প্রতিনিধি নওগাঁ: নওগাঁর আদি বরেন্দ্র অঞ্চল পানির জন্য খাঁ খাঁ করছে। দীর্ঘ প্রায় দেড় মাস ধরে এ উপজেলায় কোন বৃষ্টিপাত না হয়ায় আমন ধান ক্ষেতসহ খাল বিল নদী-নালা পুকুরডোবা সবকিছু শুকিয়ে গেছে। ফলে এলাকার মুহাজার হাজার কৃষক আমন ধান ক্ষেত নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
আদি বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে খ্যাত ধামইরহাট উপজেলার প্রধান ফসল ধান, গম, আলু, সরিষাসহ অন্যান্য শাক সবজি। কৃষকরা জমিতে পানি সেচ দিয়ে ইরি বোরো ধানও রোপন করে। বর্তমানে এ অঞ্চলে সাধারণত বৃষ্টির পানি দিয়ে আমন ধান চাষাবাদ হয়। আমন ধান রোপনের সময় পর্যাপ্ত বৃষ্টিপাত না হলেও কৃষকগণ গভীর নলকূপের পানি সেচ দিয়ে ধান রোপন করে। পরবর্তীতে সঠিক পরিচর্যা ও সার কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ধানগাছগুলো সতেজ হয়ে উঠেছে। আষাঢ় শ্রাবণ বর্ষাকাল হলেও এবার তেমন বৃষ্টিপাত হয়নি। তারপরও ধানগাছগুলো লকলকে ও তরতাজা ভাব ছিল। তবে দির্ঘ সময় বৃষ্টিপাত না হওয়ায় কিছুটা ধানের ক্ষতি হতে পারে। এবার উপজেলায় ৮টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভায় ১৯ হাজার ৭শত ৯০ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষ করা হয়েছে। কৃষকরা উফশী জাত হিসেবে বেশি ভাগ জমিতে স্বর্ণা-৫ জাতের ধান রোপন করেছে। এছাড়া ব্রিধান-৩৪,৪৯,৫১,৫২,৫৬,৬২,৭১,৭২ এবং বিনা-৭ ও ১৭ জাতের ধান রোপন করেছে কৃষকগণ। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে,বিনা-১৭ জাতের ধান রোপন থেকে সর্বোচ্চ ১১৮ দিনের মধ্যে ধান কর্তন করা সম্ভব। এবার এ উপজেলা এ জাতের ধান রোপন করে ইতোমধ্যে ধান কর্তন করা হয়েছে এবং একর প্রতি ফলন হয়েছে ৬০-৬৫ মণ। এ ধানে পানি খরচ ৩০ ভাগ কম লাগে এবং বাদাম গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) এর আক্রমণ হয়না বললেই চলে। বর্তমানে অনাবৃষ্টির পাশাপাশি জমিতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। পৌরসভার অন্তর্গত হাটনগর গ্রামের কৃষক আবু সাঈদ বলেন,অনাবৃষ্টির কারণে অনেক টাকা খরচ করে জমিতে সেচ দিতে হচ্ছে। নেউটা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম বলেন,ধান গাছে বাদামী গাছ ফড়িং (কারেন্ট পোকা) পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কারেন্ট পোকা দমনে তাদেরকে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। মইশড় গ্রামের কৃষক দেলদার হোসেন বলেন,এবার ধানের ফলন ভালো হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে তবে শেষ মুর্হুতে অনাবৃষ্টি ও কারেন্ট পোকার কারণে ফলন কম হতে পারে। এব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো: সেলিম রেজা বলেন, কিছু দিন বৃষ্টি না হওয়ার কারণে আমন ধানের যাতে কোন ক্ষতি না হয় সেদিকে লক্ষে রেখে রবেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৩৫৭টি অগভীর নলকূপ চালু করা হয়েছে। বর্তমানে কৃষকদের চাহিদামত ক্ষেতে পানিসেচ প্রদান করা হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় এবার ধানে কারেন্ট পোকার আক্রমণ অনেক কম। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদেরকে এ বিষয়ে সচেতন করার লক্ষে পাড়া, মহল্লা, গ্রাম বাজার, হাট বাজারে ওঠন বৈঠক করা হয়েছে এবং হাজার হাজার লিফলেট বিতরণ করা হয়েছে। বর্তমানে এ উপজেলার আমন ক্ষেতে কারেন্ট পোকার আক্রমণ নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। আশা করা হচ্ছে প্রাকৃতিক কোন বিপর্যয় না হলে আমনের বাম্পার ফলনের সম্ভাবনা রয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন