নওগাঁর আলোচিত সেই প্রতিবন্ধী স্কুলটির প্রতিষ্ঠার ৬ বছরেও মিলেনি সরকারের স্বীকৃতি

নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁর পোরশায় সম্পূর্ণ ব্যক্তি উদ্যোগে গড়ে তোলা ‘মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়’টি বর্তমানে এলাকায় ব্যাপক সাড়া জাগিয়েছে। বিদ্যালয়টি নানান সমস্যায় জর্জড়িত হলেও ২৫৪ জন বিভিন্ন প্রতিবন্ধী ছেলে মেয়ে শিক্ষা গ্রহন করছে এখানে। বিদ্যালয়টিতে ১৭জন শিক্ষক ও কর্মচারী বিনা বেতনে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটিতে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় সাংসদ সদস্যর কাছে থেকে সামান্য কিছু সাহায্য পেলেও প্রতিষ্ঠার ৬ বছরেও মিলেনি সরকারের স্বীকৃতি।


জানাগেছে, নওগাঁর পোরশা উপজেলার নিতপুর বাজারের মাষ্টারপাড়ার মৃত মোবারক হোসেনের ছেলে শাহজাহান আলী কয়েক বছর পূর্ব থেকে একটি প্রতিবন্ধী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান করার চিন্তা ভাবনা করে। এই চিন্তা ভাবনা থেকেই উপজেলার নিতপুর কপালির মোড়ে ২০১৩ সালে ১০ শতাংশ জমির উপর এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। তার বাবার নামেই ‘মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়’ নামকরন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে ইটের পাঁচটি আধাপাকা ঘর আছে। ঘরের জানালা, দরজা নেই। প্রতিষ্ঠানটিতে প্রধান শিক্ষকসহ বর্তমানে ১৭জন শিক্ষক ও কর্মচারী আছেন। পাঁচ বছর বয়স থেকে ২০ বছর বয়স পর্যন্ত সবধরনের প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের এখানে ভর্তি করানো হয়। বর্তমানে ২৫৪ জন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী পড়াশুনা করছেন। গড়ে প্রতিদিন ৭০-৮০জন ছাত্র ছাত্রী বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকে। ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে কোন বেতন ভাতা নেয়া হয় না। প্রয়োজনীয় খেলনা সামগ্রী, হুইল চেয়ার সংকট ও শ্রেনীকক্ষ না থাকার কারনে শিক্ষার্থীদের বারান্দায় বসে ক্লাস করতে হয়। স্কুলের একটি মাত্র গাড়ী থাকার কারনে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না।


বিদ্যালয়ের বেশ কয়েক জন ছাত্র-ছাত্রীর সাথে কথা বলে জানাগেছে, এই স্কুলে লেখাপড়া করে তারা বেশ সাচ্ছন্দবোধ করেন। এখানকার শিক্ষকরা তাদের খুব আদর যতœ করেন। তবে শ্রেনী কক্ষ, হুইল চেয়ার ও বেঞ্চ সংকটের কারনে অনেক শিক্ষার্থীদের মেঝেতে বসে ক্লাস করতে হয়। এতে করে অনেক শিক্ষার্থীর কষ্ট হয় এমনকি কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
বিদ্যালয়ে শিক্ষক ও কর্মচারী বৃন্দের সাথে কথা বলে জানাগেছে, প্রতিবন্ধী বাচ্চাদের পাঠদান করতে গিয়ে তাদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়। তারা তাদের মনমত কাজ করে যখন যেটা চায় সেটা না পেলে কান্নাকাটি করে মারধুর করে। বিদ্যালয়েন নানান সংকটের মধ্যেও তারা সেচ্ছায় পাঠ দান করে যাচ্ছেন। কোন প্রকার বেতন ভাতা না থাকার কারনে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মচারীরা।


মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মওদুদ আহম্মেদ বলেন, স্কুলে কোন প্রকার থেরাপি রুম, যন্ত্রপাতি না থাকার কারনে আমরা একটা বাচ্চাকে সঠিক সেবা দিতে পারছিনা। বর্তমানে ২৫৪জন প্রতিবন্ধী ছাত্র ছাত্রীর আশ্রয়স্থল হয়ে পড়েছে স্কুলটি। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন অবকাঠামোগত কিছু সহযোগিতা করেছেন। বাঁকী যাবতীয় খরচ বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সংগ্রহ করে চালানো হয়। স্কুলটি সরকারের স্বীকৃতিসহ জাতীয় করনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করছেন তিনি।


পোরশা উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কয়েকজন প্রতিবন্ধীকে ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন উপজেলা সমাজসেবা অফিস। তবে স্কুলটির স্বীকৃতি বিষয়ে তেমন কিছু জানেন না বলে জানালেন তিনি।
পোরশা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হোসাইন মুহাম্মদ আল-মুজাহিদ বলেন, আমি নতুন যোগদান করার পর জানতে পারি এখানে মোবারক হোসেন প্রতিবন্ধী বিদ্যালয় নামে একটি ব্যতিক্রম ধর্মী প্রতিষ্ঠান রয়েছে। আমি সরেজমিন পরিদর্শন করে দেখেছি বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন সমস্যায় জর্জড়িত রয়েছে। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করছি যে সমাস্যাগুলো রয়েছে তা সমাধান করে প্রতিষ্ঠানটি যাতে সুন্দর ভাবে চলতে পারে তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার।


শিক্ষকদের প্রত্যাশা এক সময় এই প্রতিষ্ঠানটি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হবে। এই আশায় বুক বেঁধে কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা ছাড়াই নিরলস শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন তারা। তবে সচেতন মহলের দাবী অচিরেই এই প্রতিবন্ধী বিদ্যালয়টি জাতীয় করণের।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget