নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: ‘দুর্নীতির সূতিকাগার’ হিসেবে খাদ্যগুদামগুলোকে চিহ্নিত করেছিলেন মন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার এমপি। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়েই কথা দিয়েছিলেন এসব গুদামে সারপ্রাইজ ভিজিটে যাবেন। মন্ত্রীত্বের ৫ মাসে আকস্মিক ঝটিকা সফর করে রীতিমতো চমকে দিচ্ছেন গুদামের কর্মকর্তাদের।
সাপ্তাহিক ছুটির দিনে শুক্রবারও (১৪ জুন) ঘরে বসে না থেকে মন্ত্রী আচমকা ঢুকে পড়লেন কোন না কোন খাদ্যগুদামে! আর এজন্য টার্গেট করলেন রাজধানী ঢাকা থেকে প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দূরের রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫ টি খাদ্য গুদামকে।
২৬ টাকা দরে চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার আগে শুক্রবার বিকেলে গুদামগুলো ঘুরে ঘুরে পাকা জহুরির মতো যাচাই-বাছাই করলেন সংরক্ষিত ধান, চাল ও গম।
আবার কর্মকর্তাদের সতর্ক করলেন কৃষকদের কাছ থেকেই ধান কেনার সিদ্ধান্ত পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে কার্যকরে কোন অনিয়ম হলেই অ্যাকশনে যাওয়ার কঠোর মানসিকতার কথা।
তটস্থ কর্মকর্তারাও অঙ্গীকার করলেন সরকারি সিদ্ধান্ত কঠোরভাবেই বাস্তবায়নের। মন্ত্রী অত:পর ছুটলেন বাজারেও। কথা বললেন কৃষকদের সঙ্গে। ক’দিনের আগের কৃষকের অভিযোগ যেন হাওয়ায় মিলেছে!
এখন ধানের দাম বাড়ায় খুশি কৃষকরা। মাঠের এ আসল নায়করাই জানালেন, বাজারে জিরাশাইল ধান ৮’শ থেকে ৮৪০ এবং মোটা ধান ৬৬০ থেকে ৭১০ টাকা দামে বিক্রি হচ্ছে।
নওগাঁ-১ (নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার) আসনের থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদারের হাতে এবার খাদ্যমন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষক পরিবারে বেড়ে উঠা তৃণমূলের অভিজ্ঞ এ রাজনীতিক মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েই এ মন্ত্রণালয় ও এর অধীনে সকল সেক্টরকে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দেন।
মন্ত্রণালয় ও অধীনের সেক্টরগুলোর ভেতরে-বাইরে ঘাপটি মেরে থাকা দীর্ঘদিনের সিন্ডিকেট ভেঙে দিয়ে আলোচনায় আসেন তিনি। কিন্তু এ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের পদে পদে খেসারতও গুণতে হয়েছে তাকে। কথিত শক্তিশালী সিন্ডিকেটের কূপানলে পড়েছেন। তবুও নিজের অবস্থান থেকে সরে আসেননি সাধন চন্দ্র মজুমদার।
সারা দেশে ধানের বাম্পার ফলনে ধানের দাম খানিকটা কমে যাওয়ায় ক’দিন আগেও কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েন মন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে এখন সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সফলতাও পেতে যাচ্ছেন তিনি।
ক’দিন খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে মন্ত্রী জানিয়েছেন, কৃষকের কাছ থেকে আরো ২ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্তের কথা। ২৬ টাকা কেজি দরে এ ধান সংগ্রহ করা হবে। এতে করে কৃষকরা আশাবাদী হয়ে উঠেছেন। ইতোমধ্যেই বাজারে বেড়েছে ধানের দাম। ফলে খানিক নির্ভার কৃষকদের মতো মন্ত্রীও।
তবে মন্ত্রী আত্মতুষ্টিতে না ভুগে ঈদের দ্বিতীয় দিনে বৃহস্পতিবার (০৬ জুন) নিজেই আচমকা বাজার পরিদর্শনে বেরিয়ে পড়েছিলেন। সেদিন বাজারে গিয়ে চাল, আটা, মাছ, মাংস, ডিম ও অন্যান্য পন্যের দর যাচাই করেন। অতীতে খাদ্যমন্ত্রীদের সারপ্রাইজ ভিজিটের ঘটনা না ঘটলেও এক্ষেত্রে সাধন চন্দ্র মজুমদার নজির স্থাপন করেছেন।
শুক্রবার (১৪ জুন) বিকেল থেকে রাত সাড়ে ৯ টা অবধি মন্ত্রী আকস্মিক হানা দিলেন রাজশাহীর গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার নাচোল, গোমস্তাপুর, আমনুরা ও মোহনপুর খাদ্যগুদামে।
জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নাজমুল হক ভূঁইয়া গণমাধ্যম কর্মীদের জানান, মন্ত্রী এসব খাদ্য গুদামে সংগ্রহকৃত ধান, চাল ও গমের মান দেখে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি চলতি বোরো মৌসুমে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ধান সংগ্রহ করার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। আর এক্ষেত্রে সংশিষ্ট কর্মকর্তারা কোন রকমের সমস্যার সম্মুখীন হলে তাৎক্ষণিক তাকে জানানোর কথা বলেছেন।
একই রকম তথ্য জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ খাদ্য নিয়ন্ত্রক রিয়াজুর রহমান রাজু। তিনি জানান, বোরো মৌসুমে সংগ্রহ অভিযানের গতি যেখানে শ্লথ সেখানে গতি বাড়াতে কার্যকর নির্দেশ দিয়েছেন মন্ত্রী। কৃষকদের ছাড়া অন্য কারো কাছ থেকে যেন ধান কেনা না হয় সেজন্য পুনরায় সবাইকে সতর্ক করেছেন।
দু’টি জেলার খাদ্যগুদামগুলোতে নিজের আকস্মিক হানার বিষয়ে খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতেই নতুন করে সরাসরি তাদের কাছ থেকেই ধান কেনার নির্দেশনা সফলতার সঙ্গেই বাস্তবায়ন করতে চাই।
এজন্য আমি খাদ্যগুদামগুলোতে ঝটিকা সফর করছি। পাশাপাশি ধানের বাজারও ঘুরে দেখেছি এবং কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেছি। ধানের দাম নিয়ে এখন আর তাদের কোন অভিযোগ নেই।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন