নওগাঁ: মাদকাসক্ত বাবা প্রায়ই নেশা করে এসে মাকে মারধর করে। নেশার টাকা জোগাড় নিয়ে মায়ের সঙ্গে প্রায়ই ঝগড়া হয়। গত সোমবার (২১ জুন) দুপুরে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় বাড়িতে এলে কলেজপড়–য়া ছেলে রাজু আহমেদ (২২) বাবাকে নেশা ছেড়ে দিতে বলে। এ নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে হাতের পাশে থাকা হাসুয়া দিয়ে ছেলেকে আঘাত করেন নেশাগ্রস্ত বাবা মতিউর রহমান (৫০)। চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গত বুধবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
নিহত রাজু আহমেদ রাজশাহী কলেজে মনোবিজ্ঞান বিভাগে সম্মান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিল। এ ঘটনায় ছেলেকে হত্যায় দায়ে মা জয়নব বেগম নিয়ামতপুর থানায় স্বামী মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। পুলিশ এখনও অভিযুক্ত মতিউর রহমানকে ধরতে পারেনি।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, মতিউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে মাদকাসক্ত। নেশা করে এসে প্রায় স্ত্রীকে মারধর করে। এমনকি পাড়া-প্রতিবেশির সঙ্গেও তাঁর মাঝে-মাঝেই ঝগড়া-বিবাদ হয়। এলাকার লোকজন তাঁর ওপর অতিষ্ঠ। গত সোমবার দুপুরে মতিউর রহমান নেশা করে বাড়িতে ঢুকলে বাবাকে নেশা ছেড়ে দিতে বলে ছেলে রাজু আহমেদ। নেশা ছাড়তে না চাইলে বাবা-ছেলের সঙ্গে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে হাতের পাশে থাকা হাসুয়া দিয়ে ছেলের মাথায় করেন নেশাগ্রস্ত বাবা মতিউর রহমান। গুরুত্বর জখম অবস্থায় ওই দিনই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় রাজু আহমেদ। তিন দিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল বুধবার রাতে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় ছেলেকে হত্যার দায়ে রাজুর মা জয়নব বেগম স্বামীর বিরুদ্ধে নিয়ামতপুর থানায় মামলা করেছেন।
জয়নব বেগম বলেন, ‘স্বামী মতিউর নেশা করে বেড়ায়। সংসারের খোঁজ নেয় না। বাবাকে নেশা ছেড়ে দেওয়ার জন্য এর আগেও আমার ছেলে নিষেধ করেছে। কিন্তু ওই লোক কারও কথা শুনে না। নেশা করে এসে আমাকে প্রায়ই মারধর করে। ছেলে এগুলো সহ্য করতে পারত না। এগুলোর প্রতিবাদ করায় বাবা-ছেলের প্রায়ই ঝগড়া হতো। অবশেষে ছেলেকে মেরেই ফেলল। আমি এ ঘটনার ন্যায্য বিচার চাই।’
গ্রামবাসীরা জানান, রাজু আহমেদ খুব মেধাবী ছাত্র ছিল। রাজুর ছোট এক ভাই ও বোন রয়েছে। বাবা নেশাগ্রস্ত হওয়ার কারণে প্রায়ই তাঁদের সংসারে টানাটানি লেগে থাকে। রাজশাহীতে টিউশনি করে লেখাপড়ার খরচ জোগাতেন তিনি।
নিয়ামতপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নাজমুল হক জানান, এ ঘটনায় হত্যা মামলা হয়েছে। ঘটনার পর থেকে আসামি মতিউরকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তাঁকে ধরার চেষ্টা চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন