মাহবুবুজ্জামান সেতু, নওগাঁ : নওগাঁর মান্দায় বাড়ির উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইন, যেনো দেখার কেউ নেই! চরম ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে কয়েকটি অসহায় পরিবার। যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের কোন অনাকাঙ্খিত দূর্ঘটনা। ভূক্তভোগীরা নওগাঁ পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে লিখিত অভিযোগ করেও কোন প্রতিকার না পাওয়ায় হতাশার মধ্যে দিনানিপাত করছে। ভূক্তভোগীদের পক্ষে অভিযোগকারী উপজেলার নুরুল্যাবাদ ইউ'পির দক্ষিণ নুরুল্যাবাদ গ্রামের (গোয়ালমান্দা সুইচ গেট) মৃত তরিকুল্লা মন্ডলের ছেলে আকবর আলী মন্ডল।
উল্লেখ্য, মান্দা উপজেলার একাধিক গ্রামের বিভিন্ন স্থানে পল্লী বিদ্যুতের তার গাছের ওপর ঝুলে পড়েছে। আবার কোথাও কোথাও স্থানীয় প্রভাবশালীদদের ইন্ধনে বসত বাড়ির উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ এর সংযোগ দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারী,অভিযোগসূত্রে এবং স্থানীয় ভূক্তভোগীদের মাধ্যমে জানা যায়, তারের সংস্পর্শে এসব গাছের ডালে প্রায়ই আগুন ধরে যায়। অনেক বাড়িতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে ঝুঁকিপূর্ণভাবে, বাঁশের খুঁটি ও গাছের ডালে তার বেঁধে। দীর্ঘদিন এ অবস্থা চললেও সমাধানের কোনো উদ্যোগ নেই। এতে যেকোনো সময় বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছে এলাকাবাসী।
সরেজমিনে দেখা যায়, মাটির রাস্তার পাশ দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের কংক্রিটের খুঁটি বসিয়ে মূল বিদ্যুৎ-সংযোগ উপজেলার দক্ষিন নুরুল্যাবাদ (গোয়ালমান্দা সুইচ গেট) পশ্চিমপাড়া থেকে একই গ্রামের পূর্ব পাড়ায় (করাতি পাড়া) ঢুকেছে।
প্রয়োজনের তুলনায় খুঁটি কম বসানোয় বিদ্যুৎ-সংযোগের তার বিভিন্ন স্থানে গাছের উপর এবং বসত বাড়ির উপর ঝুলে পড়েছে। তারে কোনো আচ্ছাদন নেই। তারের আশপাশের অনেক গাছের ডাল পুড়ে গেছে। অনেক স্থানে তার বাঁশের খুঁটি দিয়ে উঁচু করে রাখা রয়েছে। রাস্তা থেকে ১০০-২০০ গজ দূরের বাড়িগুলোতে সংযোগ দেওয়া হয়েছে তার বাঁশের খুঁটি ও গাছে ডালের সঙ্গে বেঁধে।
গ্রামবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ গ্রামে প্রায় ২ বছর পূর্বে বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। দূর্ঘটনা এড়াতে কিছুদিন পরপর অন্তত তারের আশপাশে থাকা গাছের ডালপালা ছেঁটে দেওয়ার কথা পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন সময়ে তারা এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানালেও অনেক জায়গায় আজ পর্যন্ত ডালপালা ছাঁটা হয়নি। ফলে প্রায়ই তারের সংস্পর্শে গিয়ে গাছের ডালে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে ও আগুন ধরে যায়। এ ছাড়া ঘরের চালের খুব কাছ দিয়ে ও গাছের ডালে তার ঝুলিয়ে বিদ্যুৎ-সংযোগ দেওয়া হয়েছে। ফলে অনেককে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাস করতে হচ্ছে।
দক্ষিণ নুরুল্যাবাদ (গোয়ালমান্দা সুইচ গেট) গ্রামের কুয়েত প্রবাসী গুলবর রহমানের ছেলে আমিনুল ইসলাম বলেন, কোনো নিয়ম না করেই আমাদের বসত বাড়ির উপর দিয়ে পল্লী বিদ্যুতের মেইন লাইনের সংযোগ দিয়েছে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ। তারের কাছে থাকা গাছের ডাল এবং বাঁশ দীর্ঘদিন কাটা হয়নি। ফলে একটু বাতাস হলেই ডালে আগুন ধরে যায়। তারগুলো খুব নিচে ঝুলে থাকায় গ্রামবাসী আতঙ্কে থাকে।
দক্ষিণ নুরুল্যাবাদ গ্রামের মৃত তরিকুল্লা মন্ডলের ছেলে গুলবর রহমান বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর দুপুরে আমাদের বাড়ির টিনের উপর দিয়ে যে লাইনটি টানা হয়েছে, সে বিদ্যুতের তারের কাছে থাকা বাঁশঝাড়ের বাঁশে বিকট শব্দ করে আগুন ধরে যায় এবং আমাদের বাড়ির টিনসহ পুরা বাড়ি আর্থিং হয়ে যায়। আমাদের বসতবাড়ি ভিটার জায়গা জমি কম, কোনমতে কষ্ট করে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে হয়। আমরা খুব বিপদে আছি। খুব টেনশনে বাড়িতে অবস্থান করতে হয়। কখন যে কি হয়,বলা মুশকিল। এতোটুকু জায়গার উপর বাড়িঘর। তারমধ্যে আবার পল্লী বিদ্যুৎ এর মেইন লাইন। এটা কি মেনে নেওয়ার মতো? কিন্তু উপায় নেই। আমরা দূর্বল,অসহায় মানুষ আমাদের কোন ক্ষমতা নেই। এলাকার কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তিরা জোর পূর্বক কাজটি করেছে। আর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস তাদের কথায় শায় দিয়ে আমাদের কোন বাধা নিষেধ না শুনে এমনটি করেছে। আমরা এর প্রতিকার চাই। আমাদের দাবি সরেজমিন তদন্তপূর্বক জনস্বার্থে ঝুঁকিপূর্ণ বৈদ্যতিক লাইনটি স্থানান্তর করা হোক।
এতে এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। প্রায়ই এমন ঘটনা ঘটে। প্রতিবারই অভিযোগ দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যবস্থা নেওয়াতো দূরের কথা, আজ পর্যন্ত কেউ পরিদর্শনেও আসেনা । আর বিশেষ করে জরুরি মুহুর্তে পল্লী বিদ্যৎ অফিসে ফোন করেও কোন রেসপন্স পাওয়া যায় না। তাদের বদ অভ্যাস হচ্ছে যে, তারা সহজে কোন পল্লী বিদ্যুৎ গ্রাহকের ফোন রিসিভ করতে চাননা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন