আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ: আমের ক্ষতিকর রাসায়নিকের ব্যবহার ঠেকাতে এবং ভোক্তাদের কাছে নিরাপদ ও মানসম্মত আম তুলে দিতে নওগাঁর আম বাগানগুলোতে চলছে পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের বিশেষ নজরদারি। পাশাপাশি রাসায়নিকে পাকানো আম বাজারজাতকরন ঠেকাতে কৃষি বিভাগ থেকে নেয়া হয়েছে বিভিন্ন সচেতনতামূলক পদক্ষেপ। আর তা মেনে চলছেন বাগান মালিকরা।
আমের দ্বিতীয় রাজধানী নামে পরিচিত নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চল পোরশা, সাপাহার, নিয়ামতপুর ও পত্নীতলা উপজেলা। আম চাষ লাভজনক হওয়ায় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে নওগাঁর এই অঞ্চলে আমের চাষ। নওগাঁয় উৎপাদিত আম শুধু দেশেই নয় যাচ্ছে দেশের বাহিরেও। আদালতের নির্দেশ মেনে নওগাঁর আম বাগানগুলোতে নিয়মিত টহল দিচ্ছে পুলিশ। পাশাপাশি জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগও বিশেষ নজরদারী রাখছে এবং বাগানীদের সচেতনতামূলক পরামর্শ দিচ্ছেন। আম গাছে চাষিরা ক্ষতিকর রাসায়নিক ব্যবহার করছে কি না সে বিষয়ে নজরদারী চলছে।
মহামান্য আদালতের আদেশকে স্বাগতম জানিয়েছেন নওগাঁর ভোক্তারা। তবে এই ধারার অব্যাহত চায় ভোক্তারা। আদালত কিটনাশক ব্যবহারের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তাতে ভোক্তারা উপকৃত হবে। গাছ থেকে আম নামানো এবং ভোক্তাদের হাতে পৌছা পর্যন্ত যেন এই নজরদারী অব্যাহত থাকে। এর পাশাপাশি আমের বাজারেও অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। বিষমুক্ত, ভেজালমুক্ত আম খেতে পারবেন। কিটনাশক ব্যবহার না করার ফলে খাটি ফলের স্বাদ পাবে ভোক্তারা। আদালতের আদেশ মেনে চললে আমরা সকলেই উপকৃত হবো।
সাপাহার উপজেলার আমবাগান মালিক রফিকুল ইসলামসহ আরো অনেকেই বলেন আদালতের আদেশ তারা সব সময় মেনে চলেন। তারা কোন দিনই ক্ষতিকর কীটনাশক প্রয়োগ করেননি। কিন্তু গাছে আম ধরে রাখার জন্য স্প্রে করতে হয় যে স্প্রের বিষক্রিয়া প্রয়োগের সাতদিনের মধ্যেই নষ্ট হয়ে যায়। বাগান থেকে আম যখন আম পাড়তে যায় তখন কিছু অসৎ ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় আমে ক্ষতিকর ঔষধ প্রয়োগ করে। এ অঞ্চলের আম বাগানগুলো হাইব্রীড জাতের। তাই কোন রাসায়নিক ব্যবহার করতে হয় না। আগে সামান্য কিছু কিটনাশক ব্যবহার করলেও বর্তমানে আদালতের আদেশ মেনে চলা হচ্ছে।
সাপাহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শামসুল আলম শাহ বলেন, আদালতের আদেশ মোতাবেক আম বাগানগুলোতে ভোক্তার হাতে নিরাপদ ও মানসম্মত আম তুলে দিতে নিরাপত্তামূলক সকল পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। উপজেলার গুরুত্বপূর্ন আমবাগানগুলোসহ সকল আম বাগানে আমার সদস্যরা কঠোর নজরদারী প্রদান করছে।
নওগাঁ কৃষি সম্পসারন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মাসুদুর রহমান বলেন, আম পাড়ার আগে বা তারপর কেউ যাতে ফরমালিন ও কিটনাশক প্রয়োগ করতে না পারে সেদিকে পুলিশ প্রশাসনের বিশেষ নজর দেয়া দরকার। এতে করে আদালতের আদেশ মোতাবেক সকলের উপকৃত হবো। চলতি বছর নওগাঁয় ১৮ হাজার ৬শ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের আম চাষ করা হয়েছে। তবে অন্যতম আম গোপাল ভোগ চাষ হয়েছে বেশি। আগামী ২৪মে নওগাঁর বিখ্যাত সুস্বাদু গোপাল ভোগ আম নওগাঁসহ দেশের বাজারে আসবে। আমরা আশা রাখি নওগাঁসহ দেশের ভোক্তারা এবার বিষমুক্ত নওগাঁর আমের স্বাদ উপভোগ করতে পারবে।
জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান বলেন, নওগাঁ একটি ঐতিহাসিক জেলা। এই জেলার অনেক ব্রান্ডিং উপকরন রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে নওগাঁর আম। বর্তমানে নওগাঁ আম উৎপাদনের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় রাজধানী হিসেবে পরিচিত হয়েছে। অনেক অসাধু ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফার আশায় নওগাঁয় উৎপাদিত আমকে চাপাই ও রাজশাহী বলে বিক্রি করে। এই বিষয় থেকে আমাদের সকলকে সর্তক থাকতে হবে। মহামান্য আদালতের নির্দেশকে সঠিক ভাবে পালন করার লক্ষ্যে আম বাগানে নজরদারীর জন্য প্রতিটি উপজেলায় একজন নির্বাহী মাজিস্ট্রেট নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। আশা রাখি এবার দেশের ভোক্তারা বিষমুক্ত ও সুস্বাদু নওগাঁর আম ভোগ করতে পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন