলে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। তাছাড়া মাত্র ১শত ১২ দিন থেকে ১২০ দিনের মধ্যে ধান কাটা সম্ভব। সার ও সেচে প্রায় ৩০ ভাগ কম খরচ হয়। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে উঠোন বৈঠক, হাট-বাজার সভা এবং গ্রুপ ভিত্তিক কৃষক সমাবেশ, গ্রাম কৃষক বন্ধু প্রশিক্ষণ, প্রণোদনা, লিফলেট বিতরণ, কৃষি প্রদর্শনীসহ বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে কৃষকদের এ ধান চাষে উৎসাহিত করা হয়েছে। ফলে এলাকার কৃষকগণ এ ধানে চাষে বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন