মোঃ রাসেল ইসলাম, বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি: ঈদের টানা ৫ দিনের ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার দ্বিগুন বেড়েছে। স্বজনদের সাথে দেখা সাক্ষাত, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে দ্বিগুন হয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এছাড়া বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়ন ও ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে ঈদ প্যাকেজে অসংখ্য বাংলাদেশীকে ভিসা দিয়েছে ভারতীয় হাইকমিশন। ফলে ঈদের ছুটির সোম, মঙ্গল ও বুধবার (২০,২১, ও ২২ আগস্ট) তিন দিনে প্রায় ১২ হাজার পাসপোর্টযাত্রী বেনাপোল চেকপোষ্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতে গেছে।
ঈদের দিন সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের নোম্যান্সল্যান্ড ও পাসেঞ্জার টার্মিনালের সামনে ছিল যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে শুল্ক কর্মকর্তা ও ইমিগ্রেশন পুলিশের রীতিমত হিমশিম খেতে হচ্ছে। লাইন ঠিক রাখতে বিজিবি সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। প্রচন্ড রোদে ও খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার নারী শিশু ও পুরুষ। ধীর গতির কারনে দু‘দেশের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ তুলেছেন যাত্রীরা।
আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট বেনাপোল। বেনাপোল থেকে কলিকাতার দুরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে কম খরচে বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোষ্ট দিয়ে যাওয়া যায় কলিকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। এ কারনে প্রতিদিন স্থল পথে দুই থেকে আড়াই হাজার পাসপোর্টযাত্রী গমনাগমন করেন এ পথে। তবে ঈদের ছুটিতে পাসপোর্ট যাত্রীর সংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুন। গত তিন দিনে বুধবার দুপুর পর্যন্ত ১২ হাজার যাত্রী বেনাপোল দিয়ে ভারতে গেছেন। দু‘দেশের কর্তৃৃপক্ষ ইমিগ্রেশনে ও বেনাপোল চেকপোস্ট সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল বৃদ্ধি না করায় দীর্ঘ সময় লাগছে পারাপারে।
ঢাকায় চাকরি করেন অমিত কুমার সাহা বুধবার সকালে তার বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার সময় বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন ভবনে জানান, সরকারি চাকরি করি। তাই ঘুরে বেড়ানোর সময় পাই না। এবার ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। কয়েকজন আত্মীয় আছে। এ সুযোগে তাদের সঙ্গে দেখাও হবে, বেড়ানোও হবে। কিন্তুু ২ ঘন্টা দাঁড়িয়ে আছি লাইনে। কখন পার হবো বলতে পারছি না।
রাজধানীর খিলগাও এলাকার বাসিন্দা জামিল হোসেন জানান, নানা শারিরীক অসুস্থতায় ভুগছি। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। কাজের ব্যস্ততার কারণে এতোদিন সময় করে উঠেতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকায় এবার এ সুযোগে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা শেষে ভারতের কয়েকটি দর্শনীয় স্থান ঘুরবেন বলে ঠিক করেছেন। ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকায় পাসপোর্টের কার্যাদি সম্পন্ন করতে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বলে তিনি জানান।
ময়মনসিংহের প্রদীপ কুমার জানান, পরিবার নিয়ে ভারত যাচ্ছি। বেনাপোল ইমিগ্রেশন ও সোনালী ব্যাংক বুথে জনবল কম থাকায় তাদের ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কাজ করতে হচ্ছে। যাত্রী যাতায়াত বাড়লেও এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল বাড়ছে না। অথচ ভ্রমণকর বাবদ ৫০০ ও বন্দরের টার্মিনাল চার্জ বাদ ৪৫ টাকা করে আদায় করে নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল চেকপোস্ট আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তরিকুল ইসলাম জানান, আমাদের ইমিগ্রেশনে কোন সমস্যা নেই। পাসপোর্টযাত্রীদের চাপ বাড়লেও তাদের দুর্ভোগের কথা মাথায় নিয়ে ১৬টি ডেস্কে দ্রæত কাজ করে যাচ্ছে অফিসাররা। এবার ঈদে ভ্রমণপিপাসু মানুষের ভারত ভ্রমণের চাপ অন্য সময়ের চেয়ে একটু বেশি। যাত্রীদের যাতে কোনো দুর্ভোগ পোহাতে না হয় এ কারণে ইমিগ্রেশন আন্তরিকভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যাত্রী সেবা বাড়াতে ইমিগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবল বৃদ্ধি করা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টমস হাউজের সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা জানান, যাত্রীরা যাতে স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াত করতে পারেন তার জন্য ঈদের ছুটির মধ্যেও জনবল বাড়িয়ে কাজ চলছে চেকপোস্ট শুল্ক তল্লাশি কেন্দ্রে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন