ঢাকা- চরফ্যাশন- দুলারহাট নৌ-রুটে লঞ্চ ভাড়া তিনগুণ, জোরপূর্বক ভাড়া আদায়ের অভিযোগ


এস রহমান সোহেল, ভোলা জেলা:  চরফ্যাশন-ঢাকা নৌ-রুটে লঞ্চ ভাড়া হঠাৎ করেই এক-তৃতীয়াংশ বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে। ঈদকে ঘিরে যাত্রীদের চাপবৃদ্ধি সাথে সাথে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন লঞ্চযাত্রী। ঘাট থেকে কম ভাড়ার হাক-ডাক দিয়ে লঞ্চে তুলে মাঝ নদীতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এ নিয়ে লঞ্চ গুলোর স্টাফদের সাথে যাত্রীদের হট্রোগোল আর বাকবিতন্ডা হয়েছে। হঠাৎ করে লঞ্চ ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ির পেছনে সিন্ডিকেট এবং ঈদ বাণিজ্যই অন্যতম কারণ বলে জানাগেছে।


জানাগেছে- চরফ্যাশনের বেতুয়া – ঢাকা এবং ঘোষেরহাট এই ২টি রুটে প্রতিদিন ১২টি লঞ্চ আসা-যাওয়া করছে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে চরফ্যাশনের বেতুয়া ঘাটের উদ্দেশ্যে ছাড়ছে ৩টি লঞ্চ । একই ভাবে ঢাকার উদ্দেশ্যে বেতুয়াঘাট থেকে ছাড়ছে ৩টি লঞ্চ। অপরদিকে ঢাকা থেকে চরফ্যাশনের ঘোষরহাট ঘাট এবং লেতরাঘাটের উদ্দেশ্যে ছাড়ছে ৩টি লঞ্চ। একই ভাবে ঘোষেরহাট ঘাট এবং লেতরা ঘাট থেকে ৩টি লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশ্যে ছাড়ছে। এই ২টি রুটে চলাচলকারী লঞ্চ গুলোতে ভাড়ার চার্ট যেমন নেই,তেমনি ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে নির্ধারিত কোন পরিমানও নেই। ভাড়ার পরিমান যখন যেমন তখন তেমন করেই চলছে। এ নিয়ে যাত্রীদের সাথে লঞ্চ স্টাফদের বাকবিতন্ডা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার।


স্থানীয় যাত্রীরা জানান-বেতুয়া-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ৬টি লঞ্চের মধ্যে কর্ণফুলী, তাসরিফ এবং ফারহান লঞ্চের মধ্যে কয়েক মাস ধরে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতা চলে আসছে। এই প্রতিযোগিতার ফলে বেতুয়া থেকে ঢাকায় ডেকযাত্রীদের ভাড়া জনপ্রতি ২০ টাকা এবং ঢাকা থেকে বেতুয়ায় ডেকযাত্রীদের ভাড়া ১শ’ টাকা আদায় করা হয়। পাশাপাশি সিঙ্গেল কেবিন ৭শ টাকা ও ডাবল কেবিন ১৬শ’ টাকা পর্যন্ত ভাড়া ছিল। যদিও লঞ্চ গুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার কারণে ডেকযাত্রীদের ভাড়া হ্রাসের ঘটনা খুবই অস্বাভাবিক ছিল বলে যাত্রী ও লঞ্চ স্টাফরা স্বীকার করেছেন।


কিন্ত ঈদকে সামনে রেখে লঞ্চ গুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতার অবসান হয়েছে এবং গত রোববার থেকে হঠাৎ করেই বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে ভাড়া। ঢাকা থেকে বেতুয়াঘাটে আসা যাত্রী আবদুর রহমান অভিযোগ করেন-ঢাকা সদর ঘাট থেকে তাসরিফ-৪ লঞ্চে ডেকের ভাড়া ১শ’ টাকার কথা বলে মাঝপথে এসে ৩শ’ টাকাভাড়া আদায় করা হয়েছে। হঠাৎ ভাড়া বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনায় মাঝরাতে ডেকের যাত্রীদের সাথে টিকেট কালেক্টরের বাকবিতন্ডার ঘটনায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পরে। একই ভাবে ওই লঞ্চে সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৭শ’ টাকার স্থলে ১২শ’ টাকা এবং ডাবল কেবিন ১৬শ’ টাকার স্থলে ২২শ’ টাকা আদায় করা হয়েছে বলে কেবিন যাত্রী নাহিদ সিকদার অভিযোগ করেছেন। শনিবার থেকে চরফ্যাশনের ২টি রুটে চলাচলকারী তাসরিফ,ফারহান,কর্নফুলী,গ্লোরী অব শ্রীনগর, জাহিদ, শাহরুখসহ সবগুলো লঞ্চে ই একই ভাবে বাড়া বৃদ্ধির অভিযোগ পাওয়াগেছে।


হঠাৎ বাড়াবৃদ্ধির কারণ এবং বিআইডব্লিউটিএ নির্ধারিত ভাড়ার তালিকা সম্পর্কে জানতে চাইলে তাসরিফ-৪ লঞ্চের সুপারভাইজার মঞ্জুরুল ইসলাম জানান-ব্যবসায়িক প্রতিযোগিতার কারণে আগে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কমভাড়া আদায় করা হয়েছে। ঈদকে সামনে রেখে এখন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে । তবে কর্তৃপক্ষের থেকে কোন ভাড়ার তালিকা লঞ্চ টানানোর জন্য দেয়া হয়নি বলেও সুপারভাইজার জানান। অভিযোগ প্রসঙ্গে ফেয়ারী নেভিগেশনের জেনারেল ম্যানেজার কাজি ইকবাল জানান- ভাড়ার নির্ধারিত তালিকা লঞ্চে দেয়া হয়নি একথা সঠিক নয়। বিআইডব্লিউএ নির্ধারিত ডেকের ভাড়া ৩৭৪ টাকা এবং কেবিল ভাড়া সিঙ্গেল ১২শ’ টাকা, ডাবল ২২শ’ টাকা এবং ডিলাক্স ৫ হাজার টাকা সরকারি ভাবেই নির্ধারন করা আছে। এখন পর্যন্ত ভাড়ার নির্ধারিত হারের বেশী আদায় করা হয়নি।


এ প্রসঙ্গে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মনোয়ার হোসেন জানান লঞ্চ ভাড়া কম বেশী কিংবা ভাড়ার তালিকা টানানোর বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনের কিছু করার নেই। ভুক্তভোগী যাত্রীরা ভোক্তা অধিকার আইনে মামলা করতে পারেন অথবা বিআইডব্লিউটিএর কাছে প্রতিকার প্রার্থী হতে পারেন।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget