ইউসুফ আলী সুমন, মহাদেবপুর (নওগাঁ) : দেশের উত্তর জনপদের খাদ্য ভান্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে সবুজ ধানের সোনালী শীষের সমারোহ। ধান ক্ষেতগুলোর সবুজের সমারোহ দেখলে “ধনে ধানে পুষ্পে ভরা, আমাদের এই বসুন্ধরা” কথাটির স্বার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায়। যতদূর চোখ যায় ততদূর মাঠে মাঠে হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ধানগাছ। সরকারের কৃষি বান্ধব কর্মসূচী, কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম, অনুকূল আবহাওয়া, সার, কীটনাশকসহ বাজারে কৃষি উপকরণের পর্যাপ্ত সরবরাহ, সহনশীল দাম, সহজলভ্যতা ও সেচের জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের সরবরাহসহ আবাদ উপযোগী পরিবেশ ইত্যাদি বিবেচনায় চলতি মৌসুমে আমন ধানের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। উপজেলা কৃষি স¤প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ২৩ হাজার ৯'শ ৬৭ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আর আবাদ হয়েছে ২৮ হাজার ৯’শ হেক্টর জমিতে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৯’শ ৩৩ হেক্টর বেশি। এসব জমিতে উৎপাদিত ধানের সোনালী শীষ এখন বাতাসে দোল খাচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হবে। নতুন ধান উঠবে কৃষকের গোলায়। সোনালী ধান ঘরে তোলার স্বপ্নে চাষিরা এখন বিভোর। গৃরস্থ আর কৃষাণ-কৃষানিরা গোলা, খলা, আঙ্গিনা পরিষ্কার করার জন্য ব্যস্ত। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষক ও কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা এ বছর বাম্পার ফলনের আশা করছেন। উৎপাদনেও লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রমের প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। কৃষকরা এবার আমন ধানের বীজতলা করেছে আধুনিক পদ্ধতিতে। আলোর ফাঁদ দিয়ে সনাক্ত করেছে ক্ষেতের পোকামাকড়। ব্যবহার হচ্ছে শেড পদ্ধতি। কৃষি অফিসের অত্যন্ত জরিপ কার্যক্রমের আওতায় আনা হচ্ছে পিছিয়ে পড়া কৃষকদের। ক্রমেই জনপ্রিয় হচ্ছে পার্চিং পদ্ধতির ব্যবহার। এক কথাই উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক পর্যবেক্ষণ আর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে বাড়ছে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা। উপজেলার সুলতানপুর গ্রামের কৃষক ওমর ফরুক জানান, ধান ক্ষেতের পাশে দাঁড়ালে বুক জুড়িয়ে যায়। এ বছর তিনি ২ একর জমিতে আমন আবাদ করছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় গত বছরের তুলনায় এবার অধিক ফলন হবে বলেও আশা করছেন তিনি। একই গ্রামের কৃষক তারেক জানান, সেচ খরচ এবং শ্রমের অধিক মূল্য ও কৃষি শ্রমিকের কিছু সমস্যা থাকলেও অনুকূল আবহাওয়ায় সঠিক সময়ে পর্যাপ্ত সার, কীটনাশক ও বিদ্যুৎ সরবরাহ পাওয়ায় এ বছর আমন ধানের ফলন খুবই ভাল হবে বলে তিনি আশা করেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম প্রামাণিক জানান, আমন ধানের বাম্পার ফলন ও উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়ে আমরা মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন ধরণের কাজ করে আসছি। কৃষকরা যাতে লাভবান হতে পারে এবং কোন প্রকার সমস্যায় না পড়েন এ জন্য আমরা সার্বক্ষণিক নজর রাখছি। তাই আশা করি বিগত মৌসুমের মতো এবারও আমন ধানের বাম্পার ফলন হবে। এতে কৃষকরা অনেকটা লাভবান হবে বলেও আশা করছেন তিনি।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন