মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিলেও এসআই ইব্রাহিমের হাত থেকে রক্ষা পেলোনা ওয়াসিম

৪০ হাজার টাকায় মুক্তি
আশরাফুল নয়ন, নওগাঁ: মাদক ব্যবসা ছেড়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার লক্ষে অঙ্গীকার করলেও পুলিশের হয়রানী থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না ওয়াসিম (৩২)। তিনি নওগাঁ সদর উপজেলা কির্ত্তীপুর ইউনিয়নের সালেবাজ (হিন্দুপাড়া) গ্রামের মনতাজের ছেলে। গত ২৭ জানুয়ারী সদর থানার এসআই ইব্রাহিম হোসেন ও এএসআই ফজুলল হক মাদক মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখিয়ে ৪০ হাজার টাকা আদায় করেছেন বলে অভিযোগ করেন ওয়াসিম। এছাড়া আরো ৫ হাজার টাকা বিকাশে নেয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে চাপ দিচ্ছে। বিষয়টি তদন্তপূবর্ক ব্যবস্থা গ্রহন এবং ওয়াসিমের সুস্থ জীবনে ফিরে আসার জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাদক এলাকা হিসেবে পরিচিত সালেবাজ গ্রাম। গ্রামের অধিকাংশই নারী পুরুষ মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। দরিদ্র ওয়াসিম জীবিকা নির্বাহে কখনো কৃষি কাজ আবার কখনো রাজমিস্ত্রীর কাজ করতেন। তাকে দিয়ে মাদক ব্যবসায়ীরা টাকার বিনিময়ে মাদক আনা নেয়া করতেন। এভাবে এক সময় ওয়াসিম নিজেই মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। তিনি মূলত হেরোইনের ব্যবসা করতেন। এভাবে এলাকায় মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পান। পুলিশ বিভিন্ন সময় তাকে মাদকসহ আটক করে জেল হাজতে পাঠায়। জামিনে মুক্ত হয়ে আবারও শুরু করেন মাদক ব্যবসা। তার বিরুদ্ধে মাদকের প্রায় শতাধিক মামলা হয়েছিল। বিভিন্ন সময় আটকের পর কারাভোগ করেছেন প্রায় ৭/৮ মাস। বর্তমানে ৮টি মামলা চলমান আছে।
গত পাঁচ বছর আগে মাদক ব্যবসা শুরু করলেও এক বছর হলো মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। গত ১৪/১২/১৭ ইং তারিখে নওগাঁ সদর থানায় মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়ে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার লক্ষে অঙ্গীকার নামা দেন। এতে সহযোগীতা করেন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসী।

কিন্তু মাদক ব্যবসা ছেড়ে ওয়াসিম সুস্থ জীবনে ফিরে এলেও পুলিশের হয়রানি থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না। কারণে-অকারণে পুলিশ তার বাড়িতে গিয়ে হামলা করছেন। মাদকের মামলা দিয়ে ফাঁসানোর ভয়ভীতি দেখিয়ে টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিচ্ছেন পুলিশ। গত ২৭ জানুয়ারী দুপুর আড়াই দিকে বাড়ির পাশে আলুর ক্ষেতে কাজ করছিলেন ওয়ামিস। এসময় এসআই ইব্রাহিম হোসেন ও এএসআই ফজুলল হক তাকে আটক করে পাহাড়পুর ব্রীজের উপর নিয়ে গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে ৫০ পিচ ইয়াবা ও ১০০ গ্রাম হেরোইন দিয়ে মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখানো হয়। পরে ৪০ হাজার টাকায় রফাদফা হয়।
এরপর পাহাড়পুর বাজারে এসে স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রতন হোসেন, রুমন ও স্বপনসহ কয়েকজনের উপস্থিতিতে ৪০ হাজার টাকা দুই পুলিশ কর্মকর্তার হাতে দেয়া হয়। এছাড়া এএসআই ফজুলল হক যাবার সময় ওয়াসিমকে একটা বিকাশ অ্যাকাউন্ট নাম্বার দিয়ে যান। ওই নাম্বারে ৫ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। পরবর্তিতে ওই ৫ হাজার টাকার জন্য বিভিন্ন সময় তাগাদা দেন এএসআই ফজুলল হক।

ভুক্তভোগী ওয়াসিম বলেন, ভুল করে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েছিলাম। পুলিশ আমাকে আটকের পর বিভিন্ন ভাবে নির্যাতন করত। এসব ভয়ে আমি সুস্থ জীবনে ফিরে আসার লক্ষে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও এলাকাবাসীর সহযোগীতায় থানায় অঙ্গীকার নামা একটি কাগজ দেই। তারপর থেকে আর কোন মাদক ব্যবসা করিনা। কিন্তু পুলিশ বিভিন্ন ভাবে আমার বাড়িতে হামলা করে। টাকা না দিলে মাদক দিয়ে জড়িত করে মামলার ভয় দেখায়।
তিনি আরো বলেন, গত ২৭ জানুয়ারীতে এসআই ইব্রাহিম হোসেন ও এএসআই ফজুলল হক বাড়ির পাশে আলুর ক্ষেত থেকে ব্রীজের উপর ধরে নিয়ে গিয়ে ৫ লাখ টাকা দাবী করে। টাকা না দিলে মাদক মামলায় জড়িয়ে দেয়ার ভয়ভীতি দেখায়। পরে ৪০ হাজার টাকা এসআই ইব্রাহিম হোসেন এর হাতে দেই। এছাড়া একটা বিকাশ নাম্বারও দিয়ে যায় ৫ হাজার টাকা নেয়ার জন্য। ওই টাকা নেয়ার জন্য এখন চাপ দেয়া হচ্ছে।

সালেবাজ গ্রামের গৃহবধু ইতি, বিলকিস ও নাসরিন সহ কয়েকজন বলেন, আগে ওয়াসিমের বাড়িতে বিভিন্ন লোকজন আসা যাওয়া করত। থানায় লিখিত দেয়ার পর থেকে তার বাড়িতে অপরিচিত লোকজনকে আর দেখা যায়না। সে এখন কৃষি কাজ করে সংসার চালায়। কিন্তু তারপরও পুলিশ বিভিন্ন সময় তার বাড়িতে এসে হামলা করে। এমনকি আমাদের বাড়িতে এসেও পুলিশ হামলা করে। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে। স্বামীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ভয় দেখায়। আগে হয়ত ভুল করে মাদকের সাথে ওয়াসিম জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু এখনতো তাকে সুস্থ জীবনে ফিরে আসার সুযোগ তো দিতে হবে। আর পুলিশ বিভিন্ন সময় ঝামেলা করলে তো সম্ভব না।

স্থানীয় ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি রতন হোসেন বলেন, সেদিন ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তা সিভিলে ছিলেন। তাদের হাতে জনসম্মুখে ৩৯ হাজার টাকা দিলে তারা টাকা নিয়ে চলে যান। যাবার সময় পরে ওয়াসিমকে তারা দেখা করতে বলেন।

স্থানীয় ইউপি সদস্য বাবুল হক বাবু জানান, ওয়াসিম থানায় মুচলেকা দিয়ে এক বছর যাবৎ মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। তবুও এস আই ইব্রাহিম ও এ্এসআই ফজলুল হক মাদক মামলার ভয় দেখিয়ে সম্প্রতি ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে।

সদর থানার এসআই ইব্রাহিম হোসেন ও এএসআই ফজুলল হক বলেন, ওয়াসিম একজন মাদক বিক্রেতা। আর মাদক বিক্রেতারা এধরনের গুজব ছড়াতেই পারেন। তবে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ভিত্তীহিন বলে দাবী করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) লিমন রায় বলেন, এ ধরনে অভিযোগ থাকলে তদন্ত সাপেক্ষে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
লেবেলসমূহ:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget