হাসেম আলী, ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গীতে মাদরাসা পড়ুয়া ৮ম শ্রেণির ছাত্রী ও দশম শ্রেণির ছাত্রের অবৈধ মেলামেশা ও বিয়ের দাবীতে ছাত্রের বাড়ীতে ছাত্রীর ১ দিন ১ রাত অবস্থান কর্মসূচী মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে মীমাংসা করা হয়েছে। তবে বিষয়টি ৫ লক্ষ টাকায় মীমাংসা হলেও টাকার সিংহভাগই মীমাংসাকারী আ.লীগ নেতা, ইউপি সদস্য ও স্থানীয় থানা পুলিশের পকেটে গেছে বলে অভিযোগ ছাত্রীর বাবার।
ছাত্রীর বাবা বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার দুওসুও ইউনিয়নের সনগাঁও গ্রামের আলম জানায়, আমাকে দুওসুও ইউনিয়নের ওয়ার্ড আ.লীগ নেতা আজাহরুল ইসলাম, বর্তমান ইউপি সদস্য রাশেদুজ্জামান চৌধুরী, সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল হক ১ লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়ে মেয়েকে বাসায় রেখে গেছে। তার মেয়েকে প্রচুর মারপিট করেছে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে সু-বিচারের দাবী জানিয়েছেন ছাত্রীর বাবা।
রবিবার রাত ৯টার সময় সংবাদ কর্মীরা ছাত্রীর বাড়ীতে গিয়ে তার কাছে ঘটনার কথা জানতে চাইলে ছাত্রী জানায়, আমার বাবা টাকা নিতে পারে। কিন্তু আমি টাকা চাই না, যাকে দেহ দিয়েছি, যার কাছে মন দিয়েছি, তাকে চিরদিনের জন্য স্বামী হিসেবে পেতে চাই।
ছাত্রী আরও বলে, একই মাদরাসায় পড়ুয়া ছাত্র দুওসুও ইউনিয়নের ফটিয়াপাড়া গ্রামের শহিদুল ইসলামের ছেলে শামীমের সাথে দু বছর ধরে প্রেম করছিল সে। মাদরাসা যাতায়াতের সময় দেখা, মোবাইলে কথা বলাসহ বেশ কয়েকবার শারীরিক মেলামেশাও হয়। কিন্তু দুদিন ধরে কোন যোগাযোগ করছিল না ওই ছাত্র।
শেষবার অন্যজনের নম্বর দিয়ে ফোন দিয়ে কথা বললে সম্পর্কের ইতি টানতে বলে ছাত্র। বাধ্য হয়ে শনিবার সন্ধ্যার পর তার বাড়ীতে বিয়ের দাবীতে অবস্থান নেয় ছাত্রী। বাড়ীতে অবস্থানের সময় ছাত্রের মা, বাবা ও তার চাচারা চুল ধরে বেধরক মারপিট করেছে বলে জানায় ছাত্রী।
পরে গতকাল রবিবার দুপুর ২টার সময় দুওসুও ইউনিয়নের পৌকানপুর বাজারে বিষয়টির মীমাংসা করে আ.লীগ নেতা, ইউপি সদস্যরা।
জানতে চাইলে অভিযুক্ত দুওসুও ইউনিয়ন আ.লীগের ওয়ার্ড সভাপতি আজহারুল ইসলাম মুঠোফোনে বলেন, ৫ লক্ষ টাকায় বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে। মেয়ের বাবাকে ১ লক্ষ ষাট হাজার টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি টাকা কোথায়…..এ কথা জিজ্ঞাসা করলে ফোন কেটে দেয় আ.লীগ নেতা।
অপর অভিযুক্ত সাবেক ইউপি সদস্য আশরাফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার বলেন, আমি মীমাংসার সময় ছিলাম না।
বর্তমান ইউপি সদস্য রাসেদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ছেলে মেয়ে দুজনে নাবালক, বিয়ের বয়স হয়নি তাদের। বালিয়াডাঙ্গী থানার তদন্ত অফিসার মিজানুর রহমানকে বিষয়টি জানালে, তিনি বিষয়টি স্থানীয় মীমাংসা করে নেওয়ার কথা বলেন। এ জন্য টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী থানা তদন্ত অফিসার মিজানুর রহমান বলেন, ঘটনার কথা শুনে স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম। কিন্তু বিষয়টি তার আগেই মীমাংসা হয়ে গেছে বলে জানায় তারা। তবে মেয়ের বাবা অভিযোগ দিলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
দুওসুও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, আমার ইউনিয়নের ঘটনা হলেও কেউ বিষয়টি আমাকে অবগত করেনি। ঘটনাটি সাবেক ইউপি সদস্য, আ.লীগ নেতারা মিলে আপোষ মীমাংসা করে দিয়েছে বলে পরে স্থানীয় ইউপি সদস্য মশিউর রহমান আমাকে বিষয়টি জানিয়েছে।
মাদরাসা ছাত্রের বাবা শহিদুর রহমান মুঠোফোনে জানান, উভয় পক্ষের লোকজন বিষয়টি ৩শ টাকা নন-জুডিসিয়াল ষ্ট্যাম্পে লিখিত ভাবে মীমাংসা করে দিয়েছেন। এ বিষয়ে আর কোন কথা বলবেন না বলে তিনি ফোন কেটে দেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন