ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বরেন্দ্র অঞ্চল খ্যাত নওগাঁর অন্যতম খাদ্য ভান্ডার মহাদেবপুর উপজেলায় চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ জমিতে উন্নত জাতের সরিষা চাষ হয়েছে। বেড়ে উঠা গাছ আর ফুল দেখে অধিক ফলনের স্বপ্ন দেখছেন কৃষকরা। দৃষ্টি জুড়ে শুধুই হলুদের সমারোহ। সরিষার মাঠে দেখা মিলছে মৌমাছির মধু আহরণের দৃশ্য। গত বছর স্থানীয় বাজারে উন্নত জাতের সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় কৃষকরা এবার সরিষা চাষে অধিক আগ্রহী। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে গত বছরের তুলনায় এ বছর প্রত্যেক সরিষা চাষী অধিক মুনাফা লাভ করবে বলে মনে করছে উপজেলা কৃষি বিভাগ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ১ হাজার ৬’শ ৬০ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর কৃষকরা ৮’শ ২৫ হেক্টর জমিতে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) বারি-১৪, বারি-১৫, বারি-১১, হাইল্যান্ড ও সম্পদ জাতের সরিষা চাষ করেছে। তবে এখনো কোন কোন মাঠে বীজ বপন চলছে, ফলে লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। জানা গেছে, বছরের পর বছর স্থানীয় জাত চাষ করে ফলন কম হওয়া ও উৎপাদনে সময় বেশি লাগার কারণে কৃষকরা সরিষা চাষ মাত্রারিক্ত কমিয়ে দেয়। তবে চলতি মৌসুমের শুরুতে উপজেলা কৃষি বিভাগ “বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট” উদ্ভাবিত অধিক ফলনশীল বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষা চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করে। এ দুটি জাতের সরিষা মাত্র ৭৫-৮০ দিনে ঘরে তোলা যায়। প্রতি হেক্টরে ফলন হয় প্রায় দেড় হাজার কেজি। সরিষা কেটে ওই জমিতে আবার বোরো আবাদ করা যায়। এতে কৃষি জমির সর্বাধিক ব্যবহার নিশ্চিত হয়। উপজেলার নাটশাল গ্রামের কৃষক খাদেমুল ইসলাম জানান, এ বছর ৩ বিঘা জমিতে বারি-১৪ ও বারি-১৫ জাতের সরিষার আবাদ করেছি। বিঘা প্রতি প্রায় ৩-৪ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সরিষার গাছ ভাল হয়েছে। আশা করছি বাম্পার ফলন হবে। একই গ্রামের কৃষক মকলেছুর রহমান জানান, গত বছর বাজারে সরিষার দাম ভাল পাওয়ায় এবার চাষ করেছি ৪ বিঘা। উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক আজিবর রহমান জানান, কৃষি অফিসের পরামর্শে ২ বিঘা জমিতে উন্নত জাতের সরিষার আবাদ করেছি। সরিষার জমিতে ধানের আবাদ ভাল হয় এবং বোরো চাষে খরচ কম হয়। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, কৃষকদের যথাযথ পরামর্শ ও পরিচর্যার বিষয়ে দিক নির্দেশনা দেয়া হচ্ছে। বারি-১৪ ও বারি-১৫ সরিষা বপনের মাত্র ৭৫-৮০ দিনের মধ্যে এর ফলন পাওয়া যায়। এ সরিষা উত্তোলন করে ফের বোরো আবাদ করতে পারেন বলে এটাকে কৃষকরা ‘ফাও ফসল’ হিসেবে অভিহিত করে থাকেন। তিনি আরো জানান, বারি-১৪ সরিষার গাছ লম্বা হওয়ায় এর পাতা মাটিতে ঝরে পরে জৈব সারের কাজ করায় জমির উর্বরতা শক্তি বাড়ে। এ জাতের সরিষা আবাদের পর ওই জমিতে বোরো আবাদে সারের পরিমাণ কম লাগে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন