ভারত নির্ভরতার কারনেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি

ভারত নির্ভরতার কারনেই পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি

দামের ঊর্ধ্বগতি ঠেকাতে মিয়ানমার, মিশর ও তুরস্ক থেকে পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হলেও এতে সংকটের সমাধান হবে না বলে মনে করছেন চট্টগ্রামের পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ভারত থেকে নতুন পেঁয়াজ না আসা পর্যন্ত বাজারে পেঁয়াজের চড়া দাম থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

ব্যবসায়ীরা বলেছেন, অন্তত আরও আড়াই থেকে তিন মাস পেঁয়াজের চড়া দাম থাকবে। এর মাঝে মিয়ানমার-তুরস্ক-মিশরের পেঁয়াজ বাজারে এলে দাম কিছুটা পড়বে, তবে সেটা স্থায়ী হবে না।সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দেশের ভোগ্যপণ্যের অন্যতম বড় বাজার চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে আগের মতো কেজিপ্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা চড়া দামে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের পেঁয়াজের বাজার মূলত ভারতের ওপর নির্ভরশীল। ভারতের মহারাষ্ট্রের নাশিক জেলা ও দক্ষিণ ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজের চাহিদাই খাতুনগঞ্জসহ দেশের পাইকারি বাজারগুলোতে সবচেয়ে বেশি। সেখান থেকে চাহিদামতো পেঁয়াজ আমদানি করা যাচ্ছে না।

খাতুনগঞ্জে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ঘুরে জানা গেছে, সোমবার ভারতের নাশিকের ভালো মানের পেঁয়াজ প্রতিকেজি বিক্রি হয়েছে ৬০ টাকায়। কিছুটা নিম্নমানের নাশিকের পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫৮-৫৯ টাকায়। দক্ষিণ ভারত থেকে আসা প্রতিকেজি বড় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকায়। ছোট পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬২ টাকায়। মিয়ানমার থেকে আসা পেঁয়াজের দাম ছিল কেজিতে ৫৮ থেকে ৬০ টাকা।

খাতুনগঞ্জের মের্সাস হাজী অছি উদ্দিন সওদাগরের মালিক রহুল আমিন চৌধুরী বলেন, ‘গত সপ্তাহেও আমরা প্রায় একই দামে পেঁয়াজ বিক্রি করেছি। এ সপ্তাহের শুরু থেকে মিয়ানমারের পেঁয়াজ বাজারে আসতে শুরু করেছে। দামে তেমন কোনো হেরফের হয়নি। এক-দুই টাকা এদিক-সেদিক হয়েছে। মায়ানমারের পেঁয়াজ বাজারে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি। কারণ এই পেঁয়াজের তেমন চাহিদা নেই বাজারে।পাইকারি বাজারে যে পেঁয়াজ ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, সেই পেঁয়াজই চট্টগ্রাম নগরীর খুচরা দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৬৭ টাকা কেজি দরে। পাইকারিতে ৬৫ টাকার পেঁয়াজ খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়।

চড়া দামে পেঁয়াজ বিক্রির পরও লোকসান দিতে হচ্ছে বলে দাবি খাতুনগঞ্জের পাইকারি ব্যবসায়ীদের। তাদের দাবি, প্রতি ট্রাকে তাদের ৫০ হাজার টাকার মতো লোকসান দিতে হচ্ছে।খাতুনগঞ্জের গ্রামীণ বাণিজ্যালয়ের মালিক বলাই কুমার পোদ্দার  বলেন, ‘আমরা সীমান্ত থেকে পেঁয়াজ কিনে আনি। সেই পেঁয়াজ গুদামে রাখি। দাম বেড়ে যাওয়ার পর থেকে পেঁয়াজের ডিমান্ডও কমেছে। কিন্তু আমরা তো আর গুদামে পেঁয়াজ রেখে দিতে পারি না। সেগুলো পচনশীল। কেজিতে এক-দুই টাকা লস দিয়ে হলেও পেঁয়াজ বাজারে ছেড়ে দিচ্ছি।

ব্যবসায়ী রহুল আমিন চৌধুরী  বলেন, ‘নাশিকের যে পেঁয়াজ আমরা একমাস আগেও কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ রুপি দিয়ে কিনতাম, সেটা আজ (সোমবার) বিক্রি হচ্ছে ৪৮ রুপিতে। নাশিক থেকে বেনাপোল বর্ডার পর্যন্ত আনতে খরচ হবে আরও ১০ রুপি। সেই পেঁয়াজ আমাকে আমদানিকারকের কাছ থেকে কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৬৭-৬৮ টাকা দরে। আর বিক্রি করতে হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। তবে দুই পাইকারি ব্যবসায়ীর এই দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেছেন কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা। নগরীর আসকার দিঘীর পাড় এলাকার খুচরা দোকানি অমিত দাশ বলেন, ‘বার্মিজ পেঁয়াজ বাজারে আসার খবর পেয়ে আমরা ভেবেছিলাম, নাশিক ও দক্ষিণ ভারতের পেঁয়াজের দাম কমবে। কিন্তু বাজারে গিয়ে দেখি, নাশিক ও দক্ষিণ ভারতের পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা গুদাম থেকে বাজারে ছাড়ছেন না ভারতের পেঁয়াজ। এতে দাম কমার সম্ভাবনা থাকলেও সেটি হয়নি।

পাইকারি ব্যবসায়ী রহুল আমিন চৌধুরী  বলেন, ‘মিশর, তুরস্ক ও পাকিস্তানের পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ১৫ থেকে ২০ দিনের মধ্যে কিছু পেঁয়াজ বাজারে আসবে। তবে এতে দাম কমবে না। দুয়েক টাকা কমলেও আবার বাড়বে। কারণ আমাদের বাজার ভারতের পেঁয়াজের ওপর নির্ভরশীল। বলাই কুমার পোদ্দার  বলেন, ‘অন্তত আড়াই মাস লাগবে দাম কমতে। নাশিকে বন্যা হয়েছিল। পেঁয়াজের উৎপাদন নেই। সেজন্য দাম বেড়েছে। নতুন পেঁয়াজ উঠবে আরও দুই মাস পর। সেই পেঁয়াজ আমাদের বাজারে আসতে কমপক্ষে আড়াই থেকে তিন মাস লাগবে। তখন হয়তো দাম কমবে। চাহিদা না থাকলে মিশর-তুরস্ক থেকে লাখ লাখ টন পেঁয়াজ এনেও বাজার স্থিতিশীল করা যাবে না।
লেবেলসমূহ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget