প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পতি ভারত সফরে বিভিন্ন চুক্তি নিয়ে সমালোচনা চলছে দেশজুড়ে। বহুল আলোচিত এ সফর শেষে ভারতের বেশ কয়েকটি প্রথম সারির সংবাদ মাধ্যমেও বিতর্কিত ‘এনআরসি’ বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর প্রশ্নে ভারতকে আরও স্বচ্ছতা দেখানোর আহ্বান জানিয়েছে।
এনআরসি নিয়ে ভারত একদিকে সরকার যদি দুই রকম কথা বলে এবং অন্যদিকে বাংলাদেশের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চায় -বিষয় দুটো একসঙ্গে সম্ভব নয় বলেও একাধিক সম্পাদকীয়তে সতর্ক করা হয়েছে।
পাশাপাশি, বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা মানচিত্রে চীনের উপস্থিতি আছে এবং থাকবে, এটা মেনে নিয়েই ভারতের এগোনো উচিত বলেও পরামর্শ দিয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকা।
বস্তুত বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লি থেকে বিদায় নেয়ার পর প্রায় তিনদিন কেটে গেছে, কিন্তু ভারতের বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সেই সফরের কাটাছেঁড়া ও ময়নাতদন্ত এখনও অব্যাহত।
‘দ্য হিন্দু’ লিখেছে, বাংলাদেশ সরকার যদিও এখন পর্যন্ত ভারতের মুখের কথায় ভরসা রাখছে -কিন্তু তারা এনআরসি নিয়ে যে প্রশ্নগুলো তুলেছেন সেগুলো উপেক্ষা করা দিল্লির জন্য মোটেও ঠিক হবে না।
‘দ্য হিন্দুস্থান টাইমস’ও প্রায় একই সুরে বলছে, ‘দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের সেরা বন্ধু’ যদি এনআরসি প্রশ্নে উদ্বিগ্ন বোধ করে তাহলে দিল্লির উচিত হবে অঙ্কুরেই সেটা বিনাশ করা। এ পত্রিকাটি অবশ্য একই সঙ্গে তিস্তা চুক্তির প্রশ্নেও ভারতকে আরও তৎপর হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
দিল্লিতে বাংলাদেশ গবেষক শ্রীরাধা দত্ত বলছিলেন, ভারতীয় মিডিয়াতে এ ধরনের পর্যবেক্ষণ বেশ ইতিবাচক একটা পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। তার কথায়, ‘এবার দেখে ভালো লাগছে যে, অনেক বেশি খোলা মন নিয়ে ও একটা ন্যায্যতার দৃষ্টিতে ভারতীয় মিডিয়া দু’দেশের সম্পর্ককে বিশ্লেষণ করছে।’
টাইমস অব ইন্ডিয়া লিখেছে, এনআরসি ইস্যু দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি স্ট্রেইন বা উত্তেজনার কারণ -এ অভিযান বন্ধ করে ভারতের উচিত হবে দক্ষিণ এশিয়ার ‘গ্রোথ ইঞ্জিন’ বাংলাদেশ থেকে অর্থনীতির পাঠ নেয়া।
বাংলাদেশ উপকূলে ভারতের রেডার সিস্টেম বসানোর পটভূমিতে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ কমোডোর উদয় ভাস্কর ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস পত্রিকাতে একটি নিবন্ধ লিখেছেন। নিবন্ধটির শিরোনাম হলো- ‘ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক নির্ধারণের ক্ষেত্রে দিল্লিকে এটা মেনে নিতে হবে যে, বাংলাদেশে চীনেরও একটা উপস্থিতি আছে।’
ভারতীয় নৌসেনার সাবেক কর্মকর্তা ভাস্কর বলেছেন, ‘চীন থেকে সবচেয়ে বেশি সামরিক সরঞ্জাম পেয়ে থাকে যেসব দেশ, সেই তালিকার ওপর দিকেই আছে বাংলাদেশ। সেখানে আরও আছে পাকিস্তান বা মিয়ানমারও। এখন আমি যেটা বলতে চেয়েছি, চীন থেকে সাবমেরিন পাওয়ার পর বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা সামর্থ্য নিঃসন্দেহে অনেক বেড়েছে, আর সেটা ভারতকেও নিশ্চয় উদ্বিগ্ন করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কিন্তু বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে চীনের এ উপস্থিতি একটা বাস্তবতা, এটাতে বিরক্ত বোধ না করেই ভারতকে তা ডিল করার উপায় খুঁজতে হবে। হয় আমরা, নয়তো চীনের মধ্যে থেকে বেছে নাও, বাংলাদেশকে সেদিকে ঠেলে দেওয়া ঠিক হবে না।’
ঢাকায় ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত দেব মুখার্জিও ওই পত্রিকাতেই তার মন্তব্য প্রতিবেদনে লিখেছেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় রাখতে চাইলে দিল্লিকে যে ‘আরও অনেক বেশি কিছু করতে হবে’, তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন