নওগাঁয় ব্যতিক্রম উদ্যোগে চালু হলো প্রত্যন্ত অজোপাড়া মশিদপুর গ্রামে আলোকিত বইয়ের পাঠাগার

নওগাঁয় ব্যতিক্রম উদ্যোগে চালু হলো প্রত্যন্ত অজোপাড়া মশিদপুর গ্রামে আলোকিত বইয়ের পাঠাগার

আব্দুর রউফ রিপন, নওগাঁ : ঝরে পড়া রোধ করতে বর্তমান সরকার শিক্ষার মান-উন্নয়নে নানান পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। সরকারে সেই উন্নয়নের সাথে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনগুলো যে যার অবস্থান থেকে নিরবে কাজ করে যাচ্ছেন। শিক্ষা বিস্তারে ঠিক তেমনই ব্যতিক্রম উদ্যোগ নিয়েছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান। সম্প্রতি উপজেলার অজোপাড়া মশিদপুর গ্রামে ‘মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি পাঠাগার চালু করেছেন।
নওগাঁয় ব্যতিক্রম উদ্যোগে চালু হলো প্রত্যন্ত অজোপাড়া মশিদপুর গ্রামে আলোকিত বইয়ের পাঠাগার

জেলার মান্দা উপজেলার ভারশোঁ ইউনিয়নের প্রত্যন্ত অজোপাড়া গ্রাম মশিদপুর। যে গ্রামের অধিকাংশ মানুষই জেলে সম্প্রদায়ের। এই গ্রামের মানুষরা মাছ ধরে জীবন-যাপন করে। উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত প্রত্যন্ত এ গ্রাম। ‘শিক্ষার আলো ঘরে ঘরে জ্বালো’- স্লোগান নিয়ে এ গ্রামে সচেতন ব্যক্তি ও শিক্ষানুরাগীদের নিয়ে গড়ে তোলা হয় ‘মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি’ নামে একটি সেবামুলক অরাজনৈতিক সংগঠন। শিক্ষা বিস্তারে ২০০১ সালে এ সংগঠনটি গড়ে উঠলেও অর্থাভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলো দীর্ঘদিন যাবত।

মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি সাধারন সম্পাদক ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাকের একক প্রচেষ্টায় পথচলা শুরু করে এই সমিতি। পরবর্তিতে আরো কিছু শিক্ষানুরাগী ব্যক্তিদের সহায়তায় সমিতি তাদের কার্যক্রম শুরু করে। এই সমিতির মাধ্যমে মশিদপুরগ্রামসহ আশেপাশের গ্রামের গরীব-অসহায় পরিবারের যে সব সন্তানরা স্কুলে যেতে পারে না তাদের খুজে বের করে এই সমিতির সার্বিক সহযোগিতায় সেই সব সন্তানদের স্কুলে পাঠানোসহ পড়ালেখা বাবদ যাবতীয় খরচ দিয়ে আসছে। বর্তমানে সমিতির ম্যানেজিং কমিটির সদস্য রয়েছেন ২৯জন। কোন শিক্ষার্থী যেন ঝরে না পড়ে এ জন্য বছরের ফেব্রুয়ারীতে বই মেলায় চাহিদা অনুযায়ী তাদেরকে বিভিন্ন শিক্ষা উপকরন দেয়া হয়। ওই দিন আয়োজন করা হয় দিনব্যাপী বই মেলা। অজোপাড়া গ্রামে এই রকম বই মেলা যা দেশের মধ্যে প্রথম। এই রকম ব্যতিক্রমী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে এই সমিতি। এই অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের দাবী ছিলো এই পাঠাগার যে পাঠাগারে বসে অবসর সময়ে শিক্ষার্থীরা তাদের পছন্দমতো বই পড়তে পারবে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সার্বিক সহযোগীতায় পাঠাগার চালু করা হয়েছে। আলোকিত দেশ ও জাতি গড়তে প্রত্যন্ত গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও শিক্ষার্থীদের সামনের দিকে এগিয়ে নিতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জ্ঞানের বৃদ্ধি ও প্রসার ঘটাতে প্রত্যান্ত এলাকার ছেলে-মেয়েরা এ পাঠাগার থেকে সুবিধা পাবে বলে মনে করছেন সচেতন মহল।

মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতি সাধারন সম্পাদক ও রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের সহকারী শিক্ষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন আমাদের দীর্ঘদিনের একটি স্বপ্ন পূরন হলো। আমিও এই গ্রামের একটি গরীব পরিবার থেকে অনেক কষ্ট করে উঠে এসেছি। আমি দেখতাম অনেক পরিবার অর্থের অভাবে তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠাতে পারতো না। তাই আমি আমার কিছু ভালো বন্ধু ও এলাকার শিক্ষানুরাগীদের সার্বিক সহযোগিতায় এই সমিতি চালু করি। বর্তমানে এই সমিতির সহযোগিতায় এলাকার অনেক গরীব পরিবারের সন্তানরা দেশের নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করছে।  এটাই এই সমিতির সফলতা। বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার নিজে উদ্যোগ ও সমিতির সার্বিক সহযোগিতায় এ প্রত্যন্ত এলাকার শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধ করতে এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে ওই সংগঠনের নামে নতুন একটি পাঠাগারের পথচলা শুরু হলো। বর্তমানে বঙ্গবন্ধুর অজানা অধ্যায়, অসমাপ্ত আত্মজীবনী, আমার বন্ধু রাশেদ, সূর্যদীঘল বাড়ি, মহানবী (সা:) এর শ্রেষ্ঠ বাণী, নাগরিকদের জানা ভাল, সোনামনীদের পরিচর্চা, ছোট গল্প, বিজ্ঞান ভিত্তিক বই সহ বিভিন্ন লেখকের প্রায় ৮০ টি বই দিয়ে এ পাঠাগারটি চালু করা হলো।

আর এ পাঠাগার থেকে অত্র এলাকার মশিদপুর, হোসেনপুর, চুয়াপুর, আইওরপাড়া, কবুলপুর, চৌবাড়িয়া, চাকদহ, দূর্গাপুর ও জোনাকীসহ প্রায় ১২/১৫টি গ্রামের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষিত যুবকরা উপকৃত হবেন। অবসর সময়ে তারা এ পাঠাগারে এসে জ্ঞান চর্চা করবেন। এমন মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন স্থানীয়রা। শুধু এ গ্রামে নয়-শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এমন পাঠাগার স্থাপনের দাবী জানিয়েছেন সচেতনরা।

মশিদপুর ফাজিল মাদ্রাসার আলিম প্রথম বর্ষের ছাত্র উজ্জল হোসেন ও শিরিনা আক্তার, মশিদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীর ছাত্রী সম্পা আক্তার, রুপালী বর্মন ও দশম শ্রেণীর ছাত্র নিলয় কুমার টনি বলেন, পাঠাগার বা গ্রন্থাগার হচ্ছে বইয়ের ভান্ডার। যেখানে প্রচুর বই সংরক্ষণে থাকে। বই পড়ার আগ্রহ থাকলেও আমাদের পক্ষে বই কিনে পড়া সম্ভব ছিল না। ইতিপূর্বে আমাদের এলাকায় কোন পাঠাগার ছিলনা। পাঠাগার হওয়াতে আমাদের অনেক সুবিধা হয়েছে। যেখানে অবসর সময়ে আমরা পাঠাগারে বসে বিভিন্ন বই পড়ে জ্ঞান অজর্ন করতে পারব।

মান্দা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, শিক্ষার মান-উন্নয়নে এবং ঝরে পড়া রোধ করতে উপজেলা প্রশাসন থেকে একটি কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। আর এরই অংশ হিসেবে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় পাঠাগার চালু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। কারণ হিসেবে প্রত্যান্ত এলাকাগুলোর উন্নয়ন হলে একটি উপজেলার উন্নয়ন সম্ভব। পাঠাগারের মাধ্যমে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে পড়ার আগ্রহ বাড়বে। শিক্ষার মান উন্নয়নে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীল প্রতিভা ফিরে আসবে। উপজেলার প্রত্যান্ত এলাকায় ১০টি পাঠাগার চালু করা হবে।

এই পাঠাগারে বই পড়ে আলোকিত হবে এলাকার অনেক মেধাবী মুখ। তারা বই পড়ে জানতে পারবে দেশের সঠিক ইতিহাস ও ঐতিহ্য। বই মানুষকে সঠিক পথে পরিচালনা করে। আর বইয়ের দেখানো সঠিক আলোকিত পথে চলে এই অজোপাড়াগ্রামের সন্তানরা নিজেদেরকে বিকশিত করবে এবং উজ্জ্বল করবে এই মশিদপুর শিক্ষা উন্নয়ন সমিতিসহ দেশের নাম। তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে পাঠাগারের মাধ্যমে আবারও ফিরে আসুক জ্ঞান চর্চার সোনালী দিন এমন প্রত্যাশা সকলের।
লেবেলসমূহ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget