উত্তরাঞ্চলের পাট ভান্ডার খ্যাত আত্রাইয়ে পাট চাষে কৃষকের আগ্রহ কমেছে

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই (নওগাঁ) প্রতিনিধি: বছরের পর বছর দেশের আবহাওয়া পরিবর্তনের ছাপ পড়তে শুরু করেছে নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পাট চাষিদের ওপর। বর্তমানে বিলুপ্ত প্রায় এক সময়ের এদেশের প্রধান অর্থকারী ফসল সোঁনালী আঁশ হিসাবে খ্যাত পরিবেশ বান্ধব পাটের চাষ। বর্তমানে এই পাট চাষে উপজেলার কৃষক দিন দিন আগ্রাহ হারিয়ে ফেলছে। ফলে এবার পাটের ভরা মৌসুমেও পাট মিলেনি উপজেলার হাট বাজার গুলোতে। এদিকে পাট চাষে আগ্রহ হারনোর পেছনে প্রতি বছর বাজারে পাটের মূল্য দরপতনকেও এর জন্য দায়ী করছেন চাষিরা।


সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে কৃষকের সাথে আলাপচারিতায় জানাযায়, বিভিন্ন সময়ে পাটের মূল্য দরপতন, উৎপাদন খরচ বেশি ও পাট পচানো পানির অভাবেই কৃষকরা পাট চাষে আগ্রাহ হারিয়ে ফেলেছে। ৬০ এর দশকে দেশের খ্যাতমান পাটক্রয় কেন্দ্র ছিল নওগাঁর আত্রাই উপজেলায়। এক সময় উপজেলার র‌্যালী বাদ্রার্স নামে বিখ্যাত সেই পাটক্রয় কেন্দ্রে পাটক্রয় করে তা আবার নৌপথে পাঠানো হতো দেশ বিদেশের বিভিন্ন জুটমিলে। সে সময় সরকারী ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন শত শত টন পাট ক্রয় করা হতো চাষীদের নিকট থেকে। ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তির নিশ্চয়তা নিয়ে কৃষকেরাও ঝুঁকে পড়তো ব্যাপকহারে পাটচাষে। আত্রাই থেকে এ পাটগুলো দেশের দক্ষিণঅঞ্চলের জেলা খুলনা, যশোর সহ বিভিন্ন জুটমিলে নৌপথে ও রেলপথে নিয়ে যাওয়া হতো।


জনস্ত্রæতি আছে শুধু দেশেই নয় বরং দেশের চাহিদা মিটিয়ে আকাশ পথে আত্রাই এর পাট রপ্তানি করা হতো সেই ইংল্যান্ডে। সেই সময় মালবাহী উড়জাহাজ যোগে আত্রাই পাটক্রয় কেন্দ্র থেকে সরাসরি এই পাট লন্ডনে রপ্তানি করা হতো বলে তথ্যঅনুসন্ধানে জানাগেছে। বর্তমানে আর এ উপজেলার কৃষকেরা আগের মতো পাট চাষও করেনা।


উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা, এবার এ উপজেলায় মাত্র ১২০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ করা হয়েছে। পাটের মূল্য কমসহ নানাবিধ সমস্যার কারণে কৃষকেরা পাট চাষে এবার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। এদিকে পাটের চাষ কম হওয়ায় জ্বালানীকাজে ব্যবহার্য পাটখড়ির মূল্য আকাশচুম্বি হয়েছে। ফলে মধ্যম আয়ের পরিবারে সৃষ্টি হয়েছে চরম ভোগান্তি।


উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, ৬০ এর দশকে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে আত্রাই ছিল পাটের জন্য বিখ্যাত। সে সময় আমরা ব্যাপকহারে পাট চাষ করতাম। পাটের ন্যায্যমূল্য ও পেতাম। বর্তমানে উৎপাদন খরচ বেশি , মূল্য কম এ জন্য আমরা পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছি।


উপজেলার বজ্রপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল মজিদ মন্ডল বলেন, গত দু বছর থেকে পাট চাষ করে পাট পচানো পানির অভাবে আমাদের চরম বিপাকে পড়তে হয়েছে। এ জন্য এবার আমি পাট চাষ করিনি। ওই জমিগুলোতে এবার ধান সহ অন্যান্য আবাদ করে আমি লাভবান হচ্ছি।


এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কে এম কাউছার হোসেন জানান, বিগত বছরগুলোতে পাটের বাজার মন্দ থাকায় এই ফসলের প্রতি চাষিদের আগ্রহ কমে গিয়েছিল বর্তমান সরকার খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন পণ্য পরিবেশ বান্ধব পাটের মোড়ক বহুবিদ ব্যবহার করায় বর্তমান পাটের উৎপাদন ও বাজার দর ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করায় এবার প্রান্তিক পর্যায়ে চাষিদেরও পাট চাষের আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষে চলতি খড়িপ মৌসুমে চাষীদের রোগ প্রতিরোধ সম্পর্কে কৃষকদের গঠনমূলক পরামর্শ দেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget