হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: উৎসব আসলে খুশি আসে। খুশির বর্ষণে কেউ সিক্ত হয় কেউবা রিক্ত হাতে কপালের খেলা দেখে! ‘ঈদ’! দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনার পর আসে এই খুশির দিন। ঘরে ঘরে আনন্দের ফল্লুধারা বয়, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ হারিয়ে যায়। তবুও এই খুশির উৎসব কি আনন্দের উপহার নিয়ে হাজির হতে পারে প্রতিটি দুয়ারে? পারে না!
সমাজের অলিখিত নিয়মের বেড়াজালে আটকা পরে তখনও কোথাও কোথাও চলে শুধুই বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ঈদের দিনকে আনন্দময় করে তুলতে ঈদের সপ্তাহ দুয়েক আগে থেকেই চলে কেনাকাটার প্রস্তুতি। ফর্দ যত লম্বা হতে থাকে, খুশি যেন পাল্লা দিয়ে বাড়ে! সে ফর্দের বৃহৎ অংশ জুড়ে থাকে নতুন কাপড় এর স্থান।
আমরা সবাই যখন বিচিত্র, বর্ণিল পোষাক কিনতে গিয়ে বিলাসিতার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হই ঠিক তখনই কিছু পরিবারে মা-বাবা নতুন পরিকল্পনা আঁটছেন এই ঈদেও তাদের নিষ্পাপ শিশুগুলোকে নতুন কাপড় না পাওয়ার সান্ত্বনা দেবার!
হ্যাঁ, সেই বঞ্চিত প্রাণগুলোর কথা বলছি যাদের কাছে ঈদ মানেই শুধু একটি সাধারণ দিন; বিত্তবানের বিলাসিতা চেয়ে চেয়ে দেখার দিন। খুশির ঈদে তাদের একটি নতুন পোশাকের আশা যে পূরণই হতে চায় না! আজ তো আমরা কত গর্ব করি এ জাতির উদারতার। তাহলে আমরা কি পারিনা এই অবহেলিত, বঞ্চিত শিশুগুলোর নিষ্পাপ হাসিটাকে বাঁচিয়ে রাখতে। ঈদকে সামনে রেখে আমরা কতই না খরচা করি। সব কি প্রয়োজনীয়? আপনি বুকে হাত দিয়ে বলতে শুরু করুন শত শত অপ্রয়োজনীয় খরচ পাবেন! এই খরচ যদি আমরা না করি। আমাদের ছোট্ট একটু ত্যাগ যে পবিত্র প্রাণগুলোকে তাদের প্রাপ্য হাসিটুকু দিবে। আসুন না, একটু সাহায্য করি তাদের। বিশ্বাস করুন হাসিমুখ পৌছে দেয়ার দায়িত্বটুকু নিয়েছি হৃদয় ডাক দিয়েছে বলে। তাই একতার স্পন্দন আয়োজন করছে ‘ওদের হাসি’ ছোট্ট শিশুগুলোর জন্য। এই হাসিটুকু সত্যি সত্যি পৌছাবে,দরকার শুধু একটু সাহায্যের। আসুন না, নিজেদের ছোট্ট ত্যাগে হাসি ফোটাই ‘ওদের’ মুখে!
এমন দৃপ্ত শপথ নিয়ে মাঠে নেমেছিল ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় ও ঠাকুরগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে গঠিত সেবামূলক সংগঠন ‘একতার স্পন্দন’। প্রতিবারের ন্যায় এবারের ঈদেও তারা গরীব শিশুদের মাঝে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগির জন্য আয়োজন করেছে ‘ওদের হাসি’ নামক একটি ইভেন্ট।
শনিবার (৯ জুন) আনুষ্ঠানিকভাবে ৪১ জন গরীব-অসহায় শিশুর হাতে তুলে দেওয়া হয় ঈদের কাপড় ও শিক্ষা উপকরণ। সেই সাথে তাদের পরিবারের জন্য দেওয়া হয় কিছু ঈদসামগ্রী।
উক্ত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মু. সাদেক কুরাইশী।
ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্রীমন্ত কুমার সেনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন আবু মো. খয়রুল কবির, ঠাকুরগাঁও সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মাহমুদুন নবী রাজা।
আজ ইভেন্টের দিনক্ষণ ঠিক করা থাকলেও শিশুদের মনমতো পোশাক কিনে দিতে ইভেন্টের ক’দিন আগেই ওদের নিয়ে হাজির হয় সুপার মার্কেটে। এই শিশুগুলোর মাঝে তুলে দেওয়া হয় তাদের পছন্দমত বাছাই করে রাখা সেই পোশাকটি। ২ দিনে মোট ৪১ জন শিশুকে মার্কেটে এনে পছন্দমত পোশাক কিনে দেয় তারা। আজ ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।
অনুষ্ঠানে অভ্যাগত অতিথিরা আয়োজক একতার স্পন্দনের ভুয়সী প্রশংসা করে বলেন, আগেরবারের মতো এবারও একতার স্পন্দনের সেবামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে। যা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার।
কাপড় নিতে আসা গোবিন্দনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী জাহিদ জানায়, ভাইয়া-আপুগেলা আমাক আমার পছন্দমতন কাপড় কিনে দিছে। এই কাপড়গেলা পিন্দা এবারের ঈদটাও ভালো কাটবো।
আয়োজক সংগঠনটির সভাপতি মো. আক্কাস আলী আকাশ জানায়, প্রতিবারের ন্যায় এবারও আমরা কিছু সংখ্যক গরীব শিশুর মুখে হাসি ফোটানোর চেষ্টা করেছি। সকলের সহযোগিতা পেলে ভবিষ্যতেও এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন