আবু রায়হান রাসেল, নওগাঁ : নওগাঁয় অ্যাসিড নিক্ষেপ করে স্ত্রীর শরীর ঝলসে দেয়ায় দায়েরকৃত মামলার রায়ে স্বামীর যাবজ্জীবন (আমৃত্যু) কারাদন্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে আদালত স্বামীর ৫০ হাজার টাকা জরিমানা আদায়ের নির্দেশও প্রদান করেছে। মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় নওগাঁ’র জেলা ও দায়রা জজ এবং অ্যাসিড দমন ট্রাইব্যুনালের বিজ্ঞ বিচারক একেএম শহিদুল ইসলাম এই রায় প্রদান করেছেন।
দÐপ্রাপ্ত ওই ব্যক্তির নাম শহিদুল ইসলাম (৩১)। তিনি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার কালিগঞ্জ পাইকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
রায়ে বলা হয়েছে শহিদুল ইসলাম পূর্বপরিকল্পিতভাবে তাঁর স্ত্রী শামীমার শরীরে অ্যাসিড নিক্ষেপ করেছে। দীর্ঘ চিকিৎসা শেষে তিনি সুস্থ হলেও তাঁর শরীরের সৌন্দর্য হারিয়ে ফেলেন। সাক্ষীদের জবানবন্দি ও উভয় পক্ষের শুনানি শেষে অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আসামীকে যাবজ্জীবন অর্থাৎ আমৃত্যু কারাদÐাদেশ দেয়া হয়েছে।
নওগাঁ’র সরকারি কৌঁসুলি আব্দুল খালেক বলেন, এ মামলার একমাত্র আসামি অ্যাসিডদগ্ধ নারী শামীমা আক্তারের স্বামী শহিদুল ইসলাম। আসামির বিরুদ্ধে অ্যাসিড সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ আইনের ৫(ক) ধারায় রাষ্ট্রপক্ষ অপরাধ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে। অ্যাসিড নিক্ষেপের ঘটনায় গ্রেপ্তারের পর শহিদুল পুলিশ ও আদালতের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও দীর্ঘ শুনানি শেষে বিজ্ঞ বিচারক আসামীকে আমৃত্যু কারাদÐাদেশ দেন।
তিনি বলেন, আইন অ্যাসিড সন্ত্রাসের অভিযোগে আসামীকে মৃত্যুদÐের বিধান রয়েছে। কিন্তু অপরাধ সংঘটনের সময় আসামির বয়স (২৫ বছর) বিবেচনায় আদালত তাঁকে আমৃত্যু কারাদÐাদেশ দিয়েছেন। এ মামলার আসামির পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী ছিলেন এ্যাড. সিরাজুল ইসলাম।
আদালত ও মামলার বিবরণ সূত্রে জানা গেছে, আসামি শহিদুল ইসলাম অর্ধশিক্ষিত মানুষ। তিনি ছিলেন একজন হলুদ ব্যবসায়ী। পতœীতলা উপজেলার নজিপুর পৌরসভার মোকসেদুল ইসলামের মেয়ে শামীমা আক্তারের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পর শামীমা আরও পড়াশোনা করতে চায়। কিন্তু তাঁর স্বামী শহিদুল ইসলাম এর বিরোধীতা করে। এ নিয়ে তাঁদের দুজনের মধ্যে পারিবারিক কলহ সৃষ্টি হয়। শহিদুল ইসলাম পারিবারিক কলহের জেরে ২০১২ সালের ২০ মে রাতে নজিপুরে শ্বশুরবাড়িতে শয়নকক্ষে ঘুমন্ত স্ত্রীর গায়ে অ্যাসিড নিক্ষেপ করে। এতে শামীমার মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অংশ ঝলসে যায়। এ ঘটনায় শামীমার বাবা মোকসেদুল ইসলাম পর দিন পতœীতলা থানায় মামলা করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন