১৯৭১ সালের বীর মুক্তিযুদ্ধা শহীদ মামুনকে বীরত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় উপাধিতে ভূষিত করার দাবী

এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা (নওগাঁ): নওগাঁর মান্দার গোটগাড়ী শহীদ মামুন হাইস্কুল ও কলেজ, এর এসএসসি ব্যাচ ৯১ এর শিক্ষার্থীরা ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল¬াহ আল মামুন (শহীদ মামুন) কে মুক্তিযুদ্ধে অসামান্য বীরত্বপূর্ণ অবদান রেখে জীবন উৎসর্গের জন্য বাংলাদেশের যে কোন একটি রাষ্ট্রীয় উপাধীতে ভূষিত করার দাবী জানিয়েছে। এ দাবী জানিয়ে এসএসসি ব্যাচ ৯১ এর শিক্ষার্থীদের পক্ষে মান্দা মমিন শাহানা সরকারি কলেজ এর পরিসংখ্যান বিভাগের প্রভাষক গোলাম মোঃ রফিকুল ইসলাম লিখিত আবেদন প্রধানমন্ত্রী, মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, স্থানীয় এমপি, নওগাঁ-৪ মান্দা, (মন্ত্রী, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়) বরাবর পাঠানো হয়েছে।


আব্দুল¬াহ আল মামুন সম্ভবত ২৫ আগষ্ট শাহজামান (অ্যাডভোকেট নওগাঁ বার) কে সঙ্গে নিয়ে নিয়ামতপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হন এবং পরানপুর ও হরিপুরে শেল্টার তৈরি করে নিয়ামতপুরে যোগাযোগ স্থাপন করে মান্দায় ফিরে আসার পরিকল্পনা করেন। সে মোতাবেক ১৯৭১ সালের ২৬ আগষ্ট সকালে সতীহাট বাজারের রেড়িও মেকার বনিজের নিকট হতে পুরাতন রেডিও সংগ্রহ করে রেড়িওর মধ্যে দুটি গ্রেনেড পুরে শহীদ মামুন তা বহন করেন এবং শাহজামান নেন ওষুধের প্যাকেটে দুটি গ্রেনেড। মান্দায় আসার পর তাঁরা সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দুজন দুদিকে যাবেন বলে সিদ্ধান্ত নেন। শাহজামান সোনাপুর হয়ে পরানপুর-হরিপুর, অপর দিকে শহীদ মামুন সাহাপুর হয়ে কালিকাপুরে। কালিকাপুরে নদীর ধারে পিচ কমিটির সদস্যদের মিটিং করা অবস্থা দেখতে পেয়ে কিশোর মামুন তাদের উপর গ্রেনেড চার্জ করেন। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশতঃ গ্রেনেডটি বিস্ফোরিত না হওয়ায় ২য় গ্রেনেডটি নিক্ষেপ করেন। ২য় গ্রেনেডটিও বিস্ফোরিত না হলে পিচ কমিটির সদস্যরা তাঁকে দেখতে পেলে নিজেকে আড়াল করার কৌশল হিসেবে এক আখ ক্ষেতে মনান্তরে কাঁশফুলের ঝোঁপের মধ্যে লুকিয়ে যান। পিচ কমিটির লোকজন তাঁকে ধরার জন্য খুঁজতে থাকলে আখ ক্ষেতে (কাঁশফুলের ঝোঁপের) মধ্যে থাকা একজন মহিলা তাঁর সন্ধান দিলে শত্রæরা তাকে ধরার জন্য তাড়া করে। কিশোর মামুন দৌড় দিলে শত্রæরা তার পিছু নেয় এবং সূর্য নারায়নপুর গ্রামে শত্রæরা তাকে ধরে ফেলে। ধরা পড়লে প্রথমে শত্রæরা তাকে নির্যাতন করে এবং পাশে মান্দা পাকসেনা ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে অমানবিক নির্যাতন করার পর তাঁর পায়ে রশি বেঁধে গাড়ির পিছনে ঝুলিয়ে মহাদেবপুর আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যাওয়ার সময় পথিমধ্যে তার দেহ ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হয়ে নির্মমভাবে শাহাদত বরণ করেন। আর এভাবেই তিনি দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করেন। দিনটি ছিল সম্ভবত ১৯৭১ সালের ২৭, ২৮ অথবা ২৯ আগষ্ট। আর এভাবেই দেশের জন্য সম্ভবত ১৯৭১ সালের ২৭, ২৮ অথবা ২৯ আগষ্ট তিনি নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করেন। তাঁর এ মহান আত্মত্যাগের কথা নওগাঁ জেলাবাসি চিরদিন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। স্বাধীনতা যুদ্ধে তাঁর এই করুণ আত্মত্যাগের স্বীকৃতি হিসেবে তাঁকে যদি উপরোক্ত যে কোন উপাধিতে ভূষিত করা হয় তাহলে তাঁর আত্মত্যাগের যথার্থ মূল্যায়ন করা হবে বলে আমরা মনে প্রাণে বিশ্বাস করি। তাই অবিলম্বে আমাদের প্রাণের দাবি শহীদ আব্দুল্লাহ আল মামুন (শহীদ মামুন) কে বীর শ্রেষ্ঠ/বীর উত্তম/বীর বিক্রম/বীর প্রতীক যে কোন একটি বীরত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় উপাধিতে ভূষিত করা হোক।


কে এই আব্দুল¬াহ আল মামুন ?


জন্ম পরিচয়: আব্দুল¬াহ আল মামুন (শহীদ মামুন) ১৯৫৫ সালে ৩০ আগষ্ট নওগাঁ মহকুমার নিয়ামতপুর থানার রামকুড়া গ্রামে জন্ম গ্রহন করেন। তাঁর পিতা ডাঃ নজরুল ইসলাম এবং মাতা বেগম জোবায়দা ইসলাম। পিতা মাতার ৮ম সন্তানের মধ্য তিনি ছিলেন তৃতীয়।


শিক্ষা জীবন: তিনি ১৯৬১ সালে নওগাঁ পিটিআই স্কুলে ভর্তি হয়ে পড়াশুনা শুরু করেন এবং সেখান থেকে ১৯৬৬ সালে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে নওগাঁ কে.ডি সরকারী স্কুলে ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে ৭ম শ্রেণিতে রাজশাহী ক্যাডেট কলেজে ভর্তি হন। তাঁর নম্বর সি-২৫৭।


মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের আকুলতা: নওগাঁ পিটিআই স্কুলে নবম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় বাংলাদেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহনের জন্য তাঁর বড় ভাই মোজাহিদের সঙ্গে মার্চ মাসে নওগাঁ ইপিআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে প্রশিক্ষণ গ্রহন করেন। জুন মাসের মাঝামাঝি আসামের হাফলং ক্যাম্পে মুজিব বাহিনীতে অংশ গ্রহন করেন। এই ক্যাম্পে তিনি লিখিত পরীক্ষায় ৫০০ জনের মধ্যে ১ম হয়েছিলেন। প্রশিক্ষণ শেষে জুলাইয়ে দেশে ফিরেন এবং বীরমুক্তিযোদ্ধা জনাব মোঃ ইব্রাহিম হোসেন (প্রাক্তন প্রসাদপুর ইউপি চেয়ারম্যান) এবং প্রয়াত অধ্যক্ষ বাবু বিমল কৃষ্ণ রায় এর দলে অন্তুর্ভূক্ত হন। পরে তিনি মান্দা উপজেলাধীন প্রসাদপুর ইউপি ও গণেশপুর ইউপির বিভিন্ন স্থানে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ প্রদানুুুুু করেন। শহীদ মামুন এদের দলের উপনেতা ছিলেন। সে সময় শহীদ মামুন তাঁর টিমসহ আশ্রয় ও সহযোগিতা পেয়েছেন আজাদ মাস্টার, লয়েজ মাস্টার, আছির মাস্টার, হাফিজ মাস্টার, মোয়াজ্জেম হোসেন, বিশ্বনাথ, হাফিজ জোয়ার্দ্দার, নমীর উদ্দীনসহ অনেকের বাড়িতে। তাঁর আত্মত্যাগকে চির স্মরণীয় করে রাখার জন্যই তাঁর সহযোদ্ধারা ১৯৭২ সালে গোটগাড়ী শহীদ মামুন স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন। কালের পরিক্রমায় সেটি হাইস্কুল এবং গোটগাড়ী শহীদ মামুন হাইস্কুল ও কলেজ এ পরিণত হয়েছে। ২০১৮ সালে সদ্য ঘোষিত সরকারিকরণের তালিকাভূক্ত হয়েছে। অনেকে মনে করছেন এটিও সেই মহান আত্মারই অর্জন।


জীবন উৎসর্গ: ১৯৭১ সালের ২৭, ২৮ অথবা ২৯ আগষ্ট দেশের জন্য তিনি নিঃস্বার্থভাবে জীবন উৎসর্গ করেন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget