নওগাঁ প্রতিনিধি: অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরাতে লেবাননে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন শাহিনা বেগম (৪০)। গত ৯ বছর থেকে তিনি সেখানেই থাকতেন। এরমধ্যে তিনবার দেশে এসেছিলেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালে লেবাননে গিয়েছেন। সেখানে নিজেও কাজ করতেন এবং একটি বাসার একঘর ভাড়া নিয়ে আরো ১০/১২ জন বিভিন্ন দেশের নারী কর্মীদের রাখতেন বলে জানা গেছে। কিন্তু অভাবের সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরার আগেই তিনি খুন হন দূর্বত্তদের হাতে। গত ২৯ সেপ্টেম্বর শাহিনা পরিবারের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরদিন পর সুটকেসের ভিতর থেকে তার লাশ উদ্ধার করে লেবাননের প্রবাসিরা। ঘটনার পর থেকে শাহিনার পরিবারে চলছে শোকের মাতম। বাবা-মা ও স্বজনরা বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিকে হারিয়ে এখন অনেকটা পাগল প্রায় অবস্থা।
শাহিনা বেগম নওগাঁ শহরের সুলতানপুর মহল্লার আমজাদ হোসেনের মেয়ে। শাহিনা এক সন্তানের জনক। ছেলের নাম রাজু আহমেদ। গত ২০০২ সালে স্বামীর সাথে ছাড়াছাড়ি (তালাক) হওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে থাকতেন। এরপর বিদেশে গৃহকর্মী হিসেবে চলে যান।
শাহিনা বেগম লেবাননে খুন হওয়ার প্রতিবাদে তার হত্যার বিচার ও লাশ দেশে আনার দাবীতে নওগাঁয় মানববন্ধন করেছে সুজন- সুশাসনের জন্য নাগরিক নওগাঁ জেলা শাখা। মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁর আদালত চত্তরে এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে নিহত শাহিনা বেগমের বাবা-মা, আত্মীয়স্বজন সহ প্রায় শতাধিক নারী-পুরুষ অংশ নেয়।
সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক নওগাঁ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুন নবী বেলাল এর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন, জেলা কমিটির যুগ্ম সম্পাদক পারুল আক্তার, দপ্তর সম্পাদক হাসান আলী, নির্বাহী সদস্য ইঞ্জি: রেজোয়ান হোসেন গালিব, সুলতানপুর সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক শাহীন মন্ডল প্রমুখ। মানববন্ধনে শাহিনা বেগমকে নিমর্মভাবে হত্যার বিচার ও তার লাশ দ্রæত দেশে নিয়ে আসার দাবী করেন স্বজনরা।
নিহত শাহিনা বেগমের ছেলে রাজু আহমেদ বলেন, মা গৃহকর্মী হিসাবে লেবাননে ছিলেন। সেখানে একটি বাসার এক ঘর ভাড়া নিয়ে ১০/১২ জনকে নারী কর্মীদের রাখতেন। তারা বিভিন্ন বাসায় ক্লিনারের কাজ করত। কয়েকদিন আগে তাদের সাথে একটি বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছিল বলে মা জানায়। কিন্তু মাকে মেরে ফেলা তা বুঝতে পারেনি। বাসায় যে মহিলারা ছিল তারাই পরিকল্পনা করে আমার মাকে হত্যা করেছে। মা’র হত্যাকারীদের বিচার ও লাশ দ্রæত দেশে নিয়ে আসার জন্য সরকারের প্রতি দাবী জানান তিনি।
নিহতের বাবা আমজাদ হোসেন বলেন, সর্বশেষ ২০১৪ সালে গৃহকর্মী হিসাবে লেবাননে যায়। আমাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখত। গত ২৯ সেপ্টেম্বর আমাদের সাথে তার যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এর পরদিন সুটকেসের ভিতর থেকে মেয়ের লাশ উদ্ধার সে দেশের লোকেরা।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন