নওগাঁয় ওয়ান টাইম প্লেটের আধুনিকতায় বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কলার পাতা!

আতাউর শাহ্, নওগাঁ : বিলুপ্তির পথে গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী কলার পাতায় মজলিস খাওয়ার প্রচলন। এক সময় কলা গাছের পাতা ছিল মজলিস খাবারের প্রধান আকর্ষণ। যে অনুষ্ঠানে খাবারের আয়োজন ছিল সে অনুষ্ঠানের জন্য ৮/১০দিন আগে থেকেই স্থানীয় বিভিন্ন বাগান থেকে কলাপাতা সংগ্রহের ধুম পড়ে যেত।
বর্তমানে একবার ব্যবহার উপযোগী থালা আর গ্লাস অতি সহজেই বাজারে পাওয়া যাওয়ায় কলার পাতায় আর খাবার পরিবেশন করা হয় না।

বুধবার দুপুরে সরেজমিনে নওগাঁর মান্দা উপজেলার গণেশপুর গ্রামের মোল্লা পাড়ার মৃত আকালু মোল্লার স্ত্রী মরিয়ম বিবির কুলখানি, দোয়া, মেজবানি বা জিয়াফত অনুষ্ঠানে গিয়ে নিহতের জামাই আলহাজ্ব মকবুল হোসেনের সাথে কথা বলে জানা গেছে। মৃত্যুকালে মরিয়ম বিবি ৩ ছেলে, ৩ মেয়ে ও নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহি রেখে যান।

শাশুরির মৃত্যুর পরে জিয়াফত অনুষ্ঠানে কলা পাতায় মজলিস খাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে আলহাজ্ব মকবুল হোসেন বিভিন্নভাবে স্মৃতিচারণ করেন।

তার শাশুরি মরিয়ম বিবির মৃত্যুর পরে প্রায় আড়াই হাজার  দাওয়াতি মেহমানের জন্য আয়োজিত অনুষ্ঠানে ওইসব স্মৃতিচারণ করে তারা জানান,২০-২৫ বছর আগে কলার পাতা ছাড়া কোন মজলিসে খাওয়া হতো না।

আর আজকে শাশুড়ির  মৃত্যুর পর দোয়া ও মিলাদ অনুষ্ঠানে আমি এবং আমার শশুর বাড়ির লোকজনের সমন্বয়ে দাওয়াতি মেহমানদের সাদা ভাত, আলুর ঘাটি, পাতলা দই, চিনি ও তেঁতুলের আম্বল (টক) খাওয়ার সুবিধার্থে এবং নিজেদের ঝামেলা এড়াতে ওয়ান টাইম প্লেট-গ্লাসের ব্যবস্থা করেছি। যাতে করে দাওয়াতি মেহমানরা শান্তিমতো খেতে পারে।

আর খাওয়া শেষে আমার শাশুড়ির রুহের মাগফিরাত কামনা করে মন খুলে প্রাণ উজার করে দোয়া করতে।

মজলিসের দিন তারিখ ঠিক হওয়ার ১০-১২দিন আগে থেকেই কলাপাতা সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকতো যুবক-ছেলেরা।

আর আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী সবাই মিলে সারি-সারি মাটির উপর চটে (দৌড়), সপ-পাটিতে বসে আলুঘাটি, ভাত, দই, চিনি, গুর ইত্যাদি কলাপাতায় রেখে খাওয়া হতো।

‘বর্তমানে প্লাস্টিকের তৈরী ওয়ান টাইম প্লেট আর গ্লাসে আধুনিকতার সংস্পর্শে হারিয়ে যেতে বসেছে সেই আগের দিনগুলো এবং গ্রামীন সংস্কৃতির সেই অতীত ঐতিহ্য। আর চোখে পড়ে না সেই কলার পাতায় মজলিস খাওয়া।

তিনি আরোও বলেন, ‘তাছাড়া আগের মত আর কলার পাতার প্রয়োজন হয় না। বর্তমান যুগের মানুষ ওইসব কলার পাতায় খাওয়া ভুলে যেতে বসেছে। কারণ- এখন ১-২টাকা হলেই পাওয়া যায় ওয়ান টাইম প্লাস্টিকের প্লেট-গ্লাস।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget