নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি: মৎস্যমানব বলে খ্যাত মিজানুর রহমান চৌধুরী। তিনি দীর্ঘ সময় পানির নিচে অক্সিজেন না নিয়ে থাকতে পারেন। তার এ কৃতিত্বপূর্ন নৈপুণ্য প্রদর্শন করে নওগাঁবাসীকে দেখিয়ে এক প্রকার তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। নওগাঁর একটি স্থানীয় সামাজিক সংগঠন ‘এলকুশে পরিষদ’ এর ২৫ বছর পূর্তিতে মৎস্যমানবের ডুব প্রদর্শণ করা হয়। গত শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৪ টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টা পর্যন্ত নওগাঁ শহরের ড্যাফোডিলস স্কুলের পাশে গাঁজা সোসাইটি পুকুরে ডুব প্রদর্শনের আয়োজন করা হয়। পুকুরে সাঁতার প্রতিযোগিতা শেষে তিনি একটানা দুই ঘন্টা অক্সিজেন ছাড়াই পানির নিচে এ নৈপুণ্য প্রদর্শন করেন। তবে পানির নিচে বাঁশের একটি খুঁটিতে বাঁধা চেয়ারে দীর্ঘসময় বসে ছিলেন। কিছু সময় পর পর হাত উচু করে সবার দৃষ্টি কাড়ছিলেন এবং হাত তালি দিতে বলছিলেন। ডুবে থাকা অবস্থায় আগত অনেকেই টাকাসহ বিভিন্ন কিছু দিয়ে সম্মানিত করছিল। পানির থেকে ডাকা হলে তিনি বুঝতে পেরে হাত বাড়িয়ে দিতে টাকা নেন এবং করমর্দন করেন। আর চেয়ারে বসেই তিনি আপেল সহ অন্যান্য খাবার গ্রহন করেন। ডুব প্রদর্শণ দেখতে পুকুরের চারধারে কয়েক হাজার নারী-পুরুষ, শিশু ও বৃদ্ধের আগমণ ঘটে। এ উপলক্ষে সেখানে এক গ্রামীণ মেলা বসে। দীর্ঘ সময় মিজানুর রহমান চৌধুরীর পানিতে ডুবে থাকায় আগতদের মনে নানান প্রশ্ন দেখা দেয়। এনিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন কথা বলেন। অলৌকিক ক্ষমতা ছাড়া এতো সময় অক্সিজেন না নিয়ে কেউ পানির নিচে থাকতে পারবে না বলেও মন্তব্য করেন।
ডুব প্রদর্শণ শেষে সাতারুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ ও মিজানুর রহমান চৌধুরীকে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়। এসময় সংগঠনের সভাপতি অ্যাডভোকেট ডিএম আব্দুল বারীর সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, নওগাঁ জেলা প্রশাসক মো: মিজানুর রহমান, পুলিশ সুপার ইকবাল হোসেন, পরিষদের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য ওহিদুর রহমান, সাবেক অধ্যক্ষ শরিফুল ইসলাম খান, ডাক্তার ময়নুল হক, বিন আলী পিন্টু, রফিকুদ্দৌলা রাব্বি, মনোয়ার হোসেন লিটন, নাইচ পারভিন, বিষ্ণ কুমার দেবনাথ, সাধারন সম্পাদক এমএম রাসেল, জেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি কায়েস উদ্দিন, ড্যাফোডিলস স্কুলের অধ্যক্ষ মাহবুব আলম সানাসহ গণ্যমাণ্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
মৎস্যমানব মিজানুর রহমান চৌধুরী বলেন, দীর্ঘক্ষণ পানির নিচে ডুবে থাকলেও আজ পর্যন্ত কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। আমার ডুবে থাকা দেখে মানুষ আনন্দ পায়। জীবনে অনেক কিছুই পেয়েছি। এখন জনগণের সেবা করা এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত থেকে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কাজ করা। সেই সাথে ‘গিনেস বুকে’ নাম লেখানো এবং এক ডুব দিয়ে ইংলিশ চ্যানেল পার হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন।
মিজানুর রহমান চৌধুরীর সংক্ষিপ্ত জীবনি: চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলার অতিশ্বর গ্রামে চৌধুরী বাড়িতে ১৯৭১ সালের ১২ নভেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে তিনি দ্বিতীয়। ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়ে ২০১৪ সালে অবসর গ্রহণ করেন। বর্তমানে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মোহাম্মদপুর এআর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। ২০০০ সালের মে মাসে চাঁদপুরের মতলব উপজেলায় কচুয়া সরকারি হাইস্কুল মাঠ সংলগ্ন পুকুরে সর্বোচ্চ ৭২ ঘণ্টা পানিতে ডুবে থাকায় তাকে মৎস্যমানব আখ্যায়িত করা হয়। তিনি চৌধুরী ফাউন্ডেশন আতিশ্বর কচুয়া, চাঁদপুরের প্রতিষ্ঠাতা এবং জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা শিশনের সদ্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। চাঁদপুরে জন্মগ্রহন করলেও নানা দায়িত্ব পালন শেসে এখন তিনি কুমিল্লায় বসবাস করেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন