সাপাহার (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর সাপাহার উপজেলায় চলতি এসএসসি, সমমান দাখিল ও কারিগরী পাশ পরীক্ষায় মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে উপজেলা সদরের অদুরে মানিকুড়া দাখিল মাদ্রাসা হতে এক বাক প্রতিবন্দ্বি (বোবা) শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। বাক প্রতিবন্দ্বি এই পরীক্ষার্থী মেয়েটি উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের হত দরিদ্র আবুল কাশেম ও মা ফিরোজা বেগমের মেয়ে।
মেয়েটি যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে লেখা পড়া করেছে ওই প্রতিষ্ঠানের একাধিক শিক্ষক শিক্ষিকার সাথে কথা বলে জানা গেছে শিশু কাল হতেই ওই বোবা মেয়েটির লেখা পড়ার প্রতি ছিল চরম ঝোঁক। দারিদ্রতার কারণে মাঝে মধ্যে তার শিক্ষাব্যাবস্থা বন্ধের উপক্রম হলেও মেয়েটি হাল ছাড়েননি এবং দারিদ্রতা সহ কোন বাধাই তাকে দমাতে পারেনি। দরিদ্র পরিবরে তার মা ও অন্যান্য বাক প্রতিবন্দ্বি বোনদের সাথে নকশি কাঁথা শেলায়ের কাজ করে টাকা উপর্জন করে তার লেখা পড়া চালিয়ে এসেছে। বাবা আবুল কাশেমের সংসারে প্রথম স্ত্রী ফিরোজা বেগমের গর্ভের তিনটি মেয়ে সন্তান জন্ম নিলে তিনটিই বাক প্রতিবনন্দ্বি (বোবা) হয়। দিনমজুর বাবা আবুল কাশেম পরে অন্যত্র আর আর একটি বিবাহ করে দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার করায় আয়েশা খতুন ও তার অন্য মেয়েদের নিয়ে মা ফিরোজা বেগম চরম বিপদে পড়েন। পরে তারা জীবিকা নির্বাহের জন্য মানুষের বিভিন্ন ধরনের নকশী কাঁথা হাতে ও মেশিনে সেলাই করে তাদের সংসার পরিচালনা করেন। প্রথম মেয়ে লেখা পড়া না জানলেও সে গৃহস্তালীর কাজে ও সেলাই কাজে বেশ পটু। মেঝো মেয়ে আয়েশা সেলাই কাজের পাশা পাশি লেখা পড়া শিখে বর্তমানে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের অধিনে এসএসসি সমমান পরীক্ষা দিচ্ছে। ছোট বোন বিলকিস আরা উপজেলার তেঘুরিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণীতে লেখা পড়া করছে। কোন রকম কারিগরি শিক্ষা বা কোন মুক বধির বিদ্যালয়ে লেখা পড়া না শিখেই নিজ বুদ্ধিমত্তার জোরে সাধারণ বিদ্যালয়ে বাক প্রতিবন্দ্বি (বোবা) মেয়ে দু’টি লেখা পড়া করে মাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করায় এলাকায় এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। মেয়েটির মা তার বোবা মেয়েদের লেখা পড়ায় আর্থীক সহযোগীতার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনাসহ সকলের দোয়া কামনা করছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন