নওগাঁ প্রতিনিধিঃ মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নওগাঁয় এবার স্বচ্ছভাবে পুলিশে লোক নিয়োগ দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পুলিশ কনেস্টবল পদে মোট চাকুরী পেয়েছেন ১২০ জন। কনেস্টবল পদে চাকুরী প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারন কৃষক, দিনমজুর, রবিদাস, মুক্তিযোদ্ধার হতদরিদ্র নাতী, রিক্সা চালকের মেয়ে, ভিক্ষুকের ছেলেও পেয়েছেন চাকুরী।
নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্য ও নওগাঁ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন জানান, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম ইতি পূর্বেই বলে ছিলেন, বঙ্গবন্ধুর ‘সোনা বাংলা’ ও প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি মুক্ত দেশ আধুনিক দেশ’ গড়তে আগামীতে পুলিশে কনেস্টবল পদে যারা চাকুরী প্রত্যাশী তারা কেই যেন কোন দালাল চক্রর ফাঁদে পড়ে চাকুরীর জন্য দালাল চক্রসহ কাউকে যেন টাকা না দেন। শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতা সম্পূর্ন হলেই বিনা টাকায় পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরী পাবেন চাকুরী প্রত্যাশীরা।
নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যরা জানান, নওগাঁর পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম তার কথাই রাখলেন। দালাল চক্র মুক্ত ও তদবির বিহীন মেধা ও যোগ্যতা সম্পূর্ন চাকুরী প্রত্যাশী ৩ জুলাই ১২০ জন নারী-পুরুষকে পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরী দিলেন। পার-নওগাঁ পারঘাটি মহল্লার হরজিন পল্লীর রবিদাস সম্প্রদায়ের শিল্পী রাণী রবিদাস। শিল্পীর বাবা ব্রিজের মোড়ে জুতা সেলাই করতেন। গত বছর বুকের ভালব নষ্ট হয়ে মারা গেছেন। তার মা ও বৃদ্ধা দাদিকে নিয়ে তাদের সংসার। এক সময় বিভিন্ন লোকজনদের বাড়িতে গৃহস্থলী কাজ করতেন। পরিবারের এক মাত্র অর্থ উপার্জনকারি বাবা মারা যাওয়ার পর শিল্পীর মা শত অভাব-অনটনের মধ্যে মেয়েকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করিয়েছেন। বর্তমানে শিল্পী নওগাঁ কলেজে অনার্সে ভর্তি হয়েছেন।
আমরা গরীব মানুষ। বেশি ভাগ দিন ঠিক খারাব মেটানো সম্ভব হতো না। সমাজে শতশত বৃত্তবান মানুষ রয়েছে। তাদের সন্তানদের চাকুরি নিতে লাখ লাখ টাকা দিতে প্রস্তুত। কিন্তু নওগাঁয় পুলিশ কনেস্টবলে চাকুরি পেতে কোন টাকা পয়সা লাগেনি। আগামিতে তিনিও স্বচ্ছতা ও সততার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।
শিল্পীর পুলিশে চাকুরি হওয়ার সংবাদে হরজিন পল্লী রবিদাস সম্প্রদায়ের পাড়াতে চলছে আনন্দের বন্যা বইছে। পাশাপাশি মিষ্টি বিতরণও করা হয়।
শুধু শিল্পী নয় ! এই ভাবে নওগাঁয় পুলিশ কনেস্টবল পদে টাকা ছাড়াই নিয়োগ হয়েছে মান্দা উপজেলার পাকুরিয়া গ্রামের দরিদ্র পরিবারের মৃত তারা মোল্লার ছেলে লাল চাঁন আলীর। সহায় সম্পদ বলতে কিছুই নেই তার। লাল চাঁন আলী নওগাঁর মহাদেবপুরের নওহাটামোড় (চৌমাশিয়া) বাজার বাস ষ্টান্ডে দাঁড়ানো বাসের যাত্রীদের কাছে ভিক্ষার টাকায় সংসার চালানোর পাশাপাশি তার ছেলে ফিরোজ হোসেনকে লেখাপড়া শিখিয়েছেন। ভিক্ষুক লাল চাঁন আলীর ছেলে ফিরোজ হোসেন এবার পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরী পেয়েছেন।
আরো কয়েক জন অভিভাবক ও একইভাবে বলেছেন, যে এইবার কোন প্রকার টাকা বা দালাল ছাড়াই জেলা পুলিশ সুপার সচ্ছভাবে ১২০ জনকেই শুধুমাত্র মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নিয়েছেন।
বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশন নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক রোটানিয়ন চন্দন কুমার দেব জানান, নিয়োগ পাওয়া পুলিশ সদস্যদের অনেকের সাথে তার কথোকথন হয়েছে। তারা সবাই জানিয়েছেন, এ বছর মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরি হয়েছে। এ জন্যে সংশ্লিষ্টদের ধন্যবাদ জানান। তিনি আরো জানান, আগামাতিও একই ভাবে সকল চাকুরিতে সকল পদে মেধা, যোগ্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানান।
নওগাঁর পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন পিপিএম জানান, শুধুমাত্র যোগ্যতা ও মেধার ভিত্তিতে ১২০ জন ছেলে-মেয়ের পুলিশ কনেস্টবল পদে চাকুরী হয়েছে। নিয়োগ প্রাপ্তদের মধ্যে অধিকাংশই সাধারন কৃষক, দিনমজুর, রবিদাস, মুক্তিযোদ্ধার হতদরিদ্র নাতী, রিক্সা চালকের মেয়ে ও ভিক্ষুকের ছেলেও পেয়েছেন চাকুরী। পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চুড়ান্ত করা হয়েছে। বিগত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের নিয়োগ আরো স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য ভাবে সম্পন্ন করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার আরো জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ‘সোনা বাংলা’ ও প্রধান মন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি মুক্ত দেশ আধুনিক সোনার বাংলা’ গড়তে পুলিশে কনেস্টবল পদ স্বচ্ছ ও পরিচ্ছন্নভাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে- এই নতুন পুলিশ সদস্যরা প্রধান মন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনার ‘দুর্নীতি, ক্ষুধা মুক্ত আধুনিক সোনার বাংলা’ গড়তে তৎপর থাকবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন