মোঃ রাসেল ইসলাম, বেনাপোল প্রতিনিধি: যশোরের বেনাপোল আন্তর্জাতিক সীমান্ত চেকপোষ্ট দিয়ে ভারতে পাচার হচ্ছে পায়ু পথে স্বর্ণ। পাচারকারী স্বর্ণমানবরা এখন এ সীমান্ত পথটি তারা নিরাপদ রুট হিসাবে ব্যবহার করছে। তবে পাচারকারীরা ইতোপূর্বে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জুতার ভিতর, ব্যাগের ভিতর, পরনের প্যান্টের বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে স্বর্ণ পাচার করতো কিন্তু কাষ্টমস্ তল্লাশী কেন্দ্রের সদস্যরা এ সব কৌশল সম্পর্কে ওয়াকিবহাল হওয়ায় এখন তারা লুকানো কৌশল পরিবর্তন করে স্বর্নেও বার পাচার করছে পায়ু পথে।
পায়ু পথ ব্যবহার ঐ পাচারকারী স্বর্ণ মানবের বেশ কষ্ট দায়ক হলেও এ পথটি তারা নিরাপদ মনে করছেন। একান্ত গোপনসুত্রে সংবাদ পাওয়া ছাড়া এ সব স্বর্ণ মানবদের আটক করা বেশ দুরুহ। ব্যাগেজ বা অন্যন্যা জায়গা যত সহজে তল্লাশী করে একজন পাসপোর্ট যাত্রীকে নিশ্চিত হওয়া যায় সে স্বর্ন পাচারকারী নয় কিন্তু একজন সন্দেহজনক স্বর্ণ মানবকে আটক করলে অতসহজে বোঝা যায় না সে স্বর্ণমানব কিনা। তাকে আটকের পর বেশ ঝুক্কি ঝামেলাও পোহাতে হয় কাষ্টমস্ কর্তৃপক্ষের। আটকের পর তাকে প্রথমে স্বীকার করনোর চেষ্টা করা হয়। তার পরেও যখন ঐ স্বর্ন মানব সব কিছু অস্বীকার করে তখন তাকে হাসপাতাল কিংবা ক্লিনিকে নিয়ে এক্সের করানোর পর কাষ্টমস্ কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত হয় তার পেটের ভিতর অথবা পায়ু পথে স্বর্নের বার লুকানো আছে।
তখন তাকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে খাওয়ানো হয় কলা, পাউরুটিসহ তরল খাবার। চেষ্টা করানো হয় পায়ু পথ দিয়ে এ সব স্বর্ন উদ্ধারের। তবে ২ থেকে ৬ ঘন্টা, ক্ষেত্র বিশেষ ৮ ঘন্টার মধ্যে পায়ু পথের স্বর্ণের বার উদ্ধার করা সম্ভব হয় এ সব স্বর্ণ মানবের শরীর থেকে। একজন স্বর্ণমানবের পায়ু পথ থেকে সর্বোচ্চ ১৭টি পর্যন্ত স্বর্ণের বার উদ্ধার করেছে বেনাপোল কাষ্টমস্ এবং শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেল কর্তৃপক্ষ। তবে বেনাপোল চেকপেষ্টে কর্মরত বিভিন্ন সরকারী-বেসরকারী সংস্থার কর্মকর্তারা জানান এখানে কর্মরত শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত সার্কেলের কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি পেলে এ পথে স্বর্ণ পাচার অনেকটা কমে যেত।
বেনাপোল কাষ্টম হাউসের জয়েন্ট কমিশনার এহসান খান জানান, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোষ্ট এলাকা থেকে স্বর্নসহ ২৭জন স্বর্ন চোরাচালানীকে আটক করেছে কাষ্টমস্ ও শুল্ক গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ। যার মধ্যে রয়েছে ৬জন স্বর্ন মানব। এ সময় জব্দ করা হয়েছে ১৯ কেজি ৩০৪ গ্রাম স্বর্ন। যার বাজার মুল্যে ১৩ কোটি ৫১ লাখ ৬০ হাজার টাকা।
এ ব্যাপারে বেনাপোল পোর্ট থানায় ও চুয়াডাঙ্গা থানায় মামলা হয়েছে ১৯টি। বেনাপেল চেকপোষ্ট থেকে সর্বশেষ ৭ই জুন-২০১৮ আটক স্বর্ন মানব শরিয়তপুর জেলার আব্দুল মান্নান ব্যাপারীর ছেলে লাভলু ব্যাপারী জানান এ সব স্বর্ন তার নয় সে বাহক মাত্র । ঢাকা থেকে প্রতি পিচ স্বর্নের বার কলকাতার নিদিষ্ট স্থানে পৌছে দিলে সে পাবেন পিচ প্রতি২ হাজার টাকা মাত্র। তবে এ স্বর্নের প্রকৃত মালিক কে তাও তার জানা নেই। তার এক বন্ধু তাকে এ সব স্বর্নের বার কলকাতায় পৌছে দিতে বলেছে। তবে এ পর্যন্ত বেনাপোল চেকপোষ্ট এলাকা থেকে যারা স্বর্ন সহ আটক হয়েছে তারা কেউ স্বর্নের মালিক নয় বাহক মাত্র। তবে প্রকৃত মালিক কে ? এমন জিঞাসা বিশিষ্ঠ জনদের।
স্বর্ণ পাচারকারী ধৃত আসামীরা আটক হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট থানা কর্তৃপক্ষের তেমন কোন অনুসন্ধ্যান অভিযানও দেখা যায় না প্রকৃত স্বর্ণের মালিকদের আটকের ব্যাপারে। বেনাপোলের একজন সাধারন ব্যবসায়ী জানান, দেশের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে আসা ভারতীয় গরুর টাকা (ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী মাহজনদের) সে দেশের মাহজনদের যোগান দিতে এ স্বর্ণ পাচার। গরু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধমে ভারতীয় গরু ব্যবসায়ী মাহাজনদের বাংলাদেশে টাকা ছাড়াই পাঠনো গরু বিক্রির কোটি কোটি টাকা তারা পেয়ে থাকেন বাংলাদেশ থেকে পাঠানো এ সব স্বর্ণের মাধ্যমে। চোরা পথে ভারতে টাকা পাঠাতে নিরাপদ নয় এবং বহনেও অসুবিধার কারণে এ দেশ থেকে গরু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট ভারতে স্বর্ণ পাঠিয়ে থাকেন। সে ক্ষেত্রে ভারত থেকে বাংলাদেশে চোরা পথে গরু আসা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত স্বর্ন পাচার অব্যহত থাকবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন