কৃষকের মুখের হাসি ম্লান
এম এম হারুন আল রশীদ হীরা, মান্দা (নওগাঁ): নওগাঁর মান্দায় এবারো কৃষকরা পড়েছেন চরম দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কবলে। চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধানের ভাল ফলন হলেও দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারনে এবং হাট-বাজারে ধাএনর দাম কম থাকায় ন্যায্য দামে বিক্রি করতে না পেরে লোকসানের মূখে পড়েছেন এখানকার বর্গাচাষী ও সাধারণ কৃষকরা। ফলে লোকসানের বোঝা কাঁধে পড়ায় মুখে সুখের হাসি ¤øান হয়ে চরম হতাশায় পড়েছেন তারা।
জানা গেছে,গত আমন মৌসুমে মান্দা উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের মধ্যে ১১টি ইউনিয়নেই ভয়াবহ বন্যায় প্রায় সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর জমির আমন ধান পানিতে নিমজ্জিত হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। এতে ব্যাপক ক্ষতির মূখে পড়েন কৃষকরা। ওই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এলাকার কৃষকরা কোমড় বেঁধে মাঠে নামেন ইরি-বোরো ধান চাষে। কেউ গোয়ালের গরু,কেউ হাঁস-মূরগী আবার কেউ বা বিভিন্ন এনজিও সংস্থা থেকে, আবার কেউবা বিভিন্ন সমিতি থেকে সুদের উপর টাকা নিয়ে ধান রোপন করেছিলেন। প্রথম দিকে আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় এবং তেমন রোগ বালায় না থাকায় জমিতে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছিল। তবে ধান পাকার সময় শেষের দিকে বøাষ্ট এবং নেক বøাষ্ট রোগের প্রকোপের কারনে কিছু কিছু এলাকায় ধানের ফলন কমে গিয়ে ক্ষতির মধ্যে পড়েন কৃষকরা। ঠিক যে সময় কৃষকরা আনন্দ করে ধান কেটে ঘড়ে তুলবে সে স্বপ্ন দেখছে, দূর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়া যেন কেমন করে সেই সময়েই হানা দেয়। এতে মাঝে-মধ্যেই ভারী বৃষ্টি, দমকা হাওয়ার সাথে পরতে থাকে ছোট ছোট শিলাও। এতে কৃষকরা চরম আতংক আর হতাশার মধ্য দিয়ে আধাপাকা ও পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এসময় ঝড়ো হাওয়া আর বৃষ্টির কারনে অধিকাংশ জমির ধান মাটিতে নেতিয়ে পড়ে। এছাড়া বৃষ্টির পানির ঢলে কোন কোন এলাকার অর্ধশতাধিক হেক্টর জমির পাকা ধান পানির নিচে নিমজ্জিত হয়ে যায়। এতে কৃষকরা চরম বেকায়দায় পড়ে যায়। তবে ধান ঘরে নয়,উঠান পর্যন্ত তুলতে পারলেও স্যাঁত সেঁতে অবস্থা থাকার কারনে বাজারে এর দাম কমে যাচ্ছে। কৃষকরা ন্যায্য মূল্যে বিক্রি করতে পারছেননা। অনেক কৃষকরা জানান, তাদের মারাই করা ধানে গাছ উঠে গেছে। চলতি মৌসুমে সরকারীভাবে ধান ক্রয়ের মূল্য প্রতিমন এক হাজার ৪০ টাকা নির্ধারণ থাকলেও গত ক’দিন ধরে ধানের মোকাম হিসেবে খ্যাত চৌবাড়িয়া হাট, সতিহাট, দেলুয়াবাড়িহাট, প্রসাদপুর হাট, পাঁজর ভাঙ্গাহাট, গোটগাড়ীহাট, জোতবজারে ৭ শত ৫০ টাকা থেকে শুরু করে ধানের জাত ও রকম অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৯ শত টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে। এদের মধ্যে ইরাটন ৭শত ৫০ টাকা, হাইব্রীড-১২০৩ সাড়ে ৮শত, ব্রি-ধান-২৮, ৮শত৭০ টাকা, এবং জিরাশাইল ৯শত টাকা। অনেক স্থানে ধানে শিকড় গজিয়ে উঠায় এবং অতিরিক্ত ভিজে থাকায় অনেক ধান অবিক্রিত অবস্থায় পরে আছে কৃষকের উঠানে।
কৃষকরা জানান,চলতি মৌসুমে এক বিঘা (৩৩ শতক) জমিতে ধান উৎপাদন করতে অঞ্চল ভেদে জমির জমি চাষ, বীজ, ধান রোপন, সার, পরিচর্যা ও কাটাই-মাইয়ের পরে ঘরে তোলা পর্যন্ত কৃষক ও মালিকদের খরচ হয়েছে ৮ হাজার থেকে প্রায় ৯ হাজার টাকার মতো। তবে বর্গাচষীদের ক্ষেত্রে জমির বর্গাংশসহ খরচ পরেছে প্রায় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা। এক বিঘা জমিতে বর্তমানে ধানের ফলন হচ্ছে ২২ থেকে ২৬ মন পর্যন্ত, গড়ে প্রায় ২৫মণ। এতে ধান বিক্রি করে জমির মালিকরা কিছু লাভবান হলেও লোকসানের মূখে পড়েছেন বর্গাচাষীরা। ফলে বর্গাচাষী ও কৃষকরা ঋণের বোঝা নিয়ে এবং গত আমন মৌসুমে অকাল বন্যায় ক্ষতি এবং উঠতি বোরো ধানের বিক্রিতে ক্ষতিতে পড়ায়, ভবিষ্যতে এর দায় কিভাবে কাটিয়ে উঠবেন তা নিয়ে চরম হতাশা ও দিশেহারা হয়ে পরেছেন।
উপজেলার পারএনায়েতপুর গ্রামের হবিবর রহমান দেড় বিঘা, সাদেক আলী মৃধা এক বিঘা জমি চাষ করে ৩-৪হাজার টাকা লোকসান দিয়েছেন। দ্বারিয়াপুর মোল্বলাপাড়া গ্রামের বর্গাচাষী কৃষক হারুন অর রশিদ জানান, তিনি কৃষি ব্যাংক থেকে ঋণ তুলে সাড়ে ৬ বিঘা জমি, নুরুল্যাবাদ গ্রামের আবদুল জব্বার ৪বিঘা বোরো আবাদ করেছেন। কিন্তু দূর্যোগ পূর্ণ আবহাওয়ার কারনে ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি করতে না পারায় প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় আড়াই থেকে চার হাজার টাকা লোকসান গুণছেন। প্রসাদপুর গ্রামের কৃষক জানবক্স পাইকসহ অনেক এলাকার অন্যান্য বর্গাচাষী কৃষকরা জানান,ধানের ফলন ভাল হলেও আবহাওয়ার কারনে ন্যায্য দাম না পাওয়ায় তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। আগামিতে কিভাবে এ লোকসান কাটিয়ে উঠবেন তা নিয়ে চরম হতাশায় ভূগছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম প্রামানিক জানান, চলতি মৌসুমে ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। এ উপজেলায় ২১ হাজার ৬শত ৫০ হেক্টর জমিতে ব্রি-ধান (বোরো ধান) ধান রোপণ করা হয়েছিল। এতে ধানের উৎপাদন লক্ষ মাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে প্রায় এক লক্ষ সতের হাজার একশত পাঁচ মেট্রিকটন। তবে কৃষকরা ভাল দাম পেলে অনেক লাভবান হবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন