নওগাঁ প্রতিনিধি: নওগাঁ পৌরসভায় ডিজিটাল হোল্ডিং নম্বর প্লেট প্রদানের লক্ষ্যে পৌরবাসীর বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। গত দুই মাস থেকে এ কাজটি করছেন গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার বেসরকারী সংস্থা ‘সামাজিক অগ্রগতি ও পূর্ণবাসন কর্মসূচী (সার্প)’। এ সংস্থার ১২ জন মাঠকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের নামে পৌরবাসীর নিকট থেকে অর্থ আদায় করছে অভিযোগ উঠেছে। তবে পৌর মেয়র বলছেন, ডিজিটাল হোল্ডিং নম্বর প্লেট না, পৌরবাসীদের তথ্য সংগ্রহ এবং কর আদায় করা হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভা এ্যাসেসমেন্ট শাখা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ড। এখানে বাড়ি এবং দোকানের মোট সংখ্যা ২৬ হাজার ৩৪ টি। এর মধ্যে বাড়ি ২৫ হাজার চারটি এবং দোকানের সংখ্যা ১ হাজার ২৭টি।
স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো: মাহবুবুর রহমান স্বাক্ষরিত ০৯/০১/২০১৮ ইং তারিখের এক স্মারক থেকে জানা যায়- স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯ এ কোন বে-সরকারি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে অর্থাৎ ‘ইউনিয়ন পর্যায়ের প্রতিটি গ্রামে কর (ট্যাক্স) সংগ্রহ ও আদায়ের লক্ষ্যে বাড়ী বাড়ী ডিজিটাল হোল্ডিং এ্যাসেসমেন্ট ও নাম্বার প্লেট প্রদানের কোন সুযোগ নেই।’ তবে পৌরসভা বেসরকারি সংস্থার মাধ্যমে কর আদায় করতে পারবে কিনা, তার সুস্পষ্ট ব্যাখা স্মারকে নেই।
জানা গেছে, গত দুই মাস থেকে পৌরসভার বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেসরকারি সংস্থা সার্প এর ১২ জন মাঠকর্মী বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছেন। পৌরসভার সিল মোহরকৃত রশিদের মাধ্যমে পাকা বাড়ীর ক্ষেত্রে ১শ’ টাকা এবং টিন কিংবা বেড়ার বাড়ীর ক্ষেত্রে ৭০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। রশিদে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লিখা থাকলেও জোর পূর্বক বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া এখন এ রশিদ কাটা না হলে পরবর্তিতে আরো বেশি টাকা দিয়ে রশিদ নিতে হবে বলেও ভয় দেখানো হয় বলে অনেকেই অভিযোগ করেন। পৌরসভার মধ্যে কোন বাড়ি করতে হলে অনুমতি নিতে হয়। সেখান থেকে বাড়ির হোল্ডিং নাম্বার, ওয়ার্ড ও পাড়া/মহল্লার নাম থাকে এবং সেটি টিনের প্লেটে লিখ থাকে। তবে এটি তেমন কোন কাজে আসে না। বর্তমানে ডিজিটাল হোল্ডিং নাম্বার প্লেটের নামে সম্পূর্ণরূপে নাগরিকদের সাথে প্রতারণা ও বাড়তি কিছু টাকা আদায়ের কৌশল বলেও পৌরবাসীর অভিযোগ।
সার্প এর মাঠ মাঠকর্মী রাজিব, মজিদুল ইসলাম, নাঈম ইসলাম ও দিলীপ কুমার বলেন, ‘ডিজিটাল হোল্ডিং নম্বর প্লেট প্রদানের লক্ষে হোল্ডিং নম্বর, বাড়ীর মালিকের নাম, পিতার নাম, পাড়া এবং ওয়ার্ডের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর বিনিময়ে নওগাঁ পৌরসভার সিল মোহরকৃত রশিদের মাধ্যমে পাকা বাড়ী হলে ১শ’ টাকা ও টিন কিংবা বেড়ার বাড়ীর ক্ষেত্রে ৭০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। এখন ১শ’ টাকার বিনিময়ে হোল্ডিং/দোকান নম্বর প্লেট সংগ্রহ না করলে পরবর্তীতে ৫শ’ টাকা বা তারও অধিক টাকার বিনিময়ে সংগ্রহ করতে হবে। ডিজিটাল হোল্ডিং নম্বর প্লেট প্রদানে লক্ষে গ্রাহক পর্যায় হতে আহরিত টাকার ৭০ শতাংশ পৌর কর্তৃপক্ষ (মেয়র, কাউন্সিলর ও অন্যান্যরা) এবং বাকী ৩০ শতাংশ বেসরকারি সংস্থা (সার্প) পাবে।
৬নং ওয়ার্ডের চকপ্রসাদ মহল্লার বাসীন্দা ইয়াসিন আহম্মেদ বলেন, গত ১০দিন আগে পৌরসভা থেকে লোক এসে তার আধাপাকা বাড়ির জন্য ৭০ টাকা নিয়ে গেছে। প্রথমে সন্দেহ হয়েছিল তবে ছাপানো রশিদ দেয়ায় টাকা দিয়েছি। হোল্ডিং নাম্বারে আগেও কখনো সুবিধা পেতাম না। ডিজিটাল নাম্বার প্লেট হলেও হয়তো কোন সুবিধা পাব না বলে মনে করেন তিনি।
৭নং ওয়ার্ডের চক-আবদাল মহল্লার বাসীন্দা আব্দুল লতিফ বলেন, গত ১২দিন আগে পৌরসভার লোক এসে আমার স্ত্রীর কাছ থেকে আধাপাকা বাড়ীর জন্য ১০০ টাকা নিয়ে গেছে। তবে ছাপানো ৭০ টাকার রশিদ দিয়ে গেছে। এখন টাকা না দিলে পরবর্তীতে ১ হাজার ২শ’ টাকা দিতে হবে বলে ভয় দেখানো হয়। এজন্য স্ত্রী ভয় পেয়ে টাকা দিয়েছে।
১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এসএম রাশিদুল আলম সাজু বলেন, হোল্ডিং/দোকান নম্বর প্লেট প্রদানের লক্ষে এনজিও থেকে যারা টাকা উত্তোলন করছেন প্রথম প্রথম রশিদে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা লিখা থাকলেও বেশি টাকা নিয়েছেন। বিষয়টি জানার পর তাদেরকে রশিদের যে টাকা লিখা আছে সে পরিমাণ টাকা নিতে বলা হয়। এরপর থেকে ঠিক হয়ে গেছে।
সার্প এর নির্বাহী পরিচালক মশিউর রহমান (রিপন) বলেন, আমরা ছয় মাসের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। ডিজিটাল হোল্ডিং এর নাম্বার প্লেট দেয়ার নামে গত দুই মাস থেকে রশিদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে। পৌর কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে এ কাজটি করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ছয়টি ওয়ার্ডের কাজ শেষ হয়েছে। আরো কয়েকমাস সময় লাগবে। চায়না গ্যালভানাইজিং সিটে ডিজিটাল হোল্ডিং টি তৈরী হবে এবং কিছুদিনের মধ্যে এটি বিতরণ করা হবে। এতে প্রায় ৫০/৬০ টাকা খরচ হবে। তবে বেশি টাকা আদায়ের অভিযোগটি ভিত্তিহীন। যেখানে রশিদের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হচ্ছে।
নওগাঁ পৌরসভা মেয়র নজমুল হক সনি বলেন, পৌরসভায় কর্মচারীরা পৌরবাসীর দোরগোড়ায় গিয়ে সম্পূর্ন তথ্য সংগ্রহ করতে পারেনা। এতে অনেক কর (ট্যাক্স) আদায় করা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয়না। কিন্তু এনজিও’র লোকজন তাদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে এ কাজটা সম্পূর্ন করতে পারেন। আশা করছি এতে কর আদায়ে আর সমস্যা থাকবেনা এবং বেশি পরিমাণ কর আদায় হবে। আমাদের মাসিক মিটিংয়ে সর্ব সম্মতিক্রমে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। ইতোপূর্বে ৪/৫ টি এনজিও আমাদের সাথে যোগাযোগ করেছিল। তাদের মধ্যে সার্প এর হার (রেট) কিছুটা কম থাকায় তাদেরকে এ কাজটা দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, স্থানীয় সরকার থেকে পৌরসভার কর আদায়ে কোন বিধি নির্ষেধ নেই। এ নিয়ে আমরা পৌর পরিষদের একটি রেজুলেশন স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয় বরাবর পাঠিয়েছি। সেখান থেকে যদি নিষেধ করা হয়, তাহলে কর আদায় বন্ধ করা হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন