হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক উপজেলার বানাইল মহাশ্মশানে ব্যানার টাঙিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।
বুধবার বিকেলে মহাশ্মশানে ব্যানার টাঙিয়ে জনগণের কাছে ক্ষমা চান তিনি। তিন ফুট বাই দুই ফুট মাপের ব্যানারে তিনি লিখেছেন, ‘বানাইল মহাশ্মশানের সভাপতি এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মধ্যে আর কোনো বিরোধ নেই। আমরা একে অপরের সহযোগিতার ভিত্তিতে সহঅবস্থান করবো এবং শান্তিময় পরিবেশের অঙ্গীকারবদ্ধ।’
এর আগে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শতবর্ষী শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টার অভিযোগে শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হককে ভর্ৎসনা করে হাইকোর্ট।
একই সঙ্গে ওই অপকর্মের জন্য স্থানীয় জনগণের কাছে ক্ষমা চাওয়ার নির্দেশ দেন আদালত। এ বিষয়ে আগামী রোববার পরবর্তী শুনানির জন্য দিন ধার্য করা হয়েছে।
অজিজুল হক বুধবার বিকেল ৪টার সময় দিলেও প্রায় সোয়া ঘণ্টা পর শ্মশানস্থলে আসেন। এদিকে আজিজুল হক জনগণের কাছে ক্ষমা চাইবেন এ খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল থেকে সাধারণ মানুষ সনাতন ধর্মের নারী-পুরুষরা এবং গণমাধ্যমের কর্মীরা শ্মশান স্থলে এসে ভিড় জমান।
ক্ষমা চাওয়ার অনুষ্ঠানে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আজিজুল হক বলেন, শ্মশান দখল নিয়ে শুরু থেকেই মিথ্যা সংবাদ প্রকাশ করা হয়। কারণ জায়গাটি আমি কিনেছিলাম। পরে জানতে পারি এটি শ্মশানের। তখন চুপ ছিলাম।
তিনি বলেন, যা হয়েছে ভুল হয়েছে। এই জায়গা আমার নয়। এখন থেকে এখানে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন যা করার করবে। আমি তাদের সহযোগিতা করবো।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন- শতবর্ষী বানাইল বারোয়ারি শিব মন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্রী কৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার, শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ণ কানু, সাধারণ সম্পাদক শিশির সাহা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের সভাপতি প্রহল্লাদ সরকার, সাধারণ সম্পাদক দুলাল অধিকারি, বাবু রতন কুমার রায়, নিশিকান্ত সাহা, শিবগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি সৈয়দ মির্জারুল আলম চৌধুরি শাহাজাদা, বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার আবদুর মান্নান, উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোস্তাফিজার রহমান মোস্তা ও ইউপি চেয়ারম্যান অ্যাসোসিয়নের সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ রিজু প্রমুখ।
শতবর্ষী বানাইল বারোয়ারি শিবমন্দির এবং শ্মশান সংরক্ষণ ও উন্নয়ন কমিটির সভাপতি শ্রীকৃষ্ণ মোহন্ত, সাধারণ সম্পাদক দুলাল চন্দ্র সরকার বলেন, হাইকোর্ট ব্যানারে লিখতে বলেছিল, ‘শ্মশানের জায়গা দখল করে স্থাপনা নির্মাণ চেষ্টা করে আমি ভুল করেছি। এ ধরনের কাজ আর কোনো দিন করব না।’
কিন্তু ব্যানারে তা লেখা ছিল না। এছাড়া ব্যানারটি শ্মশানে টাঙানোর কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ফটোসেশনের পর তিনি ব্যানার নিয়ে চলে যান।
শিবগঞ্জ উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম নারায়ন কানু বলেন, মঙ্গলবার রাতে সিদ্ধান্ত নেন বিকেল ৪টায় শ্মশানে দাঁড়িয়ে তিনি ক্ষমা চাইবেন। বিষয়টি আমাদের জানালে আমরা কমিটির লোকজন নিয়ে যথাসময়ে অপেক্ষা করি। পরে তিনি ৫টার দিকে এসে পুরো ঘটনা ব্যাখ্যা করে শত শত মানুষের সামনে ভুল স্বীকার করেন। এখন থেকে শ্মশানের এই জায়গায় আমরা কোনো কিছু করলে তিনি সহযোগিতা করার আশ্বাস দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, শ্মশান দখল করা নিয়ে ২০১৬ সালের ২৬ জুন জাগো নিউজে বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন যুক্ত করে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশ (এইচআরপিবি) একটি রিট করে।
এ রিট আবেদনে ওই বছরের ৩১ জুলাই হাইকোর্ট রুল জারি করেন এবং স্থাপনা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। পাশাপাশি বিষয়টি তদন্ত করতে জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন।
এ নির্দেশে জেলা প্রশাসক বিষয়টি তদন্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন। এ অবস্থায় ২০১৬ সালে জারি করা রুলের ওপর শুনানি শুরু হয়েছে হাইকোর্টে।
এ রুলের ওপর শুনানির সময় গত ১৩ মে উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতিকে তলব করেন বিচারপতি গোবিন্দ চন্দ্র ঠাকুর ও বিচারপতি একেএম সাহিদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
গত ২০ মে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে গেলে আদালত বলেন, স্থানীয় জনগণের কাছে ওই অপকর্মের জন্য শ্মশানে ব্যানার লাগিয়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে। একই সঙ্গে আগামী রোববার দখল চেষ্টা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে আদালতে লিখিতভাবে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইলে বিষয়টি আদালত ফয়সালা করবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন