ধামইরহাট (নওগাঁ) প্রতিনিধি: নওগাঁর বরেন্দ্র অঞ্চলের স্বাদে গুনে অনন্য নাক ফজলী আম মাত্র ১২ টাকা দরে কেনাবেচা চলছে। আম বিক্রি করে এ অঞ্চলের আম চাষীরা তাদের বিনিয়োগের আসল টাকা ওঠাতে পারছেনা। এলাকাবাসী অবিলম্বে অত্র এলাকায় একটি আম সংরক্ষণগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন।
জানা গেছে,এ উপজেলার কৃষকরা কমবেশী প্রত্যেকের বাড়ীতে ২-৩টি করে নাক ফজলী আম গাছ লাগিছে। এক কথায় প্রতিটি কৃষকের ঘরে ঘরে এ আম এখন চাষ হচ্ছে। আমের দাম না থাকায় আমচাষীরা বেকায়দার পড়েছে।
একটি নাক ফজলী আমের ওজন ৩ শত থেকে ৪শত গ্রাম পর্যন্ত। পাতলা চামড়া এবং সরু বিচি যা অন্যান্য আমের চেয়ে আলাদা। মিষ্টতার দিক দিয়ে ন্যাংড়া ও আম্রপালি আমের সমতুল্য। এ আমে কোন আইশ না থাকায় খেতে খুবই সুস্বাদু। আম পাকার পরও শক্ত শক্তভাব থাকায় সহজেই বাজারজাত করা সম্ভব। নাক ফজলী আম বাংলাদেশে শুধুমাত্র নওগাঁ জেলার ধামইরহাট ও বদলগাছি উপজেলায় চাষ হচ্ছে। তবে বর্তমানে পার্শ্ববতী পতœীতলা ও জয়পুরহাট সদর উপজেলার এ আমের বিস্তার লাভ ঘটেছে। অনেকে মনে করেন এ আমের নিচের দিকে নাকের মত চ্যাপ্টা হয়ায় এর নাম করণ হয়েছে নাক ফজলী। আম চাষীদের কাছ থেকে জানা যায়,নাক ফজলী আম ১৯৬৭ সালে আফতাব উদ্দিন ভান্ডারীর মাধ্যমে এ উপজেলার বিস্তার লাভ করে। বর্তমানে বন বিভাগে এমএলএসএস পদে কর্মরত আফতাব হোসেন ভান্ডারী জানান, তার দাদার বাড়ী একই জেলার বদলগাছি উপজেলার ভান্ডারপুর গ্রামে। ভান্ডারপুর গ্রামের তৎকালীন জমিদার খুকুমনি লাহেরীর কাছ থেকে তার দাদা এ আমের জাত সংগ্রহ করে। জমিদার খুকুমনি লাহেরী ভারতের কলকতা থেকে এ আমের জাত সংগ্রহ করে। পরবর্তীতে আফতাব হোসেন ভান্ডারী জোড় কলমের মাধ্যমে আজ থেকে প্রায় ৪৬ বছর পূর্বে ধামইরহাট উপজেলায় এ আমের বিস্তার ঘটায়।বর্তমানেউপজেলার মনিপুর, রামরামপুর,আঙ্গরত, চকময়রাম, হরিতকীডাঙ্গা, হাটনগর, পিড়লডাঙ্গা, শিবরামপুর, মইশড়, জয়জয়পুর এলাকায় ছোট বড় প্রায় শতাধিক নাক ফজলী আমের বাগান রয়েছে। এছাড়াও উপজেলার সর্বত্র কম বেশি এ আমের চাষ হচ্ছে। জোড় কলমের মাধ্যমে এ আমের চারা রোপন করার ১-২ বছরের মধ্যে গাছে মুকুল আসে। গাছের বয়স ৩-৪ বছর হলে প্রতিটি গাছ থেকে প্রায় ৪-৫ মণ আম পাওয়া যায়। বর্তমানে গ্রাম্যঞ্চলে কৃষক পর্যায়ে এ আম প্রতি কেজি ১০-১৫ টাকা দরে কেনা বেচা চলছে। উপজেলার হাটনগর গ্রামের আমচাষী আবু সাঈদ বলেন,আগে এ আমের চাহিদা না থাকলেও এখন আম পাকার আগে বিভিন্নস্থান থেকে লোকজন আম কেনার জন্য অগ্রিম বায়না দিতো। কিন্তু এবার কেউ আম কেনার জন্য খোঁজও নেয়নি। মালাহার গ্রামের মো.মোফাজ্জল হোসেন বলেন,আমের দাম বেশী হওয়ার গত কয়েক বছর পূর্বে তিনি ধানী জমিতে আম বাগান তৈরি করেছেন। এবার আমও ধরেছে বাগানে কিন্তু দাম না থাকায় তিনি ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। মইশড় গ্রামের আম চাষী কামরুজ্জামান বলেন,গাছ থেকে আম নামাতে যে শ্রমিকের জন্য যে খরচ হবে আম বিক্রি করে তা ওঠানো মুশকিল হয়ে পড়েছে। আলু সংরক্ষণের ন্যায় এলাকায় সরকারী অথবা বেসরকারী পর্যায়ে হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণের জোর দাবী জানিয়েছেন। এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো.সেলিম রেজা বলেন,অত্যন্ত মিষ্টি ও সুশ্বাদু নাক ফজলী আমের দাম না থাকায় এলাকায় আমচাষীরা ক্ষতির সম্মুখিন হচ্ছেন। হিমাগার থাকলে কৃষক আম রেখে পরবর্র্তীতে ন্যায্য দামে বিক্রি করতে পারত। এতে কৃষকগণ উপকৃত হতেন। আগামীতে কৃষকগণ নিরাপদ আম উৎপাদন ও পার্কিং ব্যবস্থা গ্রহণ এবং আম সংরক্ষণের জন্য একটি হিমাগার নির্মাণ করা গেলে তারা বিশেষভাবে উপকৃত হতো।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন