নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: ভারতীয় সীমান্ত ঘেঁষা জেলা নওগাঁ। ১৯৮৪ এর ১ মার্চ-এ নওগাঁ মহকুমা ১১টি উপজেলা নিয়ে জেলা হিসেবে ঘোষিত হয়। নওগাঁ জেলা আদিকাল হতেই বৈচিত্র ভরপুর। ছোট ছোট নদী বহুল এ জেলা প্রাচীনকাল হতেই কৃষি কাজের জন্য প্রসদ্ধি। কৃষি কাজের জন্য অত্যন্ত উপযোগী এলাকায় বিভিন্ন অঞ্চল নিয়ে অসংখ্য জমিদার গোষ্ঠী গড়ে উঠে। এ জমিদার গোষ্ঠীর আশ্রয়েই কৃষি কাজ সহযোগী হিসেবে খ্যাত সাঁওতাল গোষ্ঠীর আগমন ঘটতে শুরু করে এ অঞ্চল। সাঁওতাল গোষ্ঠীর মতে এ জেলায় বসবাসরত অন্যান্য আদিবাসীদের মধ্যে পাহান, ওরাউ, মাল পাহাড়িয়া, কুর্মি, মহালী ও মুন্ডা বিশেষভাবে খ্যাত। নানা জাতি ও নানা ধর্মের মানুষের সমন্বয়ে গঠিত নওগাঁ জেলা মানব বৈচিত্র্য ভরপুর। অসংখ্য পুরাতন মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও জমিদার বাড়ি প্রমাণ করে নওগাঁ জেলা সভ্যতার ইতিহাস অনেক পুরাতন ।
১৯৮৪ এর ১ মার্চ-এ নওগাঁ মহকুমা বা জেলা গঠিত। এ জেলায় ১১টি উপজেলায় রয়েছে ৯৯টি ইউনিয়ন পরিষদ। ১১ উপজেলায় মিলে ছয়টি সাংসদীয় আসন গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁর ছয়টি আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নসহ অন্যান্যে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র তুলেছেন। মানুষের মুখে মুখে আলোচিত বিষয় হচ্ছে নির্বাচন ও প্রার্থীদের কর্মকান্ড নিয়ে। নওগাঁ ৬টি আসনটিই বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে গত ২০০৮ সাল থেকে ৬টি আসনই দখলে রয়েছে আওয়ামীলীগের।
সচেতনরা জানিয়েছেন, প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের নওগাঁয় আওয়ামীলীগ ধরে রাখবে তাদের আধিপত্ত ! আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে আবারও বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবে। নওগাঁয় এক আসন ছাড়া বাঁকি আসনে আওয়াগীমীলীগের নেতৃত্বের অভাবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন। বিএনপিতেও প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী।
নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কর্মী সভা ও দুটি ঈদে ইফতার ও শুভেচ্ছার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেছেন। মাঠ দখল রেখে এবং মনোনয়নপত্র নিশ্চিত করতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রে। বসে নেই ছোট দলগুলোও।
শান্তিপ্রিয় জেলায় এ দিকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রæপিং, ভূমি দখল, টেন্ডরবাজি, বালু মহল দখল, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্ব›দ্ব, মারাপিট, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি অফিস ভাংচুর, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে মানববন্ধন-প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করা, সাংবাদিকদের মারপিট-লাঞ্ছিত, বিএনপি-জামায়াত, সর্বহারা-জেএমবি সদস্যদের দলীয় পদ দেয়া, হাইব্রিট নেতাদের কর্মকান্ডে অনেক ত্যাগী নেতাদের নিষ্কিয় হওয়া, বহিষ্কার, নিজেদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা লেগেই রয়েছে। আবার কিছু নির্বাচনী এলাকায় তেমন উন্নয়ন নেই বললেই চলে। এতে আওয়ামীলীগ সরকারের হাজারো উন্নয়নের মধ্যে ভাবমূর্তী বেশ ক্ষুন্ন হয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ স্থাপন, ব্রিজ নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন থাকলেও বিএনপি-জামায়াত, সর্বহারা-জেএমবি সদস্য, নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ডে বিভেদ সৃষ্টি ও সরকারের ভাবমূর্তী নষ্ট হয়েছে। অধিকাংশ নেতাকর্মীদের ভয়ে সাধারণ ভোটার মুখ না খুললেও ভোটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে দিবে এমনটিই জানা গেছে।
নওগাঁবাসি সংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেলার অধিকাংশ সাংসদদের এসব কর্মকান্ডে জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দলের নীতিনিধারক থেকে ‘স্বচ্ছ ও জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতে ভুল করলে আবারও বিএনপির দখলে চলে যাবে নওগাঁয় আওয়ামীলীগের দখলে থাকা অধিকাংশ আসন। আবার তরুণ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে না পারলে আগামীতে নওগাঁয় আওয়ামীলীগ তাদের নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলবে।
অপরদিকে, বিএনপি দলীয় অফিসে দলীয় সাবেক জেলা বিএনপি’র সভাপতি শামছুজ্জোহা খান এমপিসহ নেতা-কর্মীদের মারপিট করে আহত করা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির বেশ কয়েক জনকে ‘আওয়ামীলীগ নেতাদের এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার করা। এখানেই বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীন কোন্দল স্পষ্ট দেখা যায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘আওয়ামীলীগ নেতাদের এজেন্ট’ হিসেবে ঘোষিতদের দলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণপদ। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ সালে সারা দেশে জামায়াত-বিএনপি’র “জ্বালাও-পোড়াও” নীতির শুরু করে। বাদ যায়নি শান্তিপ্রিয় নওগাঁ। শুরু হয় অগ্নি-সংযোগ, পেট্রোল বোমা, ভাংচুর, আন্দোলন-সমাবেশ। মুক্তির মোড়, দয়ালে মোড়ে পুলিশ-বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মামলা হয়। এতে বিএনপি শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মমলা দায়েরের পর বিএনপির দলীয় কর্মসূচী কিছুটা স্থবির হয়ে পরে। এতে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ বিএনপি থেকে দূরে সরে যায়। নতুন করে জেলা বিএনপি কমিটি গঠন ও নতুন সদস্য ভর্তি শুরুর কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপি। আসনগুলোকে আওয়ামীলীগের ধরে রাখা আর বিএনপি’র পু:নরুদ্ধার নির্ভর করছে প্রার্থী নির্বাচনের উপর। তবে পুলিশী বাধায় বেশি ভাগই আন্দোলন সংগ্রাম করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।
নওগাঁ-১ এ আওয়ামীলীগে এক, বিএনপিতে একাধিক
নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার এ তিন উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-১ আসন গঠিত। এ আসন এক সময় বিএনপি শক্ত অবস্থান থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনবারের নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে বিপুুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাধন চন্দ্র মজুমদার জয়লাভ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর সাংসদ থাকায় সাধন চন্দ্র মজুমদার নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তাদের মধ্যে বিভক্ত ও নেতাকর্মী সাংগঠনিক অবস্থা দূর্বল হওয়ার কারণে এলাকায় বিএনপির সংগঠিত সু-আন্দোলন কমে গেছে। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম সংসদ নির্বাচনে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। এ আসনে ১৯৯১ সালে জয়লাভ করে বিএনপি। এরপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দখলে ছিল বিএনপির।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের হাত ধরে শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় এখন উপজেলাগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন একজন। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার।
জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পোরশা উপজেলা সভাপতি আকবর আলী (কালু) মনোনয়নপত্র উঠালেও জোটগত নির্বাচন হলে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি থেকে তুলেছেন, নিয়ামতপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী, জেলা শাখার সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহ খালেদ চৌধুরী পাহিন, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুন নূর ও পোরশা উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা লায়ন মাসুদ রানা এবং রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পোরশা উপজেলার বাসীন্দা শাহ্ আহম্মদ মোজামে¥ল চৌধুরীসহ ১২ জন।
ইসলামি আন্দোলন থেকে পোরশা উপজেলার হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানও তাদের দল থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
নওগাঁ-২ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক
জেলার ধামুইরহাট ও পতœীতলা এ দুই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-২ আসন গঠিত। আসনটি জাতীয় সংসদের ৪৭ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। আগামী একাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রচার প্রচারণা করতে এলাকায় বিভিন্ন শুভেচ্ছা স্বরুপ ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়েছেন। পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা প্রাচীন নিদর্শনে ভরপুর। ধামইরহাটে রয়েছে জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি-শালবন, মুসলিম নিদর্শণ মাহী সন্তোষ (মুসলিম শাসকের টাঁকশাল ছিল), ভীমের পান্টি (গুরুর স্তম্ভ), জগদ্দল পদ্ম মহাবিহার, আগ্রাদ্বীগুন মহাবিহার। পতœীতলায় রয়েছে দিবর দীঘি ও দিব্যক জয়স্তম্ভ¢সহ নানা নির্দশণ।
এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল এ দুই উপজেলা। এখন দলটির সব কার্যক্রম ও কর্মসূচি তিনটি ব্যানারে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির অনেক সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীই এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে চলছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। আর এ ভর করা নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন।
এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের কারণে এ আসনের ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ আসনে বিএনপির পরাজয় হয়েছে বলে জানিয়ে স্থানীয়রা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ আসনে আবার বিএনপিতে নিয়ে আসার চেষ্টায় নেতাকর্মীরা। তাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে ক্ষমতাসীনদের।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার এমপি দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির শামসুজ্জোহা খানকে পরজিত করে প্রথমবার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামসুজ্জোহা খান। এরপর তত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ৪৯ হাজার ভোটে পরাজিত হলে হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার আবারো বিজয়ী হন। দশম সংসদ নির্বাচনে কোন প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার আবারও নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সন্ত্রাস, দূর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু জামায়াত-বিএনপি ও কিছু হাতে গোনা হাইব্রিড নামধারী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। দলীয় ও স্থানীয়রা বলেন, এই সিন্ডিকের মাধ্যমে হুইপ স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, বালু মহল দখল, টেন্ডরবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকেন।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিনে শামসুজ্জোহা খান বিজয়ী হলে সে সময় তিনি ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন আঁতাতে চলে যান বলে অভিযোগ আছে। এরপর তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও মামলা-হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এ নিয়েই নওগাঁ জেলা সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম মতবিরোধ তৈরি হয়। এরপরই দু’জন পতœীতলা এবং ধামুইরহাটে আলাদাভাবে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সেই বিবাদ বিদ্যমানই আছে।
আগামী জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ৫ জন।
তারা হলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদ রেজা মেহেদী, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আখতারুল আলম, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিএম আব্দুর রশিদ ও জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক ।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহা খান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।
তরুণ ও নতুন ভোটাররা প্রত্যাশা করছে নতুন নেতৃত্বের। তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।
নওগাঁ-৩ এ বিভক্ত আওয়ামী লীগ : বিএনপিতে মনোনয়ন লড়াই
বাণিজ্যিক ও সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) উপজেলা। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ৪৮ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। এ আসনে আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভক্ত রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে চেষ্টা আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের। একই সাথে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি প্রার্থীরা। কিন্তু দলীয় কোন্দল সে পথে বাধা হয়ে উঠেছে। আর এ অবস্থায় জাতীয় পার্টি চেষ্টা করছে মহাজোট থেকে তাদের দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে মরহুম ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু একই আসন থেকে পর পর চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুকে পরাজিত করে বর্তমানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার কর্মী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হন। তিনি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তবে নির্বাচনে থাকাকালীন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন না। এনিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দুই উপজেলার নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা যায়। নির্বাচনে তিনি জনপ্রতিনিধি হলেও তার সহধর্মীনি মায়া চৌধূরী এ দুই উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বার্ণিজ্য করে থাকেন। এনিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। ফলে দলে এক সময় ভাঙন সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে দূরে সরে পড়ে। আর এলাকাবাসীরা মনে করতেন, ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নামেই ‘এমপি’। কাজে কর্মে তার তার সহধর্মীনি মায়া চৌধূরী এমপি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে বিকল্প প্রার্থী দেখতে চেয়েছেন। এরফলে মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমের পক্ষে অধিকাংশ নেতাকর্মী দল থেকে মনোনয়নপত্র চান। কিন্ত ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী দল থেকে মনোনয়ন দেয়ায় ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমকে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী করে ভোটের কার্যক্রম শুরু করেন। সে সময় আওয়ামীলীগের সারাদেশে জয়জয়কার হলেও আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে ৩০ হাজার ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বতন্ত ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত ৭ মে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমকে আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম নিজেই নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি জায়গা দখল ও স্বজনপ্রীতির করার অভিযোগ আছে। নির্বাচনে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমের কাছে পরাজিত হওয়ার পর দল থেকে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে এ দুজনের মধ্যে মনোনয়নের লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির আগমণ ঘটেছে। তিনি হচ্ছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বীর জনতার মঞ্চখ্যাত নেতা ও ক্লিন এমেজ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর ওরুফে মঞ্জু। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম ও ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর মধ্যে চলছে অন্ত:দ্ব›দ্ব। এ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপারের স্ত্রী সখিনা সিদ্দিক ও প্রকৌশলী মাহবুব-উল মানাফ শুভ।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, মহাদেবপুর শাখা আ’লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহাঙ্গীর আলম আনছারী, বদলগাছী উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর ওরুফে মঞ্জু, সাবেক পুলিশ সুপারের স্ত্রী সখিনা সিদ্দিক ও প্রকৌশলী মাহবুব-উল মানাফ (শুভ) দল থেকে মনোনয়ন তুলেছেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই নতুন মুখ। এর মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ছাত্র নেতা ও বদলগাছী থানা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও জনির মা নাসরিন আরা সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আলম বুলেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা আসফ কবীর চৌধুরী শত এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম শফিকুল ইসলাম (শফিক)।
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
ভিআইপি নওগাঁ-৪ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক
জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি নওগাঁ-৪ এবং জাতীয় সংসদের ৪৯ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এলাকায় সক্রীয় রয়েছেন। এ উপজেলায় নির্বাচনে দুই দলের দু’ডজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তবে উভয় দলের মধ্যে দলীয় কোন্দল এখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামীতে কে মনোনয়ন পাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে যে যার মতো উপরে লবিং করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর জেলার মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কাছে মান্দা ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত।
১৯৯১ সালে এ আসনে বর্তমান এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নাসির উদ্দিন জিহাদীর কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পরপর তিনবার নিবার্চিত হন বিএনপির সামসুল আলম প্রামানিক। ২০০৮ সালের আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সহসভাপতি আব্দুল লতিফ শেখ। স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়ন নেন মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপির মনোনীত সামসুল আলম ও আওয়ামীলীগ মনোনীত আব্দুল লতিফ শেখকে পরাজিত করে বিজয়ী হন মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। ওই নির্বাচনে আব্দুল লতিফ শেখ প্রায় ৩৬ হাজার ভোট পান। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে আবার মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক নির্বাচিত হন। এরকিছু পর তিনি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী পদে ভ‚ষিত হন।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত উপজেলা মান্দা। মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এমপি হওয়ার পর থেকে এ উপজেলার তেমন কোন উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়নি। দৃশ্যমান উন্নয়ন বলতে মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, মান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ঠাকুর মান্দা শীব নদীর উপর ব্রীজসহ কিছু স্কুল কলেজ। এলাকাবাসি বলেন, এলাকার উন্নয়ন না হলেও উন্নয়ন হয়েছে মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ও তার আর্শীবাদপুষ্টদের।
জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল। কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় মান্দাবাসীদের বিস্তর অভিযোগ। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের গত একযুগের অধিক সময় থেকে কোন সম্মেলন হয়নি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতাদের বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে দলী নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে তেমন যোগাযোগ হয় না। অনেকটাই নিস্ক্রিয় অবস্থা উপজেলা আওয়ামীলীগের। নামে মন্ত্রী হলেও সকল কার্যক্রম করেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এমাদাদুল হক মোল্লা। এমন অভিযোগ কিছু দলীয় নেতাকর্মীদের।
বয়সের ভারে মন্ত্রী অনেকটাই ন্যুব্জ ও অসুস্থ আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। মাঠে তার দলীয় কার্যক্রম অনেকটাই নিস্ক্রিয়। আর এ সুযোগে কিছু নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি দলের জন্য ত্যাগী, কর্মষ্ঠ, উচ্চ শিক্ষিত ও কর্মীবান্ধব একজন নেতাকে নৌকার মাঝি বানাতে জোর তৎপর চালাচ্ছেন।
নওগাঁর বৃহত্তম এ উপজেলার সবখানেই একই আলোচনা এবারের নির্বাচনে কে হচ্ছেন ধানের শীষ ও নৌকার মাঝি। সব দলের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনা আর সমালোচনায় মুখর এখন ভোটের মাঠ।
আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী, মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও সহ-সভাপতি ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা মাহবুব বাচ্চু।
বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সামসুল আলম প্রামাণিক, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহাবুব আলম চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: ইকরামুল বারী টিপু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহŸায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল মতিন এবং কেন্দ্রী কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আক্কাস আলী মোল¬া।
নওগাঁ- ৫ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক, আওয়ামীলীগ জয়ের ধারা ধরে রাখতে ও বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৫ আসনের প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। তারা নির্বাচনী মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। লবিং চলছে কেন্দ্রের সঙ্গে। এ আসনে আওয়ামীলীগে রয়েছে তিন এবং বিএনপি মনোনয়নে আশায় অর্ধডজন নেতাকর্মী। তবে আওয়ামীলীগের মতো বিএনপিও বলছে, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে জয়ী করতে দিনরাত কাজ করবেন।
সারা দেশের মধ্যে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে সুপরিচিত। আর জেলার মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কাছে এটিও ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। বর্ষিয়ান নেতা আব্দুল জলিলের চমকপ্রদ ভূমিকার কারণেই নওগাঁয় আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই এ নেতার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তিনি ত্যাগ, ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছেন সর্বসাধারনের মন। তার নিরহংকার আর নিষ্ঠা ও আদর্শের কাছে প্রতিদ্ব›দ্বীরা হেরে যান এমনটাই মনে করেন নেতাকর্মীরা। সকল ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বঙ্গন্ধু জন্মদিন, জাতীয় ও শোক দিবসে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের বাড়িই আগের মতোই কিছুটা নওগাঁর রাজনীতিতে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই সময়গুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই বাড়িতে আসেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সদর আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে যে যার মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৫ আসন গঠিত। ১৯৯১ এবং ৯৬ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন আলহাজ মো. শামসুদ্দিন আহমেদ। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল। ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন আব্দুল জলিল। আর এ সময়ের মধ্যে নওগাঁর অনেক উন্নয়ন হয়। ২০১৩ সালে ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল জলিল। তার অবতর্মানে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জেলা শাখার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। এ সময় দলকে সাংগাঠনিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন। উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা মনে করেন, আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর আ’লীগের দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি জলিল লীগ এবং অপরটি আওয়ামীলীগ (মালেক)। আর এ কারণে অনেক নেতাকর্মী আজ অবহেলিত ও পদচ‚ত্য হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দলীয় নেতৃবৃন্দ বিভক্তির কথা স্বীকার করেন না।
এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এমপি, আব্দুল জলিলের ছেলে জেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও জেলার ইয়াং বাংলা অর্গানাইজার ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ পৌর আ’লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ দল থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
অপরদিকে, জেলা বিএনপিতে চরম কোন্দল রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের ভেতর গ্রæপিং অনেকটাই দৃশ্যমান। প্রতিক‚ল পরিস্থিতির মধ্যেও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ ও নওগাঁ পৌরসভা বিএনপির দখলে। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন। বিভিন্ন আন্দোলনের সময় পুলিশের বাধায় অধিকাংশ পন্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পুলিশী মামলা, ধরপাকড় ও বাধায় বেশ কনঠাসায় রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন তুলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি নওগাঁ পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজমুল হক সনি, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন।
এছাড়াও এ আসন থেকে নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইফতারুল ইসলাম বকুল, জাসদের (ইনু) পক্ষ থেকে জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ হোসেন মুরাদ মনোনয়ন তুলেছেন।
নওগাঁ- ৬ এ বিভক্তি আ’লীগ, বিএনপিতে নতুন চমক আলমগীর করিব
জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ৫১ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। এ দুই উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে চেষ্টা আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের। কিন্তু দলীয় কোন্দল সে পথে বাধা হয়ে উঠেছে। একই সাথে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি প্রার্থীরা।
এ আসনে সাংসদ ইসরাফিল আলমের বিরুদ্ধে দুই উপজেলার বেশিভাই নেতা কর্মী। অন্যদিকে, বিএনপিতে দুই জন প্রার্থী থাকলেও হঠাৎ করে বিগত বিএনপি-জোট সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কেনায় নতুন চমকের সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়নপত্র ?
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের শাসন আমলে এ দুই উপজেলা ‘রক্তাক্ত’ জনপদ এলাকা হিসেবে পরিচিত হয় বিশ্বে। আতঙ্কের অপর নাম সর্বহারা ও বাংলাভাইয়ের অধ্যুষিত এলাকা।
জানা গেছে, সর্বহারারা ১৯৯৮সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ এলাকার প্রায় ৫৮ জনকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে বেশি ভাগই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) উত্থান ঘটে।
১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয় হন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান (১৯৮৬ সাল)। ২০০১ সালে পুনরায় আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বর্তমান এমপি ইসরাফিল আলম।
২০০৬-০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। এতে আলমগীর কবির ও তার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হন বিএনপি নেতাকর্মী। বিএনপি অবিভাবকহীন হয়ে এ আসনে বিএনপির কান্ডরি করতে এ সময় রাণীনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনপির কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যোগ দেন আলমগীর কবিরের আপন ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পর্যায় পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে আনতে আনোয়ার হোসেন বুলু তার আপন বড় ভাই আলমগীর কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বুঝিয়ে দেন আলমগীর কবিরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এরপর থেকে বিএনপির হাল ধরেন আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর তিনি দলকে সু-সংঘটিত করেছেন।
আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর আর কোন দলের সাথে যুক্ত হননি তিনি। তার অবস্থান একেবারেই নিস্ক্রিয়। হঠাৎ করে আলমগীর কবির বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এতে এ আসনের জনসাধারণের মধ্যে চমক সৃষ্টি হয়েছে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রশ্ন জেগেছে তাহলে, বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপত্র ?
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই বতর্মানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হন ইসরাফিল আলম এমপি।
মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে ছিল। প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর ক্ষমতাবস্থায় জেএমবির জন্ম হয়। ২০০৮ সালে দখলে নেয় আওয়ামীলীগ।
কৃষিতে অসামান্য অবদান রাখায় গত ১ ফেব্রæয়ারী রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪২৩ এ ভ‚ষিত হন ইসরাফিল আলম এমপি।
এ আসনে আ’লীগের মধ্যে বিভক্ত আছে। যার এক অংশে ইসরাফিল আলম এমপি। অপরদিকে আছেন, রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিল্পপতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক । আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় ইসরাফিল গ্রæপের সমর্থকদের সাথে হেলাল ও অন্যদের গ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ আসন থেকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন- জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এমপি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ রফিকুল ইসলাম ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী।
বিএনপি থেকে থেকে মনোনয়ন কিনেছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, তার ভাই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সহসাধারণ সম্পাদক এছাহক আলী।
এছাড়া জাতীয় পার্টির রাণীনগর সভাপতি কাজী গোলাম কবির, জেলা জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন কিনেছেন।
১৯৮৪ এর ১ মার্চ-এ নওগাঁ মহকুমা বা জেলা গঠিত। এ জেলায় ১১টি উপজেলায় রয়েছে ৯৯টি ইউনিয়ন পরিষদ। ১১ উপজেলায় মিলে ছয়টি সাংসদীয় আসন গঠিত। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে নওগাঁর ছয়টি আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়নসহ অন্যান্যে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মনোনয়নপত্র তুলেছেন। মানুষের মুখে মুখে আলোচিত বিষয় হচ্ছে নির্বাচন ও প্রার্থীদের কর্মকান্ড নিয়ে। নওগাঁ ৬টি আসনটিই বিএনপি’র ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। তবে গত ২০০৮ সাল থেকে ৬টি আসনই দখলে রয়েছে আওয়ামীলীগের।
সচেতনরা জানিয়েছেন, প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের নওগাঁয় আওয়ামীলীগ ধরে রাখবে তাদের আধিপত্ত ! আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল হলে আবারও বিএনপি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত হবে। নওগাঁয় এক আসন ছাড়া বাঁকি আসনে আওয়াগীমীলীগের নেতৃত্বের অভাবে একাধিক প্রার্থী মনোনয়ন কিনেছেন। বিএনপিতেও প্রতিটি আসনেই একাধিক প্রার্থী।
নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিটি ইউনিয়নে ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা কর্মী সভা ও দুটি ঈদে ইফতার ও শুভেচ্ছার মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সাথে কুশল বিনিময় করেছেন। মাঠ দখল রেখে এবং মনোনয়নপত্র নিশ্চিত করতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন কেন্দ্রে। বসে নেই ছোট দলগুলোও।
শান্তিপ্রিয় জেলায় এ দিকে সরকার দলীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে গ্রæপিং, ভূমি দখল, টেন্ডরবাজি, বালু মহল দখল, ভাগবাটোয়ারা নিয়ে দ্ব›দ্ব, মারাপিট, নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি অফিস ভাংচুর, সরকারি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়ে দলীয় নেতা-কর্মীদের দিয়ে মানববন্ধন-প্রতিবাদ সমাবেশ পালন করা, সাংবাদিকদের মারপিট-লাঞ্ছিত, বিএনপি-জামায়াত, সর্বহারা-জেএমবি সদস্যদের দলীয় পদ দেয়া, হাইব্রিট নেতাদের কর্মকান্ডে অনেক ত্যাগী নেতাদের নিষ্কিয় হওয়া, বহিষ্কার, নিজেদের মধ্যে মামলা মোকদ্দমা লেগেই রয়েছে। আবার কিছু নির্বাচনী এলাকায় তেমন উন্নয়ন নেই বললেই চলে। এতে আওয়ামীলীগ সরকারের হাজারো উন্নয়নের মধ্যে ভাবমূর্তী বেশ ক্ষুন্ন হয়েছে।
আওয়ামীলীগ সরকারের রাস্তা-ঘাট, বিদ্যুৎ ব্যবস্থা, স্কুল-কলেজ স্থাপন, ব্রিজ নির্মাণসহ ব্যাপক উন্নয়ন থাকলেও বিএনপি-জামায়াত, সর্বহারা-জেএমবি সদস্য, নেতাদের বিভিন্ন অনৈতিক কর্মকান্ডে দলীয় নেতা-কর্মীদের কর্মকান্ডে বিভেদ সৃষ্টি ও সরকারের ভাবমূর্তী নষ্ট হয়েছে। অধিকাংশ নেতাকর্মীদের ভয়ে সাধারণ ভোটার মুখ না খুললেও ভোটের মাধ্যমে জবাব দিয়ে দিবে এমনটিই জানা গেছে।
নওগাঁবাসি সংশ্লিষ্ট ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, জেলার অধিকাংশ সাংসদদের এসব কর্মকান্ডে জনগণ তাদের কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। দলের নীতিনিধারক থেকে ‘স্বচ্ছ ও জনপ্রিয়’ ব্যক্তিদের মনোনয়ন দিতে ভুল করলে আবারও বিএনপির দখলে চলে যাবে নওগাঁয় আওয়ামীলীগের দখলে থাকা অধিকাংশ আসন। আবার তরুণ ও যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তুলতে না পারলে আগামীতে নওগাঁয় আওয়ামীলীগ তাদের নেতৃত্ব হারিয়ে ফেলবে।
অপরদিকে, বিএনপি দলীয় অফিসে দলীয় সাবেক জেলা বিএনপি’র সভাপতি শামছুজ্জোহা খান এমপিসহ নেতা-কর্মীদের মারপিট করে আহত করা, ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় বিএনপির বেশ কয়েক জনকে ‘আওয়ামীলীগ নেতাদের এজেন্ট’ হিসেবে চিহ্নিত করে দল থেকে বহিষ্কার করা। এখানেই বিএনপি দলীয় নেতাকর্মীদের অভ্যন্তরীন কোন্দল স্পষ্ট দেখা যায়। বিএনপি নেতাকর্মীদের ‘আওয়ামীলীগ নেতাদের এজেন্ট’ হিসেবে ঘোষিতদের দলে তাদের ফিরিয়ে দেয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণপদ। এ ছাড়া ২০১৪-১৫ সালে সারা দেশে জামায়াত-বিএনপি’র “জ্বালাও-পোড়াও” নীতির শুরু করে। বাদ যায়নি শান্তিপ্রিয় নওগাঁ। শুরু হয় অগ্নি-সংযোগ, পেট্রোল বোমা, ভাংচুর, আন্দোলন-সমাবেশ। মুক্তির মোড়, দয়ালে মোড়ে পুলিশ-বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে মামলা হয়। এতে বিএনপি শতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মমলা দায়েরের পর বিএনপির দলীয় কর্মসূচী কিছুটা স্থবির হয়ে পরে। এতে নেতা-কর্মীসহ সাধারণ মানুষ বিএনপি থেকে দূরে সরে যায়। নতুন করে জেলা বিএনপি কমিটি গঠন ও নতুন সদস্য ভর্তি শুরুর কার্যক্রমের মধ্যে দিয়ে আবারও চাঙ্গা হয়ে উঠেছে বিএনপি। আসনগুলোকে আওয়ামীলীগের ধরে রাখা আর বিএনপি’র পু:নরুদ্ধার নির্ভর করছে প্রার্থী নির্বাচনের উপর। তবে পুলিশী বাধায় বেশি ভাগই আন্দোলন সংগ্রাম করতে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি।
নওগাঁ-১ এ আওয়ামীলীগে এক, বিএনপিতে একাধিক
নিয়ামতপুর-পোরশা-সাপাহার এ তিন উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-১ আসন গঠিত। এ আসন এক সময় বিএনপি শক্ত অবস্থান থাকলেও এখন আর সে অবস্থা নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে তিনবারের নির্বাচিত বিএনপির সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরীকে পরাজিত করে বিপুুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হন আওয়ামীলীগের বর্ষীয়ান নেতা সাধন চন্দ্র মজুমদার। এরপর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও সাধন চন্দ্র মজুমদার জয়লাভ করেন। দীর্ঘ ১০ বছর সাংসদ থাকায় সাধন চন্দ্র মজুমদার নির্বাচনী এলাকায় তৃণমূল থেকে নেতাকর্মী সু-সংগঠিত ও এলাকার রাস্তাঘাট, বিদ্যুৎ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন।
এ আসনে বিএনপি মনোনয়ন প্রত্যাশী হওয়ায় তাদের মধ্যে বিভক্ত ও নেতাকর্মী সাংগঠনিক অবস্থা দূর্বল হওয়ার কারণে এলাকায় বিএনপির সংগঠিত সু-আন্দোলন কমে গেছে। এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত থাকলেও নবম সংসদ নির্বাচনে তা হাতছাড়া হয়ে যায়। এ আসনে ১৯৯১ সালে জয়লাভ করে বিএনপি। এরপর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত দখলে ছিল বিএনপির।
বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ থেকে গভীর নলকূপের মাধ্যমে জমিতে একাধিক ফসল উৎপাদন হচ্ছে। সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদারের হাত ধরে শিক্ষা, যোগাযোগ ব্যবস্থা ও বৈদ্যুতিক ব্যবস্থায় এখন উপজেলাগুলোতে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে।
এ আসনে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন একজন। তিনি জেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নওগাঁ-১ আসনের সংসদ সদস্য সাধন চন্দ্র মজুমদার।
জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও পোরশা উপজেলা সভাপতি আকবর আলী (কালু) মনোনয়নপত্র উঠালেও জোটগত নির্বাচন হলে তিনি আওয়ামী লীগ প্রার্থীর পক্ষে কাজ করবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
বিএনপি থেকে তুলেছেন, নিয়ামতপুর উপজেলা শাখার সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. ছালেক চৌধুরী, জেলা শাখার সহ-সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, নিয়ামতপুর উপজেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় কমিটির তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সহ-সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহ খালেদ চৌধুরী পাহিন, সাপাহার উপজেলা বিএনপির সভাপতি অধ্যক্ষ আব্দুন নূর ও পোরশা উপজেলা বিএনপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রদল নেতা লায়ন মাসুদ রানা এবং রাজশাহী মহানগর বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং পোরশা উপজেলার বাসীন্দা শাহ্ আহম্মদ মোজামে¥ল চৌধুরীসহ ১২ জন।
ইসলামি আন্দোলন থেকে পোরশা উপজেলার হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমানও তাদের দল থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
নওগাঁ-২ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক
জেলার ধামুইরহাট ও পতœীতলা এ দুই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-২ আসন গঠিত। আসনটি জাতীয় সংসদের ৪৭ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। আগামী একাদশ জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা নিজেদের প্রচার প্রচারণা করতে এলাকায় বিভিন্ন শুভেচ্ছা স্বরুপ ব্যানার ও পোস্টার লাগিয়েছেন। পতœীতলা ও ধামইরহাট উপজেলা প্রাচীন নিদর্শনে ভরপুর। ধামইরহাটে রয়েছে জাতীয় উদ্যান আলতাদীঘি-শালবন, মুসলিম নিদর্শণ মাহী সন্তোষ (মুসলিম শাসকের টাঁকশাল ছিল), ভীমের পান্টি (গুরুর স্তম্ভ), জগদ্দল পদ্ম মহাবিহার, আগ্রাদ্বীগুন মহাবিহার। পতœীতলায় রয়েছে দিবর দীঘি ও দিব্যক জয়স্তম্ভ¢সহ নানা নির্দশণ।
এক সময় বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল এ দুই উপজেলা। এখন দলটির সব কার্যক্রম ও কর্মসূচি তিনটি ব্যানারে পরিচালিত হচ্ছে বলে জানা গেছে। ফলে সাংগঠনিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া বিএনপির অনেক সুবিধাভোগী নেতা-কর্মীই এখন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাঁধে ভর করে চলছেন তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ। আর এ ভর করা নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জাতীয় সংসদের হুইপ শহীদুজ্জামান সরকারের সঙ্গে আঁতাত করে চলছেন।
এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক শামসুজ্জোহা খানের কারণে এ আসনের ভাঙ্গন সৃষ্টি হওয়ার কারণে এ আসনে বিএনপির পরাজয় হয়েছে বলে জানিয়ে স্থানীয়রা। বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ আসনে আবার বিএনপিতে নিয়ে আসার চেষ্টায় নেতাকর্মীরা। তাই আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনে চ্যালেঞ্জের মুখেই পড়তে হবে ক্ষমতাসীনদের।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বর্তমানে জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার এমপি দল থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিএনপির শামসুজ্জোহা খানকে পরজিত করে প্রথমবার নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৬ ও ২০০১ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন শামসুজ্জোহা খান। এরপর তত্বাবধায়ক সরকার দ্বারা দেশ পরিচালিত হয়। সর্বশেষ ২০০৮ সালে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি ৪৯ হাজার ভোটে পরাজিত হলে হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার আবারো বিজয়ী হন। দশম সংসদ নির্বাচনে কোন প্রতিদ্ব›দ্বী না থাকায় হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার আবারও নির্বাচিত হন। এরপর তিনি সন্ত্রাস, দূর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু জামায়াত-বিএনপি ও কিছু হাতে গোনা হাইব্রিড নামধারী আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীদের নিয়ে সিন্ডিকেট গড়ে তোলেন। দলীয় ও স্থানীয়রা বলেন, এই সিন্ডিকের মাধ্যমে হুইপ স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ, বালু মহল দখল, টেন্ডরবাজিসহ বিভিন্ন অপকর্ম করে থাকেন।
জানা গেছে, ১৯৯৬ সালে নির্বাচিনে শামসুজ্জোহা খান বিজয়ী হলে সে সময় তিনি ক্ষমতাশীন দল আওয়ামীলীগের সঙ্গে গোপন আঁতাতে চলে যান বলে অভিযোগ আছে। এরপর তিনি অঢেল সম্পত্তির মালিক হলেও মামলা-হামলায় দলীয় নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়াননি। এ নিয়েই নওগাঁ জেলা সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরীর সঙ্গে প্রথম মতবিরোধ তৈরি হয়। এরপরই দু’জন পতœীতলা এবং ধামুইরহাটে আলাদাভাবে রাজনীতি চর্চা শুরু করেন। এখন পর্যন্ত সেই বিবাদ বিদ্যমানই আছে।
আগামী জাতীয় সাংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দুই দলের সম্ভাব্য মনোনয়ন প্রত্যাশীরা আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন ৫ জন।
তারা হলেন, জাতীয় সংসদের হুইপ অ্যাডভোকেট শহীদুজ্জামান সরকার, মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সিনিয়র সহ-সভাপতি মাহমুদ রেজা মেহেদী, কেন্দ্রীয় উপ-কমিটির সাবেক সহ-সম্পাদক প্রকৌশলী আখতারুল আলম, কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বিএম আব্দুর রশিদ ও জেলা আওয়ামীলীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক আমিনুল হক ।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শামসুজ্জোহা খান ও জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খাজা নাজিবুল্লাহ চৌধুরী।
তরুণ ও নতুন ভোটাররা প্রত্যাশা করছে নতুন নেতৃত্বের। তথ্য ও প্রযুক্তি নির্ভর সেবা পেতে তারা বিশ্বাসী। যারা দুর্নীতি, অনিয়ম, মাদক ও বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে আগামী দিনের নেতৃত্ব দিবেন তাদেরকেই তারা ভোট দিবেন।
নওগাঁ-৩ এ বিভক্ত আওয়ামী লীগ : বিএনপিতে মনোনয়ন লড়াই
বাণিজ্যিক ও সবজি এলাকা হিসেবে খ্যাত নওগাঁ-৩ (বদলগাছী-মহাদেবপুর) উপজেলা। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ৪৮ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। এ আসনে আওয়ামীলীগের মধ্যে বিভক্ত রয়েছে। অন্যদিকে বিএনপি থেকে একাধিক প্রার্থী হওয়ায় মনোনয়নপত্র কিনেছেন।
আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে চেষ্টা আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের। একই সাথে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি প্রার্থীরা। কিন্তু দলীয় কোন্দল সে পথে বাধা হয়ে উঠেছে। আর এ অবস্থায় জাতীয় পার্টি চেষ্টা করছে মহাজোট থেকে তাদের দলীয় প্রার্থিতা নিশ্চিত করতে।
জানা গেছে, ১৯৯১ সাল থেকে মরহুম ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নু একই আসন থেকে পর পর চার বার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এরপর ২০০১ সালে তিনি জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার নির্বাচিত হন। এরপর ২০০৮ সালে ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ডেপুটি স্পীকার আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুকে পরাজিত করে বর্তমানে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান ও মানবাধিকার কর্মী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নির্বাচিত হন। তিনি ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। তবে নির্বাচনে থাকাকালীন তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে যোগাযোগ রাখতেন না। এনিয়ে রাজনৈতিক কর্মকান্ডে দুই উপজেলার নেতা-কর্মীদের মাঝে ব্যাপক অসন্তোষ দেখা যায়। নির্বাচনে তিনি জনপ্রতিনিধি হলেও তার সহধর্মীনি মায়া চৌধূরী এ দুই উপজেলার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বার্ণিজ্য করে থাকেন। এনিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি হয়। ফলে দলে এক সময় ভাঙন সৃষ্টি হয়। নেতাকর্মীরা তার কাছ থেকে দূরে সরে পড়ে। আর এলাকাবাসীরা মনে করতেন, ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী নামেই ‘এমপি’। কাজে কর্মে তার তার সহধর্মীনি মায়া চৌধূরী এমপি। ফলে তৃণমূল নেতাকর্মীরা ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে বিকল্প প্রার্থী দেখতে চেয়েছেন। এরফলে মহাদেবপুর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের জনপ্রিয় চেয়ারম্যান ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমের পক্ষে অধিকাংশ নেতাকর্মী দল থেকে মনোনয়নপত্র চান। কিন্ত ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী দল থেকে মনোনয়ন দেয়ায় ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমকে স্বতন্ত্র হিসেবে জাতীয় নির্বাচনে প্রার্থী করে ভোটের কার্যক্রম শুরু করেন। সে সময় আওয়ামীলীগের সারাদেশে জয়জয়কার হলেও আওয়ামীলীগ মনোনিত প্রার্থী ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে ৩০ হাজার ভোটে পরাজিত করে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন স্বতন্ত ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম। নির্বাচিত হওয়ার প্রায় সাড়ে তিন বছর পর গত ৭ মে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমকে আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমানে তিনি জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম নিজেই নিয়োগ বাণিজ্য, সরকারি জায়গা দখল ও স্বজনপ্রীতির করার অভিযোগ আছে। নির্বাচনে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিমের কাছে পরাজিত হওয়ার পর দল থেকে ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীকে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) চেয়ারম্যান পদে বসিয়ে মূল্যায়ন করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামীলীগ থেকে এ দুজনের মধ্যে মনোনয়নের লড়াই হওয়ার কথা থাকলেও ঢাকঢোল পিটিয়ে তৃতীয় ব্যক্তির আগমণ ঘটেছে। তিনি হচ্ছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব বীর জনতার মঞ্চখ্যাত নেতা ও ক্লিন এমেজ হিসেবে পরিচিত মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর ওরুফে মঞ্জু। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম ও ড. আকরাম হোসেন চৌধুরীর মধ্যে চলছে অন্ত:দ্ব›দ্ব। এ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক পুলিশ সুপারের স্ত্রী সখিনা সিদ্দিক ও প্রকৌশলী মাহবুব-উল মানাফ শুভ।
এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ছলিম উদ্দীন তরফদার সেলিম, সাবেক সংসদ সদস্য বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. আকরাম হোসেন চৌধুরী, মহাদেবপুর শাখা আ’লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. জাহাঙ্গীর আলম আনছারী, বদলগাছী উপজেলা আ’লীগের উপদেষ্টা মন্ডলীর সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রনালয়ের সাবেক সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা এনামুল কবীর ওরুফে মঞ্জু, সাবেক পুলিশ সুপারের স্ত্রী সখিনা সিদ্দিক ও প্রকৌশলী মাহবুব-উল মানাফ (শুভ) দল থেকে মনোনয়ন তুলেছেন।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের সবাই নতুন মুখ। এর মধ্যে রয়েছেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক ছাত্র নেতা ও বদলগাছী থানা বিএনপির সভাপতি ফজলে হুদা বাবুল, জাতীয় সংসদের সাবেক ডেপুটি স্পীকার প্রয়াত আখতার হামিদ সিদ্দিকী নান্নুর ছেলে পারভেজ আরেফিন সিদ্দিকী জনি ও জনির মা নাসরিন আরা সিদ্দিকী, জেলা বিএনপির সদস্য রবিউল আলম বুলেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র নেতা আসফ কবীর চৌধুরী শত এবং ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক একেএম শফিকুল ইসলাম (শফিক)।
এ ছাড়াও জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-মহাসচিব ও নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি অ্যাডভোকেট তোফাজ্জল হোসেন মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
ভিআইপি নওগাঁ-৪ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক
জেলার সবচেয়ে বড় উপজেলা মান্দা। উপজেলা ১৪টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এটি নওগাঁ-৪ এবং জাতীয় সংসদের ৪৯ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা এলাকায় সক্রীয় রয়েছেন। এ উপজেলায় নির্বাচনে দুই দলের দু’ডজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুলেছেন। তবে উভয় দলের মধ্যে দলীয় কোন্দল এখানে বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আগামীতে কে মনোনয়ন পাবে তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। তবে যে যার মতো উপরে লবিং করে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। আর জেলার মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কাছে মান্দা ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত।
১৯৯১ সালে এ আসনে বর্তমান এমপি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী মাওলানা নাসির উদ্দিন জিহাদীর কাছে পরাজিত হন। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত পরপর তিনবার নিবার্চিত হন বিএনপির সামসুল আলম প্রামানিক। ২০০৮ সালের আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পান উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি সহসভাপতি আব্দুল লতিফ শেখ। স্বতন্ত্র থেকে মনোনয়ন নেন মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। সে সময় স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে প্রায় ২০ হাজার ভোটের ব্যবধানে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী বিএনপির মনোনীত সামসুল আলম ও আওয়ামীলীগ মনোনীত আব্দুল লতিফ শেখকে পরাজিত করে বিজয়ী হন মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। ওই নির্বাচনে আব্দুল লতিফ শেখ প্রায় ৩৬ হাজার ভোট পান। এরপর ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসাবে আবার মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক নির্বাচিত হন। এরকিছু পর তিনি বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী পদে ভ‚ষিত হন।
জেলার মধ্যে সবচেয়ে অবহেলিত উপজেলা মান্দা। মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক এমপি হওয়ার পর থেকে এ উপজেলার তেমন কোন উন্নয়ন লক্ষ্য করা যায়নি। দৃশ্যমান উন্নয়ন বলতে মান্দা শহীদ কামরুজ্জামান টেক্সটাইল ইন্সটিটিউট, মান্দা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স, ঠাকুর মান্দা শীব নদীর উপর ব্রীজসহ কিছু স্কুল কলেজ। এলাকাবাসি বলেন, এলাকার উন্নয়ন না হলেও উন্নয়ন হয়েছে মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিকের ও তার আর্শীবাদপুষ্টদের।
জেলার অন্যান্য উপজেলা থেকে উন্নয়নের দিক দিয়ে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। রাস্তাঘাটের অবস্থাও বেহাল। কাঙ্খিত উন্নয়ন না হওয়ায় মান্দাবাসীদের বিস্তর অভিযোগ। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের গত একযুগের অধিক সময় থেকে কোন সম্মেলন হয়নি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের বিভিন্ন পদে স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত নেতাদের বসানো হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে দলী নেতাকর্মীদের মধ্যে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে। তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে তেমন যোগাযোগ হয় না। অনেকটাই নিস্ক্রিয় অবস্থা উপজেলা আওয়ামীলীগের। নামে মন্ত্রী হলেও সকল কার্যক্রম করেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি এমাদাদুল হক মোল্লা। এমন অভিযোগ কিছু দলীয় নেতাকর্মীদের।
বয়সের ভারে মন্ত্রী অনেকটাই ন্যুব্জ ও অসুস্থ আওয়ামীলীগের বর্ষিয়ান নেতা মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক। মাঠে তার দলীয় কার্যক্রম অনেকটাই নিস্ক্রিয়। আর এ সুযোগে কিছু নতুন মুখের আবির্ভাব ঘটেছে। আগামী নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ এ আসনটি দলের জন্য ত্যাগী, কর্মষ্ঠ, উচ্চ শিক্ষিত ও কর্মীবান্ধব একজন নেতাকে নৌকার মাঝি বানাতে জোর তৎপর চালাচ্ছেন।
নওগাঁর বৃহত্তম এ উপজেলার সবখানেই একই আলোচনা এবারের নির্বাচনে কে হচ্ছেন ধানের শীষ ও নৌকার মাঝি। সব দলের অংশগ্রহণমুলক নির্বাচনকে ঘিরে আলোচনা আর সমালোচনায় মুখর এখন ভোটের মাঠ।
আওয়ামীলীগের মনোনয়নপত্র কিনেছেন বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী মুহাম্মদ ইমাজ উদ্দিন প্রামাণিক, জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল বাকী, মান্দা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মান্নান ও সহ-সভাপতি ব্রহানী সুলতান মামুদ গামা এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মির্জা মাহবুব বাচ্চু।
বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন বিএনপির সভাপতি সাবেক এমপি সামসুল আলম প্রামাণিক, নওগাঁ জেলা বিএনপির সহসভাপতি মাহাবুব আলম চৌধুরী, জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা: ইকরামুল বারী টিপু, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক আহŸায়ক, বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি ও জেলা বিএনপির সদস্য আব্দুল মতিন এবং কেন্দ্রী কমিটির সিনিয়র সহসভাপতি ও জেলা বিএনপির সহসভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব আক্কাস আলী মোল¬া।
নওগাঁ- ৫ এ আওয়ামীলীগ ও বিএনপিতে একাধিক, আওয়ামীলীগ জয়ের ধারা ধরে রাখতে ও বিএনপি পুনরুদ্ধারে মরিয়া
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নওগাঁ-৫ আসনের প্রার্থীদের তোড়জোড় শুরু হয়ে গেছে। তারা নির্বাচনী মাঠ গরম করার চেষ্টা করছেন। লবিং চলছে কেন্দ্রের সঙ্গে। এ আসনে আওয়ামীলীগে রয়েছে তিন এবং বিএনপি মনোনয়নে আশায় অর্ধডজন নেতাকর্মী। তবে আওয়ামীলীগের মতো বিএনপিও বলছে, দল যাকে মনোনয়ন দিবে তাকে জয়ী করতে দিনরাত কাজ করবেন।
সারা দেশের মধ্যে সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিল নামে সুপরিচিত। আর জেলার মধ্যে স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্নেষকদের কাছে এটিও ভিআইপি আসন হিসেবে পরিচিত। বর্ষিয়ান নেতা আব্দুল জলিলের চমকপ্রদ ভূমিকার কারণেই নওগাঁয় আওয়ামীলীগের শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় নেতাকর্মীরা মনে করছেন। পাশাপাশি দলমত নির্বিশেষে সবার কাছেই এ নেতার গ্রহণযোগ্যতা ছিল। তিনি ত্যাগ, ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছেন সর্বসাধারনের মন। তার নিরহংকার আর নিষ্ঠা ও আদর্শের কাছে প্রতিদ্ব›দ্বীরা হেরে যান এমনটাই মনে করেন নেতাকর্মীরা। সকল ধর্মের ধর্মীয় অনুষ্ঠান, বঙ্গন্ধু জন্মদিন, জাতীয় ও শোক দিবসে প্রয়াত জননেতা আব্দুল জলিলের বাড়িই আগের মতোই কিছুটা নওগাঁর রাজনীতিতে কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। এই সময়গুলোতে হাজার হাজার নেতাকর্মী ও সমর্থকরা এই বাড়িতে আসেন এবং শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। সদর আসনের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা দলীয় মনোনয়ন নিশ্চিত করতে যে যার মতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন।
একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে নওগাঁ সদর উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৫ আসন গঠিত। ১৯৯১ এবং ৯৬ সালে এ আসনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে বিজয়ী হন আলহাজ মো. শামসুদ্দিন আহমেদ। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন প্রয়াত নেতা আব্দুল জলিল। ২০০১ সাল থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত এ আসনের এমপি ছিলেন আব্দুল জলিল। আর এ সময়ের মধ্যে নওগাঁর অনেক উন্নয়ন হয়। ২০১৩ সালে ৬ মার্চ সিঙ্গাপুরে মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন আব্দুল জলিল। তার অবতর্মানে নওগাঁয় আওয়ামী লীগের হাল ধরেন জেলা শাখার দীর্ঘদিনের সাধারণ সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক। এ সময় দলকে সাংগাঠনিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলেছেন। উপনির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় তিনি প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে তিনি জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলামকে হারিয়ে আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও স্থানীয়রা মনে করেন, আব্দুল জলিলের মৃত্যুর পর আ’লীগের দু’দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। একটি জলিল লীগ এবং অপরটি আওয়ামীলীগ (মালেক)। আর এ কারণে অনেক নেতাকর্মী আজ অবহেলিত ও পদচ‚ত্য হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে দলীয় নেতৃবৃন্দ বিভক্তির কথা স্বীকার করেন না।
এ আসনে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক এমপি, আব্দুল জলিলের ছেলে জেলা আ’লীগের যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক ও জেলার ইয়াং বাংলা অর্গানাইজার ব্যারিস্টার নিজাম উদ্দিন জলিল জন, নওগাঁ পৌর আ’লীগের সভাপতি দেওয়ান ছেকার আহমেদ শিষাণ দল থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন।
অপরদিকে, জেলা বিএনপিতে চরম কোন্দল রয়েছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে দলের ভেতর গ্রæপিং অনেকটাই দৃশ্যমান। প্রতিক‚ল পরিস্থিতির মধ্যেও নওগাঁ সদর উপজেলা পরিষদ ও নওগাঁ পৌরসভা বিএনপির দখলে। তবে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দূর্নীতি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে যাওয়ার পর থেকে হাইকমান্ডের সিদ্ধান্তে বিএনপি নেতাকর্মীরা বিক্ষোভ, সমাবেশ, পথসভা ও লিফলেট বিতরণ করছেন। বিভিন্ন আন্দোলনের সময় পুলিশের বাধায় অধিকাংশ পন্ড হয়ে গেছে। এ ছাড়াও পুলিশী মামলা, ধরপাকড় ও বাধায় বেশ কনঠাসায় রয়েছে বিএনপির নেতাকর্মী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন তুলেছেন, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য লে. কর্ণেল (অব.) আব্দুল লতিফ খান, জেলা বিএনপির সভাপতি নওগাঁ পৌর মেয়র আলহাজ্ব নজমুল হক সনি, সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম ধলু, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহমান রিপন।
এছাড়াও এ আসন থেকে নওগাঁ জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক ইফতারুল ইসলাম বকুল, জাসদের (ইনু) পক্ষ থেকে জেলা জাসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আজাদ হোসেন মুরাদ মনোনয়ন তুলেছেন।
নওগাঁ- ৬ এ বিভক্তি আ’লীগ, বিএনপিতে নতুন চমক আলমগীর করিব
জেলার রাণীনগর ও আত্রাই উপজেলা নিয়ে নওগাঁ-৬ আসন গঠিত। এ আসনটি জাতীয় সংসদের ৫১ নম্বর নির্বাচনী এলাকা। এ দুই উপজেলায় নির্বাচনী আমেজ বইতে শুরু করেছে। আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসনটি ধরে রাখতে চেষ্টা আওয়ামীলীগ প্রার্থীদের। কিন্তু দলীয় কোন্দল সে পথে বাধা হয়ে উঠেছে। একই সাথে হারানো আসন পুনরুদ্ধারে মরিয়া বিএনপি প্রার্থীরা।
এ আসনে সাংসদ ইসরাফিল আলমের বিরুদ্ধে দুই উপজেলার বেশিভাই নেতা কর্মী। অন্যদিকে, বিএনপিতে দুই জন প্রার্থী থাকলেও হঠাৎ করে বিগত বিএনপি-জোট সরকারের সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কেনায় নতুন চমকের সৃষ্টি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন দলীয় মনোনয়নপত্র ?
সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের শাসন আমলে এ দুই উপজেলা ‘রক্তাক্ত’ জনপদ এলাকা হিসেবে পরিচিত হয় বিশ্বে। আতঙ্কের অপর নাম সর্বহারা ও বাংলাভাইয়ের অধ্যুষিত এলাকা।
জানা গেছে, সর্বহারারা ১৯৯৮সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত এ এলাকার প্রায় ৫৮ জনকে নৃসংশভাবে হত্যা করা হয়। এর মধ্যে বেশি ভাগই আওয়ামীলীগের নেতাকর্মী। ২০০৪ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে জামায়াতে মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি) উত্থান ঘটে।
১৯৯১ ও ৯৬ সালে বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে নির্বাচনে বিজয় হন সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক সাংসদ মুক্তিযোদ্ধা ওহিদুর রহমান (১৯৮৬ সাল)। ২০০১ সালে পুনরায় আলমগীর কবীর বিজয়ী হন। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন বর্তমান এমপি ইসরাফিল আলম।
২০০৬-০৭ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শেষের দিকে আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেন। এতে আলমগীর কবির ও তার পরিবারের উপর ক্ষিপ্ত হন বিএনপি নেতাকর্মী। বিএনপি অবিভাবকহীন হয়ে এ আসনে বিএনপির কান্ডরি করতে এ সময় রাণীনগর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বিএনপির কর্মী সমাবেশের আয়োজন করা হয়। যোগ দেন আলমগীর কবিরের আপন ছোট ভাই আনোয়ার হোসেন বুলু। এ সময় উপস্থিত নেতাকর্মী তার বিরুদ্ধে শ্লোগান দেন ও ক্ষিপ্ত হয়ে উঠেন। নেতাকর্মীদের তোপের মুখে পর্যায় পরিস্থিতি শান্ত ও নিয়ন্ত্রণে আনতে আনোয়ার হোসেন বুলু তার আপন বড় ভাই আলমগীর কবিরের কুশপুত্তলিকা দাহ করে বুঝিয়ে দেন আলমগীর কবিরের সাথে কোন সম্পর্ক নেই। এরপর থেকে বিএনপির হাল ধরেন আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর তিনি দলকে সু-সংঘটিত করেছেন।
আলমগীর কবির এলডিপিতে যোগ দেয়ার পর তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর আর কোন দলের সাথে যুক্ত হননি তিনি। তার অবস্থান একেবারেই নিস্ক্রিয়। হঠাৎ করে আলমগীর কবির বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এতে এ আসনের জনসাধারণের মধ্যে চমক সৃষ্টি হয়েছে এখন বিএনপি নেতাকর্মীদের প্রশ্ন জেগেছে তাহলে, বিএনপি থেকে কে পাচ্ছেন বিএনপির মনোনয়নপত্র ?
২০০৮ সালে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন পেয়ে বিপুল ভোটে বিজয়ী হন তৎকালীন ঢাকা মহানগর শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম। তার প্রতিদ্ব›দ্বী ছিলেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীরের ছোট ভাই বতর্মানে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আনোয়ার হোসেন বুলু। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় বিনা প্রতিদ্ব›দ্বীতায় নির্বাচিত হন ইসরাফিল আলম এমপি।
মূলত এ আসনটি চারবার বিএনপির অধীনে ছিল। প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর ক্ষমতাবস্থায় জেএমবির জন্ম হয়। ২০০৮ সালে দখলে নেয় আওয়ামীলীগ।
কৃষিতে অসামান্য অবদান রাখায় গত ১ ফেব্রæয়ারী রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বঙ্গবন্ধু কৃষি পুরস্কার-১৪২৩ এ ভ‚ষিত হন ইসরাফিল আলম এমপি।
এ আসনে আ’লীগের মধ্যে বিভক্ত আছে। যার এক অংশে ইসরাফিল আলম এমপি। অপরদিকে আছেন, রানীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী, নওগাঁ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, বড়গাছা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আলহাজ্ব আব্দুর রহমান, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা শিল্পপতি বিশিষ্ট সমাজ সেবক শেখ রফিকুল ইসলাম রফিক । আধিপত্ত বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রায় ইসরাফিল গ্রæপের সমর্থকদের সাথে হেলাল ও অন্যদের গ্রæপের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ আসন থেকে আওয়ামীলীগ থেকে মনোনয়ন ফরম কিনেছেন- জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ইসরাফিল আলম এমপি, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ওমর ফারুক সুমন, রাণীনগর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন হেলাল, শিল্পপতি ও সমাজসেবক শেখ রফিকুল ইসলাম ও রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা নওশের আলী।
বিএনপি থেকে থেকে মনোনয়ন কিনেছেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, তার ভাই কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আনোয়ার হোসেন বুলু, কেন্দ্রীয় তাঁতী দলের সহসাধারণ সম্পাদক এছাহক আলী।
এছাড়া জাতীয় পার্টির রাণীনগর সভাপতি কাজী গোলাম কবির, জেলা জাসদের (ইনু) সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইউসুফ আলী আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন কিনেছেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন