সুকুমল কুমার প্রামানিক, রাণীনগর (নওগাঁ): নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে। তবে পুরোদমে ধান কাটা মাড়াই শুরু হতে আর মাত্র কয়েক দিন সময় লাগবে। কাটার শুরুতেই আবহাওয়া ধানের অনুকূলে থাকলেও বর্তমানে তা ধান কাটার প্রতিকূলে চলে যাওয়ায় কৃষক তাদের ধান নিয়ে চরম বিপাকে পড়েছেন।
এর মধ্যে কয়েক দিনের টানা বর্ষন ও কালবৈশাখী ঝড়ের কবলে পড়ে গেছে ইরি-বোরো ধান। পানিতে ভেসে গেছে কৃষকের সোনালী পাকা ধানের স্বপ্ন। দফায় দফায় ঝড়, বৃষ্টি আর শিলা বৃষ্টির কারণে পড়ে গেছে মাঠের আধা-পাকা ধান। এই পড়ে যাওয়া ধান কাটার জন্য পাওয়া যাচ্ছে না শ্রমিক। শ্রমিক পাওয়া গেলেও কৃষকে গুনতে হচ্ছে দ্বিগুন মূল্য। ঝড়ে ধান পড়ে যাওয়ার কারণে বিঘা প্রতি ৪-৫মন হারে ধানের ফলন কম হবে বলে আশংকা করছেন এলাকার কৃষকরা।
জানা গেছে, পূর্বের বছর গুলোতে এই সময় দেশের দক্ষিণ ও উত্তরাঞ্চল বিশেষ করে ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া, চুয়াডাঙ্গা, পোড়াদহ, চিলাহাটি, ডোমারসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ধান কাটা শ্রমিকরা এই এলাকাগুলোতে আসে। কিন্তু দেশের সেই সব এলাকাগুলোতেও ধান চাষ শুরু হওয়ায় শ্রমিকরা এখন আর তেমন আমাদের এই এলাগুলোতে আসে না। তাই প্রতি বছর ধান চাষীতে চরম শ্রমিক সংকটে পড়তে হয়।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে ৮টি ইউনিয়নে ১৮হাজার ৪শ’ ২৫হেক্টর জমিতে ইরি-বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় কৃষি অফিসের পরামর্শে সঠিক সময়ে চারা লাগানো, নিবিড় পরিচর্যা, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ, যথা সময়ে সেচ দেওয়া, সার সংকট না থাকায় উপজেলার কৃষকরা জিরাশাইল, খাটো-১০, স্বর্ণা-৫ জাতের ধান চাষ করেছেন। নতুন ধান কাটার শুরুতেই বিঘা প্রতি ২০-২২ মন হারে ধান উৎপাদন হচ্ছে।
উপজেলার ভবানীপুর গ্রামের কৃষক মো: আব্দুল জলিল জানান, আমি এবছর ৬ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। কৃষি বিভাগের পরামর্শ যথা সময়ে ভাল পরিচর্যা করায় আমার জমিতে ধান ভাল হয়েছে। ইতিমধ্যেই ধান কাটা শুরু করেছি ফলন ভালই হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা একটাই ধান কাটার শ্রমিক সংকট। দিন যাচ্ছে আর এই সমস্যা প্রকট আকার ধারন করছে। ধান কাটার সময় এলেই আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়।
দড়িয়াপুর গ্রামের কৃষক মো: হাছিন আলী বলেন আমি চলতি মৌসুমে ১০ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছি। ধান কাটার শুরুতেই আবহাওয়া ধানের অনুকূলে থাকলেও কয়েকদিনের কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি ও শিলা বৃষ্টিতে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আমার অর্ধেক জমির আধাপাকা ধান পড়ে গেছে। এতে করে বিঘা প্রতি ধানের ফলন ানেক কম হবে। অপরদিকে শ্রমিক সংকটের কারণে সঠিক সময়ে ধান কাটতে পারছি না।
উপজেলার আবাদপুকুর হাটের ধান ব্যবসায়ী মো: বছির আলী মিঠু জানান, রবিবার হাটে তেমন ধান আমদানি শুরু হয়নি। বৈরী আবহাওয়ার কারণে কৃষকরা ধান কাটতে পারছেন না। যার কারণে হাটে ধানের আমদানী নেই বললেই চলে। তবে টুকটাক বেচা-কেনা হয়েছে, জিরা জাতের ধান প্রতিমন মনে ৮শ’ ৫০থেকে ৭০টাকা পর্যন্ত বিক্রয় হয়েছে। আশা করছি দুই চার দিনের মধ্যে পুরোদমে ধান আমদানি শুরু হবে।
রাণীনগর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এসএম গোলাম সারওয়ার জানান, ইরি-বোরো ধান লাগানোর শুরু থেকে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু গত কয়েকদিনের কালবৈশাখী ঝড়, বৃষ্টি আর শিলা বৃষ্টিতে ধানের কিছুটা ক্ষতি হবে। জমিতে পড়ে যাওয়া ধানের ফলনে কিছুটা বিপর্যয় হতে পারে। পরবর্তি সময়ে আবহাওয়া ভালো থাকলে ও বাজারে ধানের ভাল দাম বর্তমান থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন