এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা(নওগাঁ): নওগাঁর মান্দা উপজেলা থেকে উদ্ধার করা বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে নেয়া হয়েছে। গত মঙ্গলবার মধ্যরাত থেকে সেখানেই অতি যতেœর সাথে চলছে তার চিকিৎসা ব্যবস্থা। পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরের প্রাকৃতিক পরিবেশেই তাকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তবে চিকিৎসা শেষে তাকে অচিরেই বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে নেয়া হতে পারে বলে একটি সূত্রে জানা গেছে।
উদ্ধার হওয়া নীলগাইটি লোকালয়ে ঢুকেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। কোনো খাবার খাচ্ছেনা। ইতিমধ্যে তাকে সুস্থ করে তুলতে অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে। রাজশাহী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন গত রাতে তাকে সেখানে দেখতে যান। তার সহযোগিতায় নীলগাইটি গাড়ি থেকে নামিয়ে পরিচর্যা কেন্দ্রের ভেতরে নেয়া হয়। তার অধীনেই চিকিৎসা চলছে নীলগাইটির।
রাজশাহী চিড়িয়াখানার ভেটেরিনারি সার্জন ডা. ফরহাদ উদ্দিন বলেন, উদ্ধারের সময় পায়ে, পেটে রানের কাছে আঘাত পেয়েছিল নীলগাইটি। এতে শরীরের ওই স্থানগুলোতে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছে। সেখান থেকে যেন কোন ইনফেকশন (সংক্রমণ) ছড়াতে না পারে সেজন্য অ্যান্টিবায়োটিকসহ বেশ কয়েকটি ওষুধ তার শীরায় প্রয়োগ করা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী দুই থেকে তিন দিনের মধ্যেই পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারে উদ্ধার হওয়া নীলাগাইটি বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, লোকালয়ে ঢুকে পড়ে এমনিতেই ঘাবড়ে গেছে। এর ওপর তাকে ধরতে গ্রামের মানুষের চিৎকার-চেঁচামেচি, হৈ-হুল্লোরে প্রাণীটি আরও বেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। যে কারণে তেমন কোনো খাবারই মুখে তোলেনি প্রাণীটি। চিকিৎসকের পরামর্শে নীলগাইটিকে পাকা কলা, টমেটোসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি দেয়া হয়েছে। নীলগাইটি তৃণভোজী প্রাণী। সাধারণত এগুলোই তার খাবার।
সুস্থ হওয়ার পর কোথায় নেয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের ডিএফও জিল্লুর রহমান বলেন, এখনো কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়নি। বিষয়টি ঢাকায় জানানো হয়েছে। সেখান থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হতে পারে। তবে প্রাথমিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে নীলাগাইটিকে দিনাজপুর রামসাগর জাতীয় উদ্যানে নিয়ে যাওয়া হবে। কারণ সেখানে এরমধ্যে আরও একটি নারী নীলগাই রয়েছে। আর এটি হচ্ছে পুরুষ।
রাজশাহী বিভাগীয় বন কর্মকর্তা এসএম সাজ্জাদ হোসেন বলেন, দেশে এ প্রাণীটি বিরল। বিলুপ্ত প্রায় এ প্রাণীর সংখ্যা দেশে এখন দুটিতে দাঁড়ালো। আর সৌভাগ্যক্রমে এবারের প্রাণীটি পুরুষ। এরা দুজনই প্রাপ্ত বয়স্ক। তাই তাদের একসাথে রাখা হলে স্বাভাবিক নিয়মেই বংশ বিস্তার করা সম্ভব হতে পারে। ফলে বিলুপ্ত প্রায় এই বণপ্রাণীটির সংখ্যা আবারও বাড়ানো যাবে বলে এরই মধ্যে আশার বহি:প্রকাশ ঘটেছে। আগামী এক সপ্তাহ রাজশাহীতে তার চিকিৎসা চলবে। এরপরই তাকে দিনাজপুর নেয়া হবে।
এর আগে গত মঙ্গলবার সকালে নওগাঁর মান্দা উপজেলার জোত বাজার এলাকায় বিলুপ্তপ্রায় নীলগাইটিকে আটক করেন এলাকাবাসী। বাজার এলাকায় ছোটাছুটি করছিলো প্রাণীটি। দেখতে পেয়ে গ্রামের শতাধিক বাসিন্দার ধাওয়ায় ধরা পড়ে এটি। পরে পুলিশ ও প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে খবর দেয়া হয়। তাকে উদ্ধার করে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে রাজশাহী বন্যপ্রাণী ও পরিচর্যা কেন্দ্রে স্থানান্তর করা হয়।
অনেকে মনে করেন, কেউ ভারত থেকে রাতের অন্ধকারে এখানে ছেড়ে দিয়েছে, যাতে মান্দা উপজেলার মানুষ এটি নিয়ে বড় বেশি আকারে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটিকে কেন্দ্র করে শুরু হয়ে গেছে ফেসবুকে প্রচন্ড ঝড়। যেন বইছে বিশাল আকারের বৈশ্বিক ঝড়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন