নওগাঁর কণ্ঠস্বর খ্যাত বরেন্দ্র রেডিও দুইমাস থেকে অচল

নওগাঁর কণ্ঠস্বর খ্যাত বরেন্দ্র রেডিও দুইমাস থেকে অচল

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর ‘কণ্ঠস্বর’ বলে খ্যাত ‘বরেন্দ্র রেডিও ৯৯.২ এফএম।’  আট বছর থেকে সফলতার সাথে রেডিও’র কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি এক বজ্রপাত রেডিও’তে পড়ায় একটি যন্ত্রের (ট্রান্সমিটার) ক্রুটি সাধিত হয়েছে। ফলে দুইমাসের অধিক সময় থেকে বন্ধ হয়ে আছে রেডিও’র কার্যক্রম। এতে কর্মহীন পড়ে পড়েছে রেডিও’র সাথে সম্পৃক্ত ৩৪ জন স্বেচ্ছাসেবী। রেডিও টি বন্ধ থাকার পেছনে কর্তৃপক্ষের উদাসিনতাকেই দায়ী করছেন সচেতন মহল। জানাগেছে, বাংলাদেশে ১৮টি কমিউনিটি রেডিও’র মধ্যে একটি নওগাঁর ‘বরেন্দ্র রেডিও ৯৯.২ এফএম।’ জেলার মানবাধিকার সংস্থা ‘নওগাঁ মাববাধিকার উন্নয়ন সমিতি’ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় এর অধীনে রেডিওটি অনুমোদন পায়। ফলে গত ২০১২ সালের ৮ মার্চ নওগাঁ শহরের উকিল পাড়া উত্তরা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন একটি ভবনের পঞ্চম তলায় রেডিও’র আনুষ্ঠানিক সম্প্রচার শুরু হয়। বর্তমানে প্রতিদিন বিকেল ৩ টা থেকে রাত ১২ টা পর্যন্ত ৬টি ও সপ্তাহে ৪২ টি অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়ে থাকে। জেলার ১১টি উপজেলার মধ্যে নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহার ব্যতিত ৮টি উপজেলা এবং বগুড়া জেলার আদমদীঘি, রাজশাহীর বাঘমারা এবং জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলা সহ মোট ১১টি উপজেলায় এ রেডিও শুনা যায়।

নওগাঁর কণ্ঠস্বর খ্যাত বরেন্দ্র রেডিও দুইমাস থেকে অচল
 প্রায় ৩৬ কিলোমিটারের মধ্যে প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ এ রেডিও শুনতে পায়। রেডিওতে বিভিন্ন ধরনের শিক্ষামুলক, জনসচেতনতা মুলক (পানি, স্যানিটেশন, বৃক্ষরোপন), আদিবাসী (সাঁওতাল, পাহান), দারিদ্র্য বিমোচন, বিনোদনমুলক, নারী উন্নয়ন, মাদক, শিক্ষা ও ধর্মীয় এবং সর্বোপরি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ কর্মসূচীকে সফলভাবে এগিয়ে নেয়ার লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে সম্প্রচার করে আসছে। নওগাঁ কৃষি নির্ভর জেলা। সে লক্ষে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধি, চাষাবাদে নতুন প্রযুক্তির ব্যবহার, সার বিষ/বীজের প্রয়োগ ও জলবায়ু পরিবর্তন, প্রাকৃতিক দূর্যোগ অনুষ্ঠান, স্থানীয় সংবাদ প্রচার করা হয়। এতে করে জেলাবাসীর কাছে রেডিওটি হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক বিকাশের অন্যতম মাধ্যম। এছাড়া রেডিওতে ২টি চাইল্ড ক্লাব এবং ২১টি শ্রোতা ক্লাব আছে। রেডিও’র সাথে সম্পৃক্ত ৩৪ জনের (১৫ জন নারী ও ১৯জন পুরুষ) মধ্যে আটজনকে সামান্য সম্মানি ভাতা প্রদান করা হয়ে থাকে। বাকীরা স্বেচ্ছায় শ্রম দিয়ে রেডিওটিকে সুন্দর ভাবে পরিচালনা করে আসছে। স্থানীয় কিছু প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন প্রচার, দেশি ও বিদেশী দাতা সংস্থা এবং সরকারি কিছু প্রকল্পের মাধ্যমে বিষয় ভিত্তিক অনুষ্ঠান প্রোমো, নির্মাণ ও সম্প্রচারের মাধ্যমে আয় আসে। যা পর্যাপ্ত নয় বলে জানা গেছে। এতো সমস্যার মধ্যেও- কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ চারবার ইউনিসেফ মীনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস, গাল পাওয়ার অ্যাওয়ার্ডস, সেমকা কমিউনিটি রেডিও অ্যাওয়ার্ডস, তামাক নিয়ন্ত্রন বিষয়ক কমিউনিটি রেডিও অনুষ্ঠান নির্মাণ বেষ্ট প্রডিউসার অ্যাওয়ার্ডস সহ স্থানীয় এবং জাতীয় বিভিন্ন পুরুস্কার অর্জন করেছে রেডিওটি। সর্বশেষ ইউনিসেফ মিনা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডস ২০১৮ সালে সারা বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিতীয় পুরুস্কার পায় রেডিওটি। গত ১৪/০৪/১৯ ইং তারিখে রেডিওতে বজ্রপাতে সম্প্রচারের মুলযন্ত্র ট্রান্সমিটার পুড়ে যায়। ফলে গত দুইমাসের অধিক সময় থেকে রেডিও সম্প্রচার বন্ধ হয়ে আছে। কর্তৃপক্ষ ইচ্ছে করলেই রেডিও’র সমস্যা সমাধান করতে পারেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষের এমন উদাসিনতাই দীর্ঘদিন থেকে পড়ে আছে বলে মনে করছেন রেডিওর শ্রোতারা। শহরের চকমুক্তার মহল্লার স্কুল পড়–য়া শিক্ষার্থী সাদিয়া আফরিন জানায়, পড়াশুনার পাশাপাশি অবসর সময়ে রেডিওতে ‘দুরন্ত কথা, নারীর অধিকার ও সচেতনতা মূলক’ অনুষ্ঠান শুনতে খুব ভালো লাগে। কিন্তু প্রায় দুই মাস হলো রেডিও বন্ধ হয়ে আছে। এতে করে খুব খারাপ লাগছে। জানিনা কবে চালু হবে। নওগাঁ সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী রুমানা অরিন বলেন, নওগাঁর একমাত্র স্থানীয় গণমাধ্যম বরেন্দ্র রেডিও। সেই ২০১২ সাল থেকে নিয়মিত শুনছি। মূলত নওগাঁর আঞ্চলিক ভাষা ‘কিংকর্তব্য বিমুঢ়’, বিনোদনমূলক ‘মন যা চায়’, মাদক বিরোধী ‘ফিরে এসো’, শিক্ষামুলক ‘আলোর ভুবন’ ও স্থানীয় সংবাদ শুনতাম।

নওগাঁর কণ্ঠস্বর খ্যাত বরেন্দ্র রেডিও দুইমাস থেকে অচল
 কিন্তু হঠাৎ করে রেডিও’র সম্প্রচার বন্ধ, এখনও চালু হয় নাই। একটা মিডিয়া এতোদিন বন্ধ থাকে, যা সত্যিই দুঃখজনক। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান কামনা করছি। শহরের কালীতলার বাসীন্দা ব্যবসায়ী আজিবুর রহমান বলেন, কাজ শেষে বাসায় ফিরে সন্তানদের নিয়ে রেডিও শুনি। বিশেষ করে নওগাঁর স্থানীয় সংবাদ, কৃষি বিষয়ক অনুষ্ঠান, সরাসরি অনুরোধের গানের অনুষ্ঠান এবং শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান যা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। গত দুই মাস থেকে রেডিও শুনা যাচ্ছেনা। কর্তৃপক্ষ যদি নিজেদের খেয়ালখুশি মত পরিচালনা করে, তবে রেডিও শুনার দরকার নাই। রেডিও’র সহকারী অনুষ্ঠান প্রযোজন শারমিন সুলতানা শশি বলেন, গত তিন বছর থেকে এ রেডিও’র সাথে সম্পৃক্ত। তিনি নিজেও সপ্তাহে দুইদিন ‘এক কাপ চা’ নামে একটি অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন। গত তিন বছরে তিন বার স্টেশনের সমস্যা হয়েছে। একবার সমস্যা হলে কমপক্ষে ২-৩ মাস রেডিও সম্প্রচার বন্ধ থাকে। এতে করে অনেক শ্রোতা ক্ষুদ্ধ হন। আবার অনেকে ফোন দিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তবে রেডিও এভাবে বন্ধ থাকাটা খারাপ লাগে। রেডিও স্টেশন ম্যানেজার সুব্রত সরকার বলেন, রেডিও’র যে যন্ত্রটি নষ্ট হয়েছে তা বাংলাদেশে পাওয়া যায়না। এটি ফ্রান্স থেকে নিয়ে আসতে হয়। এরদাম প্রায় দেড় লাখ টাকা। এছাড়া আনুষঙ্গিক খরচও আছে। সব মিলিয়ে প্রায় ৩-৪ লাখ টাকা খরচ হবে যন্ত্রটি নিয়ে আসা হয় সের্টিং করতে। মোটকথা- ‘আর্থিক অনটনের কারণে যন্ত্রটি কেনা সম্ভব হচ্ছেনা। ফলে রেডিও সম্প্রচার বন্ধ আছে। ’বরেন্দ্র রেডিও’র চেয়ারম্যান সোহেল আহমেদ বলেন, সাময়িক সমস্যার জন্য আমরা দুংখিত। রেডিওর ট্রান্সমিটারের সমস্যা হয়েছে। আমরা চেষ্টা করছি। কিছুদিনের মধ্যে হয়ত সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget