দিন কয়েক আগে কথাটি বলেছিলেন হার্নান ক্রেসপো—লিওনেল মেসির বন্ধু তালিকায় নেই বলে মাউরো ইকার্দি সুযোগ পান না আর্জেন্টিনা দলে। কিন্তু যখন সুযোগ পেয়েছেন, তখন সেটি আবার কাজেও লাগাতে পারেননি এই ফরোয়ার্ড। জাতীয় দলের চার ম্যাচে তাঁর কোনো গোল নেই। এই চার ম্যাচের শেষ তিনটি আবার হোর্হে সাম্পাওলির অধীনে।
সাবেক ফরোয়ার্ড ক্রেসপোর অনুমান কিংবা সাম্পাওলির অধীনের ব্যর্থতা—কারণ যা-ই হোক, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের চূড়ান্ত ২৩-এ জায়গা করে নিতে পারেননি ইকার্দি। ইতালিয়ান সিরি ‘এ’-র সদ্য সমাপ্ত মৌসুমের সর্বোচ্চ গোলদাতাকে ছাড়াই বিশ্বকাপে যাচ্ছে আর্জেন্টিনা। যেখানে তাদের পুরোপুরি নাম্বার নাইন শুধু দুজন। ফিটনেস শঙ্কায় থাকা সের্হিয়ো আগুয়েরো এবং ফর্ম নিয়ে সংশয়ে থাকা গনসালো হিগুয়াইন। ইকার্দিকে বাদ দিয়ে যে বড় জুয়া খেলেছেন কোচ সাম্পাওলি, তা আর বলতে!
নিজেও সেটি স্বীকার করেছেন আর্জেন্টিনার কোচ, যদিও ইন্টার মিলানের ফরোয়ার্ডকে নিয়ে আলাদা কিছু বলেননি, ‘দলের খেলার সংস্কৃতি নিয়ে আমরা জুয়া ধরেছি। যেন বিশ্বকাপ চ্যালেঞ্জে ভয় ছাড়া খেলতে পারি। যেকোনো রক্ষণ দেয়াল ধ্বংস করতে চাই আমরা। সে জন্য যেসব ফুটবলারকে স্কোয়াডে ডেকেছি, তাদের সামর্থ্যের সুবিধা নিতে হবে।’ দলের ডরভয়হীন খেলার তাগিদও তাঁর কণ্ঠে, ‘বিশ্বকাপ হচ্ছে এমন চ্যালেঞ্জ, যেখানে সব কিছু ঠিকঠাক করতে না পারলে সমস্যায় পড়তে হবে। ভয়হীন থেকে তাই ওই চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে।’ আর ৩৫ জন থেকে ২৩ জনে নামিয়ে আনার প্রক্রিয়া সম্পর্কেও বলেছেন সাম্পাওলি, ‘৩৫ জনের তালিকা থেকে আমরা অনেক বিশ্লেষণ করেছি। দল নিয়ে, প্রক্রিয়া নিয়ে, ভারসাম্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মাঠের প্রতিটি অঞ্চল নিয়ে পর্যালোচনার পর ফুটবলারদের মূল্যায়ন শেষে বেছে নিয়েছি এই ২৩ জনকে।’
এই ২৩ জনের মধ্যে পুরো আর্জেন্টিনার ভরসার কেন্দ্রে লিওনেল মেসি। কোচ সাম্পাওলি বেশি উত্ফুল্ল দলের সেরা তারকার শারীরিক অবস্থার কারণে, ‘বিশ্বকাপ নিয়ে মেসি খুব রোমাঞ্চিত এবং আশাবাদী। শারীরিকভাবে ও খুব ভালো অবস্থায় রয়েছে, বার্সেলোনার হয়ে আগেভাগে লিগ জয় নিশ্চিত হওয়াটা এর বড় কারণ। এর পরও প্রস্তুতি ম্যাচগুলোয় মেসির খেলা নিয়ে আমরা তেমন একটা ভাবছি না। তবে ও খুব ভালো অবস্থায় পৌঁছবে বিশ্বকাপে।’ তবে মেসির সঙ্গে অন্য ১০ জন কারা হবেন, তা নিয়ে এখনো অনিশ্চয়তা রয়েছে, ‘আমাদের একটি ধারণা রয়েছে, তবে প্রথম ম্যাচের একাদশ ঠিক করা থেকে এখনো অনেক দূরে। প্রতিদিনের অনুশীলনে অনেক কিছুই পাল্টাতে থাকবে নিশ্চিতভাবে।’
সর্বশেষ দুটি প্রীতি ম্যাচের মধ্যে ইতালিকে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা; কিন্তু স্পেনের কাছে আবার হেরে গেছে ১-৬ গোলে। তবে এ দুটো ম্যাচ থেকে বিশ্বকাপ স্কোয়াড তৈরির ধারণা পেয়েছেন বলে দাবি সাম্পাওলির, ‘স্পেনের বিপক্ষে ম্যাচের পর স্পষ্টভাবে বুঝতে পেরেছি, আমাদের কী প্রয়োজন। এর প্রতিফলন বিশ্বকাপের চূড়ান্ত স্কেয়াডে রয়েছে। স্পেন ও ইতালির বিপক্ষে ম্যাচের পর আমাদের ধারণা পরিষ্কার হয়েছে। অভিজ্ঞ ফুটবলাররা নিরুদ্বেগ আবহ তৈরি করবে তরুণদের জন্য, যে তরুণরা অত্যন্ত প্রতিভাবান।’ আর ইনজুরিতে থাকা সের্হিয়ো আগুয়েরো, গাব্রিয়েল মেরকাদো ও লুকাস বিলিয়াকে নিয়েও খুব উদ্বেগ নেই তাঁর, ‘যে ফুটবলারদের আমি নিয়েছি, তাদের দায়িত্বও আমি নিচ্ছি। নিজেদের সেরাতে যারা নেই, তাদের দলে নেওয়া কখনো আদর্শ নয়। তবে আগুয়েরো এখন ট্রেনিং করছে স্বাচ্ছন্দ্যে। মেরকাদো অনুশীলন করবে বুধবার থেকে। আর বিলিয়ার অবস্থা আমরা দেখব। তবে আমি যতটুকু বুঝি, ও খুব একটা আনফিট না।’
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন