আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ: নওগাঁর রাণীনগরে রাতের আঁধারে এক প্রবাসীর স্ত্রীর ঘরে ঢুকে জোরপূর্বক ধর্ষন চেষ্টাকারী বিষুকে ৪লাখ টাকায় গ্রামের কতিপয় মাতব্বরা ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে । ঘটনাটি ঘটেছে কালীগ্রাম ইউনিয়নের করজগ্রাম দোগাছী পাড়ায়। সুবিচার পাওয়ার আসায় ভুক্তভোগী দুই সন্তানের জননী এখন পথে পথে ঘুরছে।
ওই গ্রামের মৃত- কাশেম শেখের ছেলে প্রবাসী ফেরদৌস শেখ বাবুর স্ত্রী ভুক্তভোগী লায়লা বানু (ছদ্ম নাম) বলেন, আমরা গরীব মানুষ। আমার স্বামী জীবিকার তাগিদে প্রায় ৫বছর যাবত বিদেশে রয়েছে। আমার এক মেয়ে সবেমাত্র কলেজে ভর্তি হয়েছে আর একটি ছেলে মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়ছে। দীর্ঘদিন যাবত একই গ্রামের হারান সরকারের ছেলে দুই সন্তানের জনক বিষু সরকার আমাকে কুপ্রস্তাব এবং নানা ভাবে উত্ত্যক্ত করে আসছিলো। এর আগেও সে আমার শ্লীতাহানীর চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু গত মঙ্গলবার দিবাগত রাত অনুমান ৯টার সময় আমার ছেলে প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেওয়ার জন্য ঘরের বাহিরে গেলে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা বিষু সবার অজান্তে চুপ করে আমার শোবার ঘরে প্রবেশ করে। পরে ছেলে ও মেয়ে মাটির বাড়ির দোতলায় পড়ার জন্য উঠে গেলে বিষু অতর্কিত ভাবে আমার মুখ ও দুই হাত চেপে ধরে ধর্ষনের চেষ্টা করে। এসময় আমি তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে কৌশলে ঘরের বাহিরে এসে দরজা বন্ধ করে চিৎকার করলে আশেপাশের মানুষ ও গ্রামের কতিপয় মাতব্বররা এসে সকালে বিচার হবে বলে তাকে ছেড়ে দেয়। সুবিচার পাওয়ার আশায় বিষয়টি আমি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে জানায়। কিন্তু বেশ কদিন পার হলেও আজ পর্যন্ত আমি কোন সুবিচার পাই নাই। আজ-কাল বিচার হবে বলে চেয়ারম্যান ও মাতব্বররা কালক্ষেপন করছেন। আমি লোক মারফত শুনতে পাচ্ছি যে চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্থানীয় ইউপি সদস্য গফুর, গ্রামের কতিপয় মাতব্বর জাহাঙ্গির, হেলাল, জব্বার, ছাত্তারসহ আরো অনেকেই বিষয়টি আমার সঙ্গে রফাদফা করার নামে বিষুর পরিবারের কাছ থেকে প্রায় ৪লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ আমার কাছে বিষয়টি রফাদফা করার জন্য আসেনি এবং কবে বিচার হবে সেই বিষয়েও কেউ কোন কিছু বলছে না। আমার শ্বশুড় মারা গেছেন, বাড়িতে কোন পুরুষ লোক নেই। শুধুমাত্র রয়েছে আমার দুই সন্তান ও বয়স্ক শ্বাশুড়ি। আমি কোথায় গেলে সম্ভবহানীর সুবিচার পাবো। চেয়ারম্যান ও মাতব্বররা যদি আমার সম্ভবহানীর চেষ্টার সুবিচার করে না দেয় তাহলে তারা যতই আমাকে হুমকি-ধামকী প্রদান করুক আমি আইনের আশ্রয় নিবো।
অপরদিকে ঘটনার পর থেকে ধর্ষনে চেষ্টাকারী বিষু সরকার পলাতক থাকার কারণে তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয় নাই। সে কোথায় আছে তাও বলতে পারেনা বিষুর পরিবারের সদস্যরা।
স্থানীয় ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম বাবুল বলেন, গ্রামের মাতব্বররা বিষয়টি মিটমাট করেছে। আমার জানা মতে রাণীনগর উপজেলার দুই প্রেস ক্লাবের সঙ্গে অর্থের মাধ্যমে বিষয়টি রফাদফা করা হয়েছে। অর্থের বিষয়ে আপনারা ওই দুই প্রেস ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ করুন।
রাণীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এএসএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন আমিও অর্থের মাধ্যমে বিষয়টি মিটমাট করার ব্যাপারে লোক মারফত জেনেছি। আমি ভুক্তভোগীর কাছে অফিসার পাঠিয়েছি। ভুক্তভোগী যদি থানায় এসে অভিযোগ দেয় তাহলে এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন