নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: বৈধ যান সিএনজিচালিত অটোরিকশা। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় চলছে অবৈধভাবে। এতে করে নওগাঁর সিএনজি মালিক ও চালকদের প্রতিনিয়ত হয়রানি স্বীকার হতে হচ্ছে। সেই সাথে গুনতে হচ্ছে টাকাও। দীর্ঘদিন থেকে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) থেকে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় এ ভোগান্তী পোহাতে হচ্ছে তাদের। সেই সাথে সরকার প্রতি বছর হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব। ভোগান্তী নিরসেন দ্রæত উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করছেন মালিক ও চালকরা।
নওগাঁ বিআরটিএ ও ট্রাফিক অফিসসহ বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ ২০১৪ সালে সিএনজি অটোরিকশা রেজিস্ট্রেশন হয়। তখন রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি’র সংখ্যা ছিল ৩০১ টি। অন্য জেলার রেজিস্ট্রেশনকৃত সিএনজি আছে ৭০টি। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন বন্ধ আছে। বর্তমানে সদর উপজেলায় অনিবন্ধীত সিএনজির সংখ্যা প্রায় ১ হাজার ১১টি ও জেলার বিভিন্ন উপজেলা গুলোতে আছে প্রায় ১ হাজারটি। সব মিলে জেলায় প্রায় ২ হাজারের মত সিএনজি চলছে লাইসেন্স ছাড়া অবৈধ ভাবে। আর সরকার হারাচ্ছে মোটা অংকের রাজস্ব।
শহরের রাস্তা-ঘাট আছে আগের মতোই বাড়ছে জনসংখ্যা। সেই সাথে বাড়ছে যানবাহনও। গত চার বছরে সিএনজির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে চারগুন। বিআরটিএ থেকে রেজিস্ট্রেশন বন্ধ থাকায় এ বৈধ যানকে অবৈধভাবে চালাতে বাধ্য হচ্ছেন চালক ও মালিকরা। অবৈধভাবে চালাতে গিয়ে প্রতিদিন বা মাসিক হিসেবে গুনতে হচ্ছে চাঁদা। আর এসব সিএনজি থেকে মাসিক চাঁদা উত্তোলনের জন্য সিএনজি মালিক ও শ্রমিকের পক্ষ থেকে কয়েকজনকে দেখভালের জন্য রাখা হয়েছে। মাস শেষে মোটা অঙ্কের চাঁদা উত্তোলন করা হয়। আর এ চাঁদার একটি অংশ চলে যায় রাজনৈতিক মহলের বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছে, সিএনজি’র শ্রমিক সংগঠন ও পুলিশ প্রশাসনের কাছে বলেও জানা গেছে। আবার পুরনো সিএনজিগুলোর এখন বডি ফিটনেসের অবস্থাও খারাপ। অনেক সিএনজির রোড পারমিটও নাই।
সিএনজি’র মালিক ইয়াছিন আলী বলেন, গত দুই বছর আগে দুইটি সিএনজি কিনেছি। বহু চেষ্টা করেছি রেজিস্ট্রেশন করার জন্য। কিন্তু নওগাঁ বিআরটিএ অফিস কোন রেজিস্ট্রেশন করে দিচ্ছেনা। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় প্রতিনিয়ত রাস্তায় হয়রানির স্বীকার হতে হয়। এছাড়া প্রতিদিন শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ৩০-৫০ টাকা চাঁদা গুনতে হয়। সিএনজি রেজিস্ট্রেশন না থাকায় বৈধ যানকে অবৈধ ভাবে চালাতে হচ্ছে। রেজিস্ট্রেশন থাকলে পুলিশের হাত থেকে মামলা হওয়া ও হয়রানি থেকে রক্ষা পেতাম। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছি।
নওগাঁ জেলা সিএনজি চালিক অটোরিক্সা ও টেম্পু মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল লতিফ বলেন, রেজিস্ট্রেশন থাক বা না থাক নওগাঁ থেকে বগুড়ায় গেলে রাস্তায় কয়েকটি পয়েন্টে প্রতিটি সিএনজিকে প্রায় ৮০ টাকা চাঁদা গুনতে হয়। এছাড়াও শহরের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় দশ-বিশ টাকা তো লাগেই। তবে পুলিশ প্রশাসনকে কোন চাঁদা দিতে হয়না। আমরা মাসিক যে টাকা আদায় করি সেটা পুলিশ ডিউটির জন্য প্রতিদিন যে তিনটি গাড়ি দেওয়া হয় তাতে তেল ও ড্রাইভার বাবদ খরচ করা হয়। এ বিষয়ে আরও জানতে চাইলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
নওগাঁ জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারন সম্পাদক ওমর ফারুক বলেন, আমরা শুধু আরটিসির সদস্য। আমাদের একার কোন ক্ষমতা নাই। ডিসি স্যার ও বিআরটিএ মিলে যে সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা সেটার সাথে একমত।
নওগাঁ পুলিশ পরিদর্শক (শহর ও যানবাহন) গোলাম সারোয়ার বলেন, ছোট এ শহরে প্রয়োজনের তুলনায় যানবাহন বেশি হয়ে গেছে। শহরের যানজট মুক্ত করতে নিয়ন্ত্রনহীন গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিনিয়ত মামলা হয়। এ ক্ষেত্রে ট্রাফিক পুলিশ কাজ করে ২০ শতাংশ এবং বিআরটিএ সহ অন্যরা কাজ করেন ৮০ শতাংশ। তিনি আরো বলেন, আমাদের নাম করে প্রতিটি সিএনজি থেকে টাকা উত্তোলন করা হয় বলে জানি। কিন্তু আমাদের কাছে কোন টাকা আসেনা। যা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন বলে দাবী করেন তিনি।
নওগাঁ বিআরটিএ সহকারী পরিচালক (ইঞ্জি:) এটিএম ময়নুল হাসান বলেন, সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে আমাদের কোন করনীয় নাই। আরটিসি (রোডস ট্রান্সপোর্টস কমিটি) এটি নিয়ন্ত্রন করেন। এ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক (ডিসি) স্যার। এছাড়া মালিক-শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, এলজিইডি নির্বাহী প্রকৌশলী, বিআরটিএ সহকারী পরিচালক ও বেসরকারি সদস্য আছেন। এ কমিটি পরিবহনের সব যানবাহন নিয়ন্ত্রন করে কোন সড়কে কোন গাড়ি চলবে। তবে আমরা সিএনজি রেজিস্ট্রেশনের পক্ষে। সিএনজি রেজিস্ট্রেশন চালু হলে সরকার রাজস্ব পাবেন।
নওগাঁ জেলা প্রশাসক ও আরটিসি কমিটির সভাপতি মো: মিজানুর রহমান বলেন, রেজিস্ট্রেশন চালু আছে। যদি কেউ রেজিস্ট্রেশন নিয়ে সমস্যায় পড়ে আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আইনগতভাবে সহায়তা প্রদান করব। এছাড়া অবৈধভাবে যারা যানবাহন চালান তাদের বিরুদ্ধে নিয়মিত ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন