আব্দুর রউফ রিপন, রাণীনগর (নওগাঁ): নওগাঁর রাণীনগরে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সোনালী আঁশ পাটের চাষ। গত বছরের তুলনায় চলতি মৌসুমে উপজেলায় ৫হেক্টর বেশি জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে পাটের চেয়ে পাট কাঠির কদর কৃষকদের কাছে অনেক বেশি। তাই উপজেলার কৃষক-কৃষানীরা পাট কাঠির যত্নে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাট থেকে কাঠি ছড়ানোর পর রোদে শুকিয়ে তা মজুদ করায় ব্যস্ত তারা।
এক সময় পাটই ছিলো দেশের প্রধান অর্থকরী ফসল। পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ। বিগত কয়েক বছরে পাটের দাম না পাওয়ায় এক সময়ের প্রধান অর্থকরী ফসল পাট চাষে কৃষকরা আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলো। কিন্তু বর্তমানে পাটের বাজার ভালো হওয়ায় কৃষকদের কাছে দিন দিন পাট চাষের কদর বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে পাটের আঁশের পাশাপাশি পাটকাঠির মূল্য অনেক বেশি হওয়ায় পাটকাঠির যত্নে ব্যস্ত কৃষক-কৃষানীরা।
বর্তমানে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের প্রতিটি এলাকায় পাট কাটা, জাগ দেওয়া ও পাটকাঠি থেকে পাট ছাড়ানোর কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অন্য বছরের তুলনায় এবার পাটের ও পাটকাঠির বাজার ভালো হওয়ায় কৃষকের মুখে ফুঁটেছে হাঁসির ঝিলিক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর ৩৫হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ৫হেক্টর বেশি। চাষের শুরুতে বৃষ্টিপাত কম থাকায় অনেক স্থানে চাষ কিছুটা দেরিতে শুরু হলেও ফলন ভালো হয়েছে। ভালো ফলন হওয়া ও দাম ভালো পাওয়ায় কৃষকেরা খুশি হয়েছে। উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা যায়, বর্তমানে ভালো মানের পাটের মূল্য ১৮শ টাকা মণ ও নিম্ন মানের পাটের মূল্য ১৫শ টাকা দরে বিক্রয় হচ্ছে। ফলে ন্যায্য মূল্য পেয়ে পাট চাষীদের মাঝে এখন পাট চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
উপজেলার মিরাট গ্রামের কৃষক হাসেম আলী বলেন, এবার ৫বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছিলাম পাটও ভালো হয়েছে এবং অন্য বছরের তুলনায় দাম বেশি হওয়ায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে না। আর বর্তমানে আমাদের কাছে পাটের আঁশের চেয়ে বেশি মূল্যবান হচ্ছে পাটকাঠি কারণ বাজারে পাটকাঠির চাহিদা সারা বছর। দামও ভালো পাওয়া যায়। তাই আমরা পাটকাঠির প্রতিই বেশি যতœশীল।
খট্টেশ্বর রাণীনগর গ্রামের পাট চাষী কুদরত বলেন, মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টি না হওয়ায় পাট নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলাম তবে পড়ে বৃষ্টি হওয়ার কারণে ফলনও ভালো হয়েছে। পাট জাগের পর্যাপ্ত জলাশয় থাকা ও বাজারে পাটের দাম ভালো থাকায় আমি খুশি। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আগামি বছর আরো বেশি জমিতে পাট চাষ করবো।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ শহীদুল ইসলাম বলেন, উপজেলায় পাটের হারানো যৌবন ফিরে আনার লক্ষ্যে কৃষি অফিস মাঠ পর্যায়ে সব সময় কাজ করে আসছে। কৃষকদের কাছে বিনামূল্যে পাটের বীজসহ অন্যান্য উপকরন সরবরাহ করা থেকে পাটের আঁশ ছাড়া পর্যন্ত আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিয়ে এসেছি। অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার পাটের বাজার ভালো থাকায় কৃষকরা খুশি। পাটের পাশাপাশি পাট কাঠির কদরও কৃষকদের কাছে অনেক বেশি। পাটের এই বাজার বর্তমান থাকলে আগামীতে পাট চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে কারণ কৃষকরা ধান চাষে বার বার লোকসান দিয়ে আসছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন