নওগাঁ ও মান্দা প্রতিনিধি: নওগাঁর মান্দা উপজেলার কালিকাপুর ইউনিয়নের ‘চকগোবিন্দ আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ে’ দীর্ঘদিন থেকে ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় ভেঙে পড়েছে শিক্ষা ব্যবস্থা। এতে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মভাবে বিঘœ হচ্ছে। সেই সাথে নিয়মিত বিল বেতন পেতেও দূর্ভোগে পড়তে হচ্ছে শিক্ষকদের। তবে এসবের মূল কারণ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুনকেই দায়ী করছেন অন্যান্য শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ এনে বৃহস্পতিবার বিদ্যালয়ের মাঠে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর একটি অভিযোগও দেয়া হয়েছে। দ্রæত পূর্ণাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবী জানিয়েছেন তারা।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে ৬ষ্ঠ থেকে দশম শ্রেনী পর্যন্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২৪ জন। এরমধ্যে ছাত্র ১৭০ জন ও ছাত্রী ১৫৪ জন। শিক্ষক আছে মোট ১০ জন। এরমধ্যে বিজ্ঞানে দুইজন, মানবিকের পাঁচজন, ইসলামি শিক্ষা একজন, কম্পিউটার শিক্ষা একজন শিক্ষক ও ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। তবে শিক্ষার্থীর তুলনায় শিক্ষক পর্যাপ্ত নয়।
২০১৩ সালে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব নেন ফাতেমা খাতুন। পূর্নাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটির দায়িত্ব শেষ হলে ২০১৪ সাল থেকে অ্যাডহক কমিটি শুরু হয়। এভাবে একের পর এক অ্যাডহক কমিটি দিয়ে বিদ্যালয় চলতে থাকে। এরপর থেকেই বিদ্যালয়ের নিয়ম শৃঙ্খলা ভাঙতে শুরু করে। প্রধান শিক্ষক ইচ্ছেমতো বিদ্যালয় ছুটি ঘোষণা করেন। শিক্ষকরাও বিদ্যালয়ে আসলেও ঠিকমতো পাঠদান করেন না। এছাড়া বিদ্যালয়টিতে নিয়মিত জাতীয় সংগিত হয়না। এতে অনেক শিক্ষার্থী স্কুলে আসার আগ্রহ হারিয়ে ফেলে। দীর্ঘ ৫ বছর ধরে বিদ্যালয়ে পূর্নাঙ্গ ম্যানেজিং কমিটি না থাকায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। পূর্নাঙ্গ কমিটি না থাকায় প্রধান শিক্ষক ও অন্যান্য শিক্ষক নিয়োগ দেয়াও সম্ভব হয়নি। ফলে শিক্ষার পরিবেশ ভেঙ্গে পড়েছে। আবার শিক্ষকদের নিয়মিত বিল বেতন না পাওয়ায় মানবতের জীবন যাপন করতে হয়।
দশম শ্রেনীর ছাত্র আরাফাত হোসেন, রুপালি আক্তার, মরিয়ম আকতার মুনিরা, নবম শ্রেনীর আব্দুল্লাহ আল মামুন ও অষ্টম শ্রেনীর ছাত্রী রাজিয়া সুলতানা বলেন, বিদ্যালয়ে কৃষি ও শারীরিক শিক্ষার কোন শিক্ষক নাই। নিয়মিত খেলাধুলা ও জাতীয় সংগীত হয়না। শিক্ষকরা স্কুলে আসলেও অনেক সময় ক্লাস হয়না। সময়মতো পাঠদানও হয়না। সকাল সাড়ে ১০টা থেকে পাঠদান শুরু হয়ে আড়াইটায়(২.৩০মি) ছুটি দেয়। কোনদিন সব ক্লাস হয়না। কম সময়ে পাঠদান করায় তেমন বুঝাও যায়না। স্কুলের শিক্ষার তেমন পরিবেশ নাই।
অভিভাবক আশরাফুল ইসলাম, হাফিজুর রহমান, মোজাম্মেল হক খানসহ কয়েকজন বলেন, বিগত কমিটি থাকালে বিদ্যালয়ে সকল নিয়মকানুন ঠিক ছিল। কিন্তু ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের ভারে বিদ্যালয়টি এখন ভারাক্রান্ত হয়ে পড়েছে। কমিটি দিবো দিবো করে গত পাঁচ বছর ধরে তালবাহনা করছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক। এছাড়া বিদ্যালয়ে কোন অভিভাবকদের নিয়ে আলোচনাও করা হয়না। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে দ্রæত পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করার দাবী জানানো হয়।
সহকারী শিক্ষক তোফাজ্জল হোসেন ও আব্দুল খালেক বলেন, কমিটি না থাকায় প্রায় ৫/৬ মাস পর পর বেতন হয়। ঠিকমতো বেতন না পাওয়ায় পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয়। গত ঈদ উল ফিতরের কোন বোনাসও পাওয়া যায়নি। ঈদ আনন্দ থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে। ম্যাডামকে বার বার বলা সত্বেও তিনি কোন কর্ণপাত করেন না।
বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ফাতেমা খাতুন বলেন, রোদ ও বৃষ্টির কারণে নিয়মিত জাতীয় সংগীত করা সম্ভব হয়না। শিক্ষার্থীদের বাড়ি দুরে হওয়ায় একটানা ক্লাস শেষে ছুটি দেয়া হয় যা শিক্ষা অফিসার স্যার জানেন। এছাড়া পাঠদান ও শিক্ষকদের বিল বেতনের কোন সমস্যা হয়না। তবে তার কারণে যে পূর্নাঙ্গ কমিটি হচ্ছেনা, সে অভিযোগটি তিনি ভিত্তীহিন ও মিথ্যা বলে দাবী করেন।
মান্দা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম বলেন, ওই বিদ্যালয়ের বিষয়ে আগামী ১৯ আগষ্টে একটি তদন্তের দিন ধার্য করা হয়েছে। যদি ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন করা সম্ভব হয় তাহলে নির্বাচন হবে। তবে নির্দিষ্ট সময়ের আগে বিদ্যালয় ছুটি ও নিয়মিত যে জাতীয় সংগীত হয়না এরকম কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মান্দা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) খন্দকার মুশফিকুর রহমান বলেন, সার্বিক বিষয়টি তদন্ত করে দেখার জন্য উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন