আজ কবিগুরুর জন্মজয়ন্তীতে আত্রাইয়ের পতিসরে উৎসবের আমেজ

নাজমুল হক নাহিদ, আত্রাই, নওগাঁ: আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মজয়ন্তী। এ উপলক্ষে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে কবিগুরুর জন্মজয়ন্তী নওগাঁর আত্রাই উপজেলার পতিসরের কুঠিবাড়িতে পালিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি।

সেদিন আমার জন্ম দিন/ প্রভাতে প্রণাম লইয়া/ উদয়দিগন্ত পানে মেলিলাম আঁখি/ দেখিলাম সদ্যস্নাত ঊষা/ আঁকি দিল আলোকচন্দন লেখা/ হিমাদ্রির হিমশুভ্র পেলব ললাটে। নিজের জন্মদিন উপলক্ষে এটা রবীন্দ্রনাথের লেখা কবিতা।

আজ পঁচিশে বৈশাখ। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্মজয়ন্তী। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আধুনিক বাঙালির মননে ও সৃজনে জ্যোতির্ময় এক প্রতীক। বাঙালির প্রাণের মানুষ তিনি। কবিগুরু প্রায় একক প্রচেষ্টায় বাংলা সাহিত্যকে আধুনিকতায় উজ্জ্বল করে তুলে বিশ্বসাহিত্য আসরে সুপ্রতিষ্ঠিত করে বাংলা ও বাঙালিকে অনন্য এক মর্যাদার আসনে বসিয়েছেন। এ প্রবল অনুরাগ ও অকুন্ঠ শ্রদ্ধার আসনে প্রতিটি বাঙালির প্রাণে তার অধিষ্ঠান। সুখে ও সংগ্রামে, বেদনা ও উচ্ছ¡াসে, প্রেম ও প্রকৃতিতে তার ছিল অবাধ বিচরণ। কোথায় নেই তিনি। গানে, কবিতায়, নাটক-উপন্যাস ও গল্পে তিনি বাংলা ও বাঙালিকে ব্যাঙময় করে বর্ণিল রঙে রাঙিয়ে গেছেন।রবীন্দ্র স্মৃতিধন্য আত্রাইয়ের পতিসর এখন নতুন সাজে সজ্জিত১২৬৮ বঙ্গাব্দের এই দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারে রবন্দ্রীনাথের জন্ম। জন্মের এত বছর পরেও তিনি বাঙালির জীবনে প্রবাদের মতো আছেন। তিনি চির নতুনের কবি, বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কবি। জন্মদিন মানে নতুনের আবাহন। এটাই ভাবতেন আমাদের বিশ্বসেরা কবি রবীন্দ্রনাথ। তাই নিজের জন্মদিনে নিজেই আরো লিখে গেছেন- উদয় দিগন্তে ওই শুভ্র শঙ্খ বাজে মোর চিত্ত-মাঝে, চির নূতনেরে দিল ডাক, পঁচিশে বৈশাখ।

বাঙালির প্রাণপুরুষ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি ছিলেন বাবা -মায়ের কনিষ্ঠ পুত্র। রবীন্দ্রনাথের বাবার নাম দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মায়ের নাম সারদা দেবী। দেবেন্দ্রনাথ ছিলেন সমাজ সংস্কারক , রাজা রামমোহন রায় প্রবর্তিত ব্রাষ্মধর্মের প্রধান সংগঠক। তাঁর অনুগামীরা তাঁকে মহর্ষি বলে ডাকতেন।
সেই সনাতন সময়েই জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ি সাহিত্য চর্চার কেন্দ্র ছিল ।চার বছর বয়সের সময় থেকে রবির বিদ্যা শিক্ষা শুরু হয়, শৈশবেই উৎসরিত হয় তার মেধা ও বুদ্ধির শিখা। ছোটবেলা থেকেই তার কবিতা পরতে খুব ভাল লাগতো, ”জল পড়ে পাতা নড়ে”এ কথাটি লিখেই তার কবিতা লেখার উৎসাহ যোগায়। তিনি বাংলা ভাষায় বহু কবিতা, গান, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ ইত্যাদি রচনা করে থাকেন। আট বছর বয়সে তিনি কবিতা লেখা শুরু করেন। ১৮৭৪ সালে তত্ত¡বোধিনী পত্রিকা-এ তাঁর “অভিলাষ” কবিতাটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল তাঁর প্রথম প্রকাশিত রচনা। ১৮৮৩ সালে মৃণালিনী দেবীর সঙ্গে তাঁর বিবাহ হয়। ১৯০১ সালে রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মবিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন, যা কালক্রমে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রূপ নেয়।

১৯১৩ খ্রিষ্টাব্দে তিনি ইংরেজি কাব্যগ্রন্থ (গীতাঞ্জলী) লিখে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান। তিনি শুধু ভারতের কবি নন ,সারা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কবি বলে খ্যাতি লাভ করেন। রবীন্দ্রনাথ মূলত কবি। প্রকাশিত মৌলিক কাব্যগ্রন্থের সংখ্যা ৫২। তবে বাঙালি সমাজে তাঁর জনপ্রিয়তা প্রধানত সংগীতস্রষ্টা হিসেবে। রবীন্দ্রনাথ প্রায় দুই হাজার গান লিখেছিলেন। কবিতা ও গান ছাড়াও তিনি ১৩টি উপন্যাস, ৯৫টি ছোটগল্প, ৩৬টি প্রবন্ধ ও গদ্যগ্রন্থ এবং ৩৮টি নাটক রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের সমগ্র রচনা রবীন্দ্র রচনাবলী নামে ৩২ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাঁর সামগ্রিক চিঠিপত্র উনিশ খন্ডে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর প্রবর্তিত নৃত্যশৈলী “রবীন্দ্রনৃত্য” নামে পরিচিত।
১৯৪১ সালে জোড়াসাঁকোর বাসভবনেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিশ্বকবি।

রবীন্দ্রনাথের ১৫৭তম জন্মজয়ন্তী পালনের জন্য প্রস্তুত কবির আত্রাইয়ের পতিসরের কাচারি বাড়ি। প্রতিবারের মতো এবারও কবিগুরুর নিজস্ব জমিদারি তাঁর স্মৃতি বিজড়িত নওগাঁর পতিসর কাচারি বাড়ি প্রাঙ্গণে আয়োজন করা হয়েছে দিনব্যাপী নানা অনুষ্ঠানের। প্রতি বছরই পতিসরে নামে রবীন্দ্রভক্তদের ঢল। পরিণত হয় মানুষের মহামিলনমেলায়। সরকারিভাবে একদিনের কর্মসূচি নিলেও এই মিলনমেলা চলে প্রায় এক সপ্তাহ জুড়ে । দূর-দূরান্ত থেকে কবিভক্তরা ছুটে আসেন তাদের প্রিয় কবির পতিসর কাচারি বাড়ি প্রাঙ্গণে। একে অপরের সান্নিধ্যে এসে স্মৃতিচারণে মগ্ন হন কবিভক্তরা।

রবি ঠাকুরের জন্মদিন উপলক্ষে সাজানো হয়েছে অপরূপ বর্ণিল সাজে। প্রতিবছরের ন্যায় এবারও এখানে আসবেন সরকারের মন্ত্রী, এমপি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ দেশবরেণ্য শিল্পী, সাহিত্যিক ও রবীন্দ্র ভক্তরা। নাচ, গান আর কবির রচিত কবিতা আবৃত্তি করে উদযাপনের আয়োজন করা হয়েছে বিশ্বকবির জন্মোৎসব। দিনব্যাপী সরকারি অনুষ্ঠানমালার মধ্যে রয়েছে সকাল ১০টায় রবীন্দ্র কাছারিবাড়ির দেবেন্দ্র মঞ্চে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, সাড়ে ১০টায় ‘একুশ শতকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রাসঙ্গিকতা’ শীর্ষক স্মারক আলোচনা অনুষ্ঠান, বিকাল ৩টা থেকে নাটক, আবৃত্তি, নাচ-গানসহ মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন নওগাঁসহ দেশের প্রথিতযশা শিল্পীরা।
কবির ৭৬ বছর বয়সের একটি উন্মুক্ত ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে পতিসরে। স্থাপন করা হয়েছে রবীন্দ্র সংগ্রহশালা। এই কাচারি বাড়িতে সংরক্ষণ করে রাখা হয়েছে কবির ব্যবহৃত বিভিন্ন আসবাবপত্র।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নওগাঁর আত্রাইয়ের এই পতিসরে এসে তাঁর কাচারি বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া আঁকাবাঁকা নাগর নদকে নিয়ে লিখেছিলেন, ‘আমাদের ছোট নদী চলে বাঁকে বাঁকে, বৈশাখ মাসে তার হাঁটু জল থাকে’।এছাড়াও তাঁর বিখ্যাত কবিতা “তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে”, “দুই বিঘা জমি”, “সন্ধ্যা”সহ অসংখ্য সাহিত্যকর্ম রচনা করেছেন এই পতিসরের কাচারি বাড়িতে বসে।

কবির নিজস্ব জমিদারি নওগাঁর পতিসর যেন পর্যটনের অপার সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। কাচারি বাড়িতেই কবিগুরুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়েছে। পতিসরে নাগর নদের পাড়কে মনমুগ্ধকর করে তোলা হয়েছে।

এ বিষয়ে আত্রাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: মোবারক হোসেন জানান, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫৭তম জন্ম জয়ন্তি উপলক্ষে পতিসরে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। দেবেন্দ্র মঞ্চে সকাল ১০টায় অনুষ্ঠিত হবে শুভ উদ্ধোধন ও আলোচনা সভা ও বিকেল সাড়ে ৩টায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষ্যে সেখানে বসবে গ্রামীন মেলা।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

[blogger][facebook]

যোগাযোগ ফর্ম

নাম

ইমেল *

বার্তা *

আজকের দেশ সংবাদ . Blogger দ্বারা পরিচালিত.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget